বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘর সম্প্রসারণ করবে বিশ্বভারতী

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘর সম্প্রসারণ ও উন্নত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এই জাদুঘরের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে একটি চিঠিও লিখেছেন বাংলাদেশ সরকারকে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘরটি এখন দর্শক, পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ জাদুঘরটিকে আরও একটু সম্প্রসারণ করার দাবিও তোলা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই লেখা হয়েছে এই চিঠি।

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় আজ বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেছেন, গত বছরের ২৬ জুলাই উভয় দেশের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জাদুঘরটির সম্প্রসারণ, তথ্যবহুল ও ইতিহাসসমৃদ্ধ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। এবার সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেওয়া হলো। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান, বঙ্গবন্ধু-ইন্দিরা গান্ধীসহ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধীর অবদান ইত্যাদি নিয়ে আরও কিছু স্মারক ও তথ্য দেওয়ার জন্য ওই চিঠিতে আবেদন জানানো হয়েছে।

এই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকার গত ২৯ জানুয়ারি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর হাতে তুলে দিয়েছে ১০ কোটি রুপির চেক। এই চেক তুলে দেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ভবন সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের ২৫ মে এর উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বাংলাদেশ ভবন গড়া হয়েছে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির ইন্দিরা গান্ধী সেন্টার ও শান্তিনিকেতন দূরদর্শন কেন্দ্রের কাছে। এই ভবন নির্মাণের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল ২ বিঘা জমি। আর তাতে ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার দিয়েছিল ২৫ কোটি রুপি। বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া নকশা অনুযায়ী। এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে।

এই ভবনে রয়েছে ৪৫০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তন। অনুষ্ঠান করার সর্বাধুনিক একটি মঞ্চ ও দুটি সেমিনার হল রয়েছে এখানে। আরও আছে একটি গ্রন্থাগার, একটি জাদুঘর, একটি গবেষণাকক্ষ, একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষ ও একটি বড় মাপের ক্যাফেটেরিয়া।

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের একটা বড় সময় অতিবাহিত হয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের শিলাইদহ , পতিসর আর শাহজাদপুরে ছিল তাঁদের বাড়ি। সেখানে কবিগুরু দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। এখানে থেকে কবিগুরু নিজেদের জমিদারি দেখভালও করতেন। কবিগুরুর বাংলাদেশে অবস্থানকালের বিভিন্ন স্মৃতির কথা উঠে এসেছে বাংলাদেশ ভবনে। কবিগুরুর স্মৃতিবাহী নানা সামগ্রী, স্মারক নিয়ে বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘর সাজিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নানা ছবিসহ কবিগুরুর জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিকথা। বিশেষ করে বাংলাদেশে অবস্থানের নানা স্মৃতিবাহী ছবি, পাণ্ডুলিপি, স্মারকসহ আরও নানা দ্রষ্টব্য রয়েছে এখানে।

গত ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল।