মোদি-মমতাকে হটানোর ডাক বামদের

লালে ভরে গেছে ব্রিগেড। কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে বামফ্রন্ট আয়োজিত আজকের সমাবেশ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
লালে ভরে গেছে ব্রিগেড। কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে বামফ্রন্ট আয়োজিত আজকের সমাবেশ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

লালে লাল হয়ে উঠল ব্রিগেড। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বামপন্থীরা ক্ষমতায় থেকেছে যে পশ্চিমবঙ্গে, সেখানেই তারা এখন কোণঠাসা। কিন্তু আজ রোববারের ব্রিগেড নিশ্চয়ই তাদের আশাবাদী করবে। কলকাতার এই চিরপরিচিত মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিল আজ । 

গত ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তৃণমূলের ব্রিগেডে সমাবেশ করেছিল। আজ পাল্টা সমাবেশ করে এর জবাব দিয়েছে বামফ্রন্ট। বলা যায় সমুচিত জবাবই হয়েছে। তা জনসমাগমের বিচারে অবশ্যই। আজকের ব্রিগেড সমাবেশে কলকাতাবাসীকে চমকে দিয়েছে। যে হারে এই সমাবেশে মানুষ যোগ দিয়েছে তাতে বাম নেতারা আপ্লুত হয়েছে। আর অন্যান্যরা অবাক হয়েছে।

আজকের সমাবেশ থেকে বাম নেতারা ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারকে হটানোর ডাক দিয়েছে। দাবি তুলেছে, বিজেপির হাত থেকে দেশ এবং তৃণমূলের হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচানোর। এই লক্ষ্যে তারা রাজ্যব্যাপী মোদি-মমতা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন। স্লোগান ওঠে ব্রিগেড জুড়ে ’বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও, তৃণমূল হটাও রাজ্য বাঁচাও।

‘দড়ি ধরে মারো টান, মোদি সরকার হবে খান খান’—মোদি সরকার হটানোর জন্য এমন ব্যানার শোভা পাচ্ছিল সমাবেশে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
‘দড়ি ধরে মারো টান, মোদি সরকার হবে খান খান’—মোদি সরকার হটানোর জন্য এমন ব্যানার শোভা পাচ্ছিল সমাবেশে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

বামফ্রন্ট আয়োজিত এই মহা সমাবেশে সিপিএমের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, গোটা দেশে এখন লুটতরাজ চলছে । সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটানো হচ্ছে। বিদ্বেষের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। মোদির নীতি দেশকে বরবাদ করে দিচ্ছে। আর মমতা বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক বিভাজনে মদদ দিচ্ছে। তাই তিনি জোর দিয়ে ইয়েচুরি বলেন, দেশ ও রাজ্য রক্ষায় আজ দেশবাসী বিজেপি ও তৃণমূলের র বিদায় । চুরি করা চৌকিদারকে আর চায় না দেশবাসী। বিদায় চায় চৌকিদারের। বলেন, চৌকিদারের ছুটির সময় হয়ে গেছে।

সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি বলেছেন, পাঁচ বছরেই দেশের ভিন্ন নস্ট করে দিয়েছে মোদি। অর্থনৈতিক ভিত ভেঙ্গে দিয়েছে। গোরক্ষার নামে মানুষ হত্যা করছে। তাই দেশ বাঁচাতে আজ জরুরী বিকল্প একটি সরকারের।

আরএসপির সাধারণ সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেছেন, বামেদের আজকের ব্রিগেড লালে লাল। ভারতের মোদি সরকার আর বাংলার মমতার সরকার ধোকাবাজির সরকার। নোটবাতিল আর জিএসটি চালু করে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ধ্বংসের পথে পশ্চিমবঙ্গ। একে রক্ষা করতে হবে। তৃণমূল হঠাতে হবে। দেশকে বাঁচাতে মোদিকে হঠাতে হবে। বলেন, আমরা দুহাতে কাজ চাই, পেটে ভাত চাই। বলেন, মমতা থাকলে এই রাজ্যে এক পয়সারও বিনিয়োগ হবে না। আমরা আর এখন চৌকিদার বা পাহারাদারকে চাই না। পশ্চিমবঙ্গে এবার লালঝান্ডার নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এখানে লাল ঝড় ফের উঠবে।

লাল কাস্তে-হাতুড়ি নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন বাম-কর্মীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
লাল কাস্তে-হাতুড়ি নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন বাম-কর্মীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

ফরোয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস বলেছেন, চাই আমরা মানুষের অধিকার। আর সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চাই লড়াই। বাংলায় ধর্মের নামে জাতপাতের নামে নির্বাচন চাই না। ধর্ম নিয়ে তাঁরা রাজনীতি করেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। লুটেরাদের হাত থেকে দেশ ও রাজ্যকে রক্ষা করতে হবে। উৎপাটন করতে হবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকড়কে। 

সিপিআইয়ের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশে আজ গণতন্ত্র আক্রান্ত। সংবিধান বিপন্ন। এনআরসি’র নামে ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ গেছে। বিজেপি এখন এনআরসির নামে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করেছে। এর বিরুদ্ধে বামপন্থীদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

আদিবাসী বাম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম বলেছেন, উন্নয়নের নামে মমতা আদিবাসীদের প্রতারণা করছেন। অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে নামতে হবে।
সিপিএম সাংসদ ও বামপন্থী নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, লালঝান্ডায় ভরে গেছে আজকের ব্রিগেড। তৈরি হয়েছে ব্রিগেডে লাল সমুদ্র। এই লাল সমুদ্রকে বাধা দিলে সুনামি হবে। সেই সুনামি কেউ রোধ করতে পারবে না। তাই বাংলা বাঁচাতে হলে তৃণমূল হটাতে হবে। দেশ বাঁচাতে হলে মোদিকে হটাতে হবে। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, দাদার সঙ্গে সেটিং করে দিদি টিকে আছেন। একই বৃন্তে দুটি ফুল বিজেপি আর তৃণমূল। বলেন, আজ দেশের কৃষকেরা ভিক্ষা চায় না চায় ফসলের ন্যায্য মূল্য।

ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, মোদি চান কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়তে আর দিদি চান কংগ্রেসমুক্ত বাংলা গড়তে। কিন্তু দেশবাসী চায় দাদা দিদিকে সরিয়ে বিকল্প সরকার। সেলিম দাবি করেন, চিটফান্ড লুটেরাদের ধরে বিচার করে প্রকাশ্যে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। কারণ, ওই সব লুটেরারা লুট করেছে গরিবের টাকা।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, মোদি ও দিদির সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। উন্নয়নের নামে লুট হচ্ছে অর্থ। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বুকের পাটা শক্ত করে মোদি-দিদির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। স্লোগান হবে বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও , তৃণমূল হটাও রাজ্য বাঁচাও। বলেন, বিজেপি আগেও ঘর করেছে তৃণমূলের সঙ্গে।
বামফ্রন্টের এই সমাবেশে বক্তব্য দেন ৯ নেতা। অথচ ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিল ২৩ দলের নেতারা।
আজকের এই বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে অসুস্থ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গাড়িতে করে ব্রিগেড ময়দানে আসেন। কিন্তু তিনি উঠতে পারেননি মঞ্চে। মঞ্চের নিচে গাড়ি পার্কিং করে নেতাদের ভাষণ শুনে ফিরে আসেন তাঁর বাসভবনে।