ভারতে বাতিল হলো নাগরিকত্ব বিল

ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল রাজ্যসভায় পেশ করাই যায়নি। ছবি: রয়টার্স
ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল রাজ্যসভায় পেশ করাই যায়নি। ছবি: রয়টার্স

নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বাতিল হয়ে গেল। ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করাই গেল না। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে বিলটি শাসক দল আনতে চেয়েছিল। বিলটি লোকসভায় পাস করা গেলেও বিরোধীদের তীব্র বিরোধিতায় তা রাজ্যসভায় উত্থাপনই করা গেল না। লোকসভা ভোটের পর শাসক দল চাইলে এই বিল আবার নতুনভাবে আনতে হবে এবং দুই কক্ষেই পাস করাতে হবে।

একইভাবে মুসলমান নারীদের বিয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিন তালাক বন্ধ করতে প্রস্তাবিত বিলটিও রাজ্যসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করা গেল না। নাগরিকত্ব বিলের মতো এই বিলটিও লোকসভায় পাস করানো হয়েছিল। লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিলটিও আইনে পরিণত করতে গেলে নতুন সরকারকে তা নতুনভাবে আনতে হবে।

তবে আজ বুধবার রাজ্যসভায় রাফাল যুদ্ধবিমান কেনাবেচা সংক্রান্ত সরকারি অডিট রিপোর্ট পেশ করা হয়। ভারতের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) তৈরি করা এই প্রতিবেদন অধিবেশনের শেষ দিনে পেশ হওয়ায় তা নিয়ে আলোচনার কোনো অবকাশ রইল না। সিএজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, কংগ্রেস আমলের খসড়া চুক্তির তুলনায় বিজেপি শাসনের এই চুক্তি ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ সস্তা।

এই দাবি করা হলেও বিমানপ্রতি দাম কত পড়ছে এবং কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে, সিএজি রিপোর্টে তার কোনো উল্লেখ নেই। কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দল এই প্রতিবেদন খারিজ করে দিয়েছে। কারণ, সিএজি রিপোর্ট যিনি তৈরি করেছেন সেই রাজীব মেহর্ষিই ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থসচিব যখন রাফাল চুক্তি সই হয়েছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, দুর্নীতির শরিক ছিলেন যিনি, তাঁর তৈরি প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।

বুধবার বিকেলে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দলীয় দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সিএজি প্রতিবেদনে তথ্য গোপনের বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই প্রতিবেদন প্রমাণ করছে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী অসত্য বলেছেন। কারণ তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সরকারের সাশ্রয় হয়েছে ৯ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, ‘রাফাল নিয়ে মুখোমুখি বসুন। আপনি আপনার তথ্য দিন, আমরা আমাদের তথ্য দেব। দেশবাসী বিচার করবে, কে ঠিক কে ভুল।’

নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল অগ্নিগর্ভ। মঙ্গলবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যে বিল-বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। আসামসহ প্রতিটি রাজ্যে বিজেপির শরিকেরা এই বিলের বিরোধিতা করেছে। অনেকেই বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাতিল করেছে। বিলটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন প্রশ্ন, লোকসভার ভোটের আগে বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শরিকেরা ফের জোটে ফিরে আসবে কি না। এই বিল নিয়ে বিরোধ শুরুর আগে বিজেপি মনে করছিল, শরিকদের সঙ্গে জোট বেঁধে এই তল্লাটের মোট ২৫টি লোকসভার আসনের মধ্যে অন্তত ২২টি তারা জিতে নেবে।