চীনের ওপর নতুন শুল্কে ক্ষতি হবে পূর্ব এশিয়ার: আঙ্কটাড

যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে, তবে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে এশীয় দেশগুলো। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রপ্তানি কমবে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলার।

গতকাল সোমবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, আগামী ১ মার্চের মধ্যে যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আলোচনার মাধ্যমে কোনো সুষ্ঠু সমাধানে যেতে না পারে, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কখনো ভালো হবে না।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুই দেশের এই সংরক্ষণনীতির প্রভাবে মার্কিন ও চীনা কোম্পানিগুলো খুব বেশি উপকৃত হবে না। চীনের ২৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ৮২ শতাংশই অন্য দেশের কোম্পানি আমদানি করে, ১২ শতাংশ চীনা কোম্পানি আমদানি করে এবং ৬ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো আমদানি করে। একইভাবে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ হয়েছে। যার ৮৫ শতাংশই অন্য দেশ আমদানি করে, ১০ শতাংশ করে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো এবং মাত্র ৫ শতাংশ চীনা কোম্পানি আমদানি করে। আর এই শুল্ক যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে এশিয়ান দেশগুলোর ওপর।

বাণিজ্যযুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব দ্রুত একটা বাণিজ্য চুক্তিতে যাওয়ার চেষ্টা করছে চীন। গত ডিসেম্বরে নিজেদের মধ্যে কিছুদিনের জন্য শুল্ক-বাণ ছোড়াছুড়ি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন শেষে রাজধানী বুয়েনস এইরেসে এক বৈঠকে বসে ১ জানুয়ারি থেকে তিন মাস নতুন করে কোনো বাণিজ্য শুল্ক আরোপ না করার প্রস্তাবে সম্মত হন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। গত বছর বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের প্রথম বৈঠক। তবে এ সময়ে দুটি দেশকে একটি ফলপ্রসূ আলোচনায় যেতে হবে। আর তা না হলে আবারও শুল্ক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে দুই দেশের মধ্যে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ শুল্ক খড়্গের কারণে পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে উৎপাদনকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অঞ্চলে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সারা বিশ্বেই এর প্রভাব পড়বে।

প্রতিবেদনে বিষয়ে আঙ্কটাডের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধান প্যামেলা কোক হ্যামিলটন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ক্ষুদ্র ও দরিদ্র দেশগুলোকে বহিরাগত ধাক্কার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সংগ্রাম করতে হবে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাযুদ্ধ তৈরি হবে, অবমূল্যায়ন হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে বলে কর্মসংস্থান হারাবে অধিক মানুষ। বেকারত্বের হার বাড়বে। পুরো বিশ্বেই একটি সংক্রামক প্রভাব পড়বে।

আঙ্কটাডের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন করে শুল্কারোপ হলে ইউরোপীয় রপ্তানি বাড়বে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার। জাপান, কানাডা ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর রপ্তানি বাড়বে ২০ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভারত, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোও সুবিধা পাবে।