ভারত সীমান্তে বাংকার নির্মাণ করছে

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত এলাকায় ১৪ হাজার বাংকার নির্মাণ করছে ভারত। ছবি: রয়টার্স
ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত এলাকায় ১৪ হাজার বাংকার নির্মাণ করছে ভারত। ছবি: রয়টার্স

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত এলাকায় ১৪ হাজার বাংকার নির্মাণ করছে ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কোথাও না পাঠিয়ে যেন ওই এলাকায় লোকদের নিরাপদে রাখা যায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের নিয়ন্ত্রণরেখার (লাইন অব কন্ট্রোল) কাছে ১২ থেকে ১৫টি জায়গায় পাকিস্তান হামলা চালায়। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুঞ্জ জেলার ডেপুটি কমিশনার রাহুল যাদব বলেন, ‘লোকজনের মধ্য ভয় তৈরি’র চেষ্টা হিসেবে পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে।

১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় হামলার পর গত মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় হামলা চালায় ভারত। দেশটির বিমানবাহিনীর ওই হামলায় ৩০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহেদিন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার স্থাপনায় এ বিমান হামলা চালানো হয়। এরপরই ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই অপরের বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে। ভারতের হামলার পর পাকিস্তান পাল্টা হামলা করলে দুই দেশ থেকেই প্রতিরোধের ঘোষণা আসে। এই উত্তেজনার মধ্য নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারত নতুন স্থাপনা তৈরি করেছে। ১৪ হাজার বাংকার নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে লোকজনকে কোথাও না পাঠিয়ে নিরাপদে রাখা।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহ থেকেই বাংকার নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানায় ভারত সরকার। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও হামলার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, তা কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

চকওয়াল গ্রামের তানাত্তার সিংয়ের বয়স ৭৫ বছর। ২০০২ সালে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয় বুলেটের আঘাতে। বাড়ির বাইরে থাকায় এমনটা হয়েছে। তানাত্তার সিংয়ের বাড়ির পাশেরই গমখেত এবং নিরাপত্তাচৌকি। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘৪০০ গ্রামবাসীর জন্য বাংকার তৈরি হচ্ছে। আবার গোলাগুলি শুরু হতে পারে। আমরা জানি তাহলে সীমান্তের কাছে গ্রামের বাসিন্দারা ঝুঁকিতে থাকেন।’ আক্ষেপ করে তানাত্তার সিং বলছিলেন, ‘আমাদের আর কীই-বা করার আছে। আমরা এ এলাকা ছেড়ে যেতে পারি না, যা পারে বড়লোকেরা।’

ভারত সরকারের এক প্রকৌশলী বলেন, এসব বাংকার তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ডলার। গত বছরের জুনে এসব বাংকার তৈরির কাজ শুরু হয়। বোমা হামলা থেকে লোকজনকে রক্ষায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, এসব বাংকার বড় ও শক্তিশালী বোমা থেকে লোকজনকে খুব একটা রক্ষা করতে পারবে না। সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি নাম প্রকাশ করেননি।

পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কোথাও না পাঠিয়ে লোকদের নিরাপদে রাখতে এই ব্যবস্থা করেছে ভারত। ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কোথাও না পাঠিয়ে লোকদের নিরাপদে রাখতে এই ব্যবস্থা করেছে ভারত। ছবি: রয়টার্স

রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকগুলো বাংকার তৈরি হয়ে গেছে। এসব বাংকার অনেক মজবুত। বিমান থেকে ফেলা বোমায় লোকজনকে অক্ষত রাখতেই বানানো হচ্ছে বাংকার।

রয়টার্সের সাংবাদিক অনেকগুলো বাংকার তৈরির কাজ দেখেছেন।

তবে সীমান্তরেখার পাকিস্তান অংশে বাংকার বা লোকজনের নিরাপত্তায় কোনো উদ্যোগ নেই। আর তাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের হামলায় হতাহতের অনেক ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ওই হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।

পাকিস্তানের চোকথি একটি শহর এলাকা। সেখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিন বলেন, এখান অধিকাংশ মানুষই সরে নিরাপদ স্থানে গেছে। তিনি বলেন, কয়েকটি পরিবার সেখানে আছে। এদের বাংকার ব্যবস্থা আছে।

পাকিস্তানের দৈনিক ডনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর থেকেও বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে তারা একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ। এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) ভারতের বিমানবাহিনীর হামলায় ৩০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহেদিন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার স্থাপনায় এ বিমান হামলা চালানো হয়। ভারতের বিমানবাহিনী ২১ মিনিটের ওই হামলায় মিরাজ ২০০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের বোমাবর্ষণ করেছে। মোট পাঁচ থেকে ছয়টি বোমা ফেলা হয়েছে। শুধু বালাকোটে বোমাবর্ষণে ১ কোটি ‌৭ লাখ রুপি ব্যবহার করেছে ভারত। অভিযান চলাকালে কোনো বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে আকাশপথেই যাতে জ্বালানি ভরা যায়, তার জন্য তৈরি ছিল বিশেষ বিমান। সেই বিশেষ বিমানের ট্যাংকারের দাম প্রায় ২২ কোটি রুপি। এ ছাড়া ৮০ কোটি রুপি মূল্যের ড্রোন আকাশে নজরদারি চালিয়েছে।