সিবিআইয়ের কোপে তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস আবার সিবিআইয়ের কোপে পড়েছে। সারদা পশ্চিমবঙ্গের একটি ক্ষুদ্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা চিটফান্ডের নাম। ২০১৩ সালে কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে সারদা চিটফান্ডের কথা প্রকাশ্যে আসে। শুরু হয় সিবিআইয়ের তদন্ত। সেই তদন্ত এখনো চলছে। এ নিয়ে মামলা গড়ায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও।

১৮ ফেব্রুয়ারি সারদাসহ অন্যান্য চিটফান্ডের আর্থিক দুর্নীতির এক তদন্ত প্রতিবেদন সিবিআইয়ের পুলিশ সুপার পি সি কল্যাণ অতিরিক্ত একটি হলফনামার মাধ্যমে পেশ করেন সুপ্রিম কোর্টে। সেই হলফনামায় সিবিআই প্রকাশ করে সারদার অর্থ নয়ছয়ের বিষয়; কার্যত, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে।

এতে বলা হয়, সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর সারদার মালিকানাধীনে থাকা ‘তারা’ টিভিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৩ মাস ধরে মাসে ২৭ লাখ রুপি করে রাজ্য সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে বেআইনিভাবে দিয়েছিল। ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এই ২৩ মাসে এটি দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারদার কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের বহু নেতার নাম। এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে সিবিআই গত বছরের ১৬ অক্টোবর জানতে চাইলেও এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

সিবিআই বলেছে, তৃণমূলের জাগো বাংলা পত্রিকা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতার আঁকা ছবি বিক্রি নিয়েও সিবিআই বলেছে, মমতা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি রুপির ছবি বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন চিটফান্ডের কর্মকর্তারা এটি কিনেছিলেন। হলফনামায় সিবিআই বলেছে, চিটফান্ড নিয়ে তদন্তে বরাবর অসহযোগিতা করে এসেছে রাজ্য সরকার। বলেছে, সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার মমতার আঁকা ছবি বিক্রি করে আর্থিক আয়ের ইস্যু তুলেছিল।

সিবিআই ৮০ পাতার এই হলফনামায় সারদা কেলেঙ্কারি নানা তথ্য তুলে ধরেছে। জমা দিয়েছে ২২টি নথি। হলফনামায় তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল এবং আবু হাসেম খান চৌধুরীর চিটফান্ডের দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইকে দেওয়া চিঠির কথাও উল্লেখ করেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি এই হলফনামা এবং রাজ্য সরকারের পেশ করা পাল্টা হলফনামা নিয়ে শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।

২০১৩ সালের এপ্রিলে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন কলকাতা থেকে পালিয়ে যান। সঙ্গে যান সারদারই পরিচালক দেবযানী মুখার্জি। এরপরই তোলপাড় হতে থাকে রাজ্য রাজনীতি। বেরিয়ে আসতে থাকে সারদার সঙ্গে যুক্ত তৃণমূলের নেতা–মন্ত্রীদের নাম। অভিযোগ ওঠে ১৮ লাখ মানুষের কাছ থেকে চিটফান্ডের নামে ১৪ হাজার কোটি রুপি তুলে তা আত্মসাৎ করার। আর এর একজন সঙ্গী ছিলেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি আবার ছিলেন সারদার মালিকানার ১০টি মিডিয়া হাউসের প্রধান নির্বাহী। তাঁর হাতে ছিল তারা টিভি। ছিল কলকাতা এবং আসামের বাংলা ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু মিলিয়ে ছয়টি দৈনিক ও চারটি টিভি চ্যানেল। সুদীপ্ত সেন কলকাতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৮ পাতার এক চিঠিতে সিবিআইকে জানিয়ে যান, কেন তাঁর সারদা রাজ্যের পতন হলো আর কারা কারা জড়িত এর পেছনে। তিনি অবশ্য তৃণমূলের মন্ত্রীসহ ২২ জন নেতার নাম উল্লেখ করে যান। তিনি বলেন, তাঁরা চাপ প্রয়োগ করে বারবার টাকা নিয়ে সারদার প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছেন।

এই সারদাকাণ্ডে পরে অবশ্য কুণাল ঘোষসহ কয়েকজন তৃণমূল নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী গ্রেপ্তার হন। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে গ্রেপ্তার করা হয় কাশ্মীর থেকে। পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হন কুণাল ঘোষও। তিনিও গ্রেপ্তারের আগে ১২ জনের নাম জানিয়ে যান। তাঁরা সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে জানেন। পরবর্তী সময়ে অবশ্য কুণাল ঘোষ জামিনে মুক্তি পেলেও এখনো কারাগারে রয়েছেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন।