এবার মে-র মন্ত্রিসভায় ভাঙনের সুর

থেরেসা মে
থেরেসা মে

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ কার্যকর করা নিয়ে এবার যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার বিরোধ প্রকাশ হলো। শনিবার তিনজন প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ এড়াতে তাঁরা বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে। এ বিষয়ে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে তাঁরা পদত্যাগেও প্রস্তুত।

এই তিনজন হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী গ্রেগ ক্লেয়ার্ক, কর্ম ও পেনশন-বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাম্বার রাড এবং বিচারবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড গোয়েক। শনিবার ‘ডেইলি মেইল’-এ যৌথভাবে লেখা এক নিবন্ধে তাঁরা বলেন, সংসদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দ্রুত চুক্তির সংশোধন না করা গেলে বিচ্ছেদের সময় পিছিয়ে দেওয়াটাই উত্তম বিকল্প। এতে আলোচনার আরও সময় পাওয়া যাবে।

আগামী বুধবার ব্রেক্সিট চুক্তি বিষয়ে পুনরায় সংসদে আলোচনা শুরু হবে। ক্ষমতাসীন দলের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওলিভার লেটউইন এবং লেবার দলের আইনপ্রণেতা ইভেট কোপার বিচ্ছেদের সময় পিছিয়ে দেওয়ার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংসদে চুক্তি পাসে ব্যর্থ হলে বিচ্ছেদের সময় যেন অন্তত তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার তিন মন্ত্রী এই প্রস্তাব সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রীতি অনুযায়ী সংসদে ভোটাভুটিতে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হলে মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদের সম্ভাবনা কোনো গোপন বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রী কাঙ্ক্ষিত চুক্তি সম্পাদনে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রিসভার উচিত তাঁর সেই চেষ্টায় সমর্থন দেওয়া।

আগামী ২৯ মার্চ ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হবে বলে দিনক্ষণ ঠিক করা আছে। চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক হবে বলে আশঙ্কা। কিন্তু সম্পাদিত চুক্তি যুক্তরাজ্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইইউ আইনের অধীন করে রাখবে, এমন আপত্তি তুলে সেটি বর্জন করেছে দেশটির সংসদ। সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার দাবি মোতাবেক তিনি চুক্তি সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ইইউর তরফ থেকে ইতিবাচক সাড়া এখনো মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী মে-র অবস্থান হলো, সমঝোতা না হলে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ হবে। তিনি বিচ্ছেদের সময় পেছানোর পক্ষপাতী নন।

আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদের পক্ষে। আরেকটি অংশ চাইছে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের ধ্বংস এড়াতে সময় অন্তত তিন মাস বাড়িয়ে নেওয়া হোক, যাতে আরও আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায়।

আবার বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আরেকটি অংশ পুনরায় গণভোটের দাবিতে সোচ্চার। এ দাবির অনুসারী বিরোধী দল লেবার পার্টির আটজন এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের তিনজন আইনপ্রণেতা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা স্বতন্ত্র গ্রুপের ব্যানারে মধ্যপন্থী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। শুক্রবার লেবার দলের আরেক আইনপ্রণেতা ইয়ান অস্টিন পদত্যাগ করে এই স্বতন্ত্র গ্রুপে যোগ দেন। এর ফলে স্বতন্ত্র গ্রুপে মোট আইনপ্রণেতার সংখ্যা হলো ১২ জন। সংসদে তাঁরা এখন চতুর্থ বৃহত্তম দল।

স্বতন্ত্র গ্রুপের আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল কট্টর ডানপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আর লেবার দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কট্টর বামপন্থীরা।