রাম মন্দির নিয়ে নতুন রিট সুপ্রিম কোর্টে

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: রয়টার্স
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: রয়টার্স

অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির প্রসঙ্গটি নতুন করে টেনে আনল বিজেপি। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এক রিট আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, অধিগৃহীত জমির যে অংশ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, তা রাম জন্মভূমি ন্যাস বা ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হোক। এই সংগঠনের হাতেই রয়েছে মন্দির নির্মাণের দায়িত্ব।

অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু পাঁচ বিচারপতির অন্যতম বিচারপতি এস এ বোবদে শারীরিক কারণে উপস্থিত না হওয়ায় শুনানি হয়নি। পরবর্তী শুনানির দিনও ধার্য হয়নি। ভোটের আগে বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে কি না সন্দেহ। এই অবস্থায় অবিতর্কিত জমির কিছুটা অন্তত যাতে ভোটের আগে হিন্দু সংগঠনের হাতে দেওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যেই এই আবেদন। কিন্তু ভোটের আগে সেটাও সম্ভব কি না, সে বিষয়ে বিজেপিতে সংশয় দেখা দিচ্ছে।

বিজেপি নেতাদের দাবি মেনে সুপ্রিম কোর্ট গত বছর এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে অস্বীকার করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি এমন মন্তব্যও করেছিলেন, তাঁদের হাতে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে। গত বছরের শেষে পাঁচ বিচারপতির নতুন বেঞ্চ গঠন করা হয়। কিন্তু বিচারপতি ইউ ইউ ললিত নিজেকে এই মামলা থেকে সরিয়ে নেন। পরে বিচারপতি আবদুল নাজির ও বিচারপতি অশোক ভূষণকে বেঞ্চে আনা হয়। এই দুই বিচারপতি আগের বেঞ্চেও ছিলেন।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পরের বছর ১৯৯৩ সালে সরকার অযোধ্যায় মোট ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ওই জমির মধ্যেই রয়েছে বহু বিতর্কিত ২ দশমিক ৭৭ একর। বিতর্কিত ওই জমির চারদিকে ঘিরে রয়েছে অধিগৃহীত ৬৭ একর। বিজেপি চাইছে, ভোটের আগে মূল মামলার নিষ্পত্তি না হলেও অবিতর্কিত জমি মন্দির নির্মাণকারী ট্রাস্ট বা রাম জন্মভূমি ন্যাসের হাতে তুলে দেওয়া গেলে ভোটে হিন্দু মেরুকরণ ঘটানো যাবে। কিন্তু এখন তাও সম্ভব হবে কি না বলা কঠিন।

কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ গত সোমবার এ বিষয়ে বলেন, ৭০ বছর ধরে মামলাটি বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্টের উচিত অযথা দেরি না করে বরাবরের মতো এই প্রশ্নের সমাধান করে দেওয়া। সর্বোচ্চ আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টিই ওই বিবৃতির উদ্দেশ্য বলে মনে করা হচ্ছে। চাপ সৃষ্টির জন্যই মঙ্গলবারের রিট আবেদন। কিন্তু মূল প্রশ্নের মীমাংসা না করে সুপ্রিম কোর্ট এমন অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেবেন কি না সেই প্রশ্নও উঠছে।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন মন্দির নির্মাণের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। চাপ দিচ্ছে বিজেপির শরিক শিব সেনাও। সুপ্রিম কোর্ট দেরি করলে সরকারকে অধ্যাদেশ আনার জন্য চাপ দিচ্ছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী এই সব সংগঠন। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সরকার অপেক্ষা করবে। কিন্তু সেই প্রতীক্ষার আগে ভোটের তফসিল জারি হয়ে গেলে সরকার ও শাসক দলের পক্ষে কিছু করা অসম্ভব।

বিজেপির প্রবল প্রতিপক্ষ কংগ্রেস প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে এনে উত্তর প্রদেশের ভোটকে চনমনে করে তুলেছে। জোট বেঁধেছে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টিও। এর মোকাবিলায় বিজেপির একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে রাম মন্দির নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশ। সেটা পেতেই বিজেপি মরিয়া।