কর্মসংস্থানের তথ্য প্রকাশে বাধা, প্রতিবাদে পদত্যাগ

দেশের কর্মসংস্থানের তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পদত্যাগ করলেন ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের (এনএসসি) দুই প্রধান সদস্য। এই ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে। তথ্য গোপনের দায়ে সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে প্রবল সমালোচনা।

নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশের জাতীয় আয়ের তথ্যে কারচুপি করার অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের অভিযোগে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্ট, সিবিআই, ভিজিল্যান্স কমিশন, রিজার্ভ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানকে সরকারের ‘তাঁবেদার’ করে রেখে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অভিযোগ তোলা হচ্ছিল নিত্য। এনএসসির দুই প্রধান সদস্যের ইস্তফার পর সেই অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠল।

পদত্যাগ করেছেন জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন বা ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশনের (এনএসসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান পি সি মোহানন এবং অন্যতম সদস্য জে ভি মীনাক্ষি। তাঁদের অভিযোগ, দেশের কর্মসংস্থানের প্রকৃত ছবি কী রকম, সে বিষয়ে এনএসসি তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে প্রকাশের জন্য সরকারের হাতে তুলে দেয় গত ডিসেম্বরে। কিন্তু সরকার সেই প্রতিবেদন আজও প্রকাশ না করে চেপে রেখেছে। সংবাদমাধ্যমকে সংস্থার প্রধান মোহানন বলেছেন, কিছুকাল ধরেই সরকার প্রতিবেদন চেপে রাখছে। সংস্থাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। কোনো গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। তাই ইস্তফার সিদ্ধান্ত। মোহানন ও মীনাক্ষির কাজের মেয়াদ ছিল ২০২০ সাল পর্যন্ত। এই দুজনের পদত্যাগের পর স্বশাসিত এই সংস্থার সদস্য থাকলেন মাত্র দুজন—অমিতাভ কান্ত ও প্রবীণ শ্রীবাস্তব।

ক্ষমতায় যাওয়ার পর মোদি সরকার প্রথমে ১ হাজার ও ৫০০ রুপির নোট বাতিল করে এবং এক বছরের মধ্যে চালু করা হয় অভিন্ন পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি)। এই জোড়া ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি গতি হারায় এবং কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে কমে যায়। লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, প্রবলভাবে ধাক্কা খায় তা-ও। ভারতের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিসের (এনএসএসও) ২০১৭-১৮ সালের কর্মসংস্থান তথ্য ও পরিসংখ্যান পরীক্ষার পর গত ডিসেম্বরে তা প্রকাশের জন্য সরকারকে দেওয়া হয়েছিল। মোহননের অভিযোগ, বারবার বলা সত্ত্বেও কেন্দ্র সেই তথ্য প্রকাশ করছে না। প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশের কর্মসংস্থানের ছবিটি কী রকম, তা জানা যেত। সরকারি দাবি ও বিরোধী অভিযোগের তারতম্যও জানাজানি হতো।

স্বশাসিত এনএসসির মোট সদস্য ৭। তিনটি পদ খালি ছিল। দুজনের ইস্তফার পর এখন এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। কংগ্রেস নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম টুইট করেছেন, ‘এনএসসির আত্মার শান্তি কামনা করি। আমরা গভীর শোকাহত। সরকারি অবহেলায় দেশের আরও একটি স্বশাসিত সংস্থার অপমৃত্যু ঘটল।’

এক বছর আগে দেশের প্রবৃদ্ধির সংশোধিত পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে দেখানো হয়েছিল, কংগ্রেস আমলের তুলনায় বিজেপি জমানার চার বছরের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। এনএসসি সেই সময় ওই সংশোধিত প্রতিবেদন পেশের বিরোধিতা করেছিল। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বশাসিত এনএসসির ওপরই রয়েছে যাবতীয় পরিসংখ্যান প্রকাশের অধিকার। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদি সরকার সেই অধিকারও হরণ করে নিল।