রাফাল নিয়ে মহাবিপাকে মোদি

রাফাল যুদ্ধবিমান (ফাইল ছবি)
রাফাল যুদ্ধবিমান (ফাইল ছবি)

কেন্দ্রীয় সরকার প্রকারান্তরে স্বীকারই করে নিল, রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তিতে বড়সড় অনিয়ম ছিল। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে রাফালসংক্রান্ত এক আবেদন খারিজের আরজি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল বলেন, রাফালসংক্রান্ত যেসব সরকারি নথি ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং যে নথি এই আবেদনে যুক্ত করা হয়েছে, তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চুরি করা। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই নথি আদালতের বিচার্য হওয়া উচিত নয়।

নথি অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল কেনা নিয়ে সমান্তরাল আলোচনা চালিয়ে গেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব সরকারি নোটে তার প্রতিবাদও করেছিলেন। চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে প্রচুর পদ্ধতিগত ত্রুটিও রয়েছে। কংগ্রেস আমলের চুক্তির তুলনায় যুদ্ধবিমান কিনতে দামও বেশি দিয়েছে।

 ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত ওই নথির ভিত্তিতে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বুধবার বলেন, এখন এটা স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রী রাফালের নির্মাতা দাসোকে ৪ হাজার ৩০৫ কোটি রুপির ব্যাংক গ্যারান্টি উপঢৌকন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের ১৩ ১(ঘ) ধারায় অভিযোগ দায়ের করা উচিত।
ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৩৬টি রাফাল কিনতে ৫৯ হাজার কোটি রুপিতে ভারত চুক্তিবদ্ধ হয় ২০১৬ সালে। তার আগে কংগ্রেস সরকার ওই সংস্থার সঙ্গেই ৭৯ হাজার কোটিতে ১২৬টি রাফাল কেনার জন্য আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। প্রধানমন্ত্রী সেই খসড়া চুক্তি বাতিল করে নতুন চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হয় বিরোধীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বঞ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছের শিল্পপতিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে শীর্ষ আদালতে দায়ের হয় একাধিক মামলা। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর সরকারের দেওয়া গোপন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে ক্লিন চিট দেয়। সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য দাখিল করা হয় নতুন আবেদন। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চে বুধবার ছিল সেই মামলার শুনানি।

সুপ্রিম কোর্টে বেনুগোপালের আরজি ছিল, বিরোধীরা চুরি করা নথি প্রমাণ হিসেবে আদালতে দাখিল করেছে। ওই চুরি ফৌজদারি অপরাধের সমান। তিনি এ কথাও বলেন, রাফালের মতো উন্নতমানের যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন রয়েছে পাকিস্তানকে মোকাবিলার জন্য।

কেন্দ্রীয় সরকারের আরজি সর্বোচ্চ আদালত বিনা বাক্যে মেনে নেননি। অ্যাটর্নি জেনারেলের দাবির পিঠে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, সরকার কেন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে? কোনো মারাত্মক অপরাধ ঘটলে কী করে সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে পারে? চুরির বিরুদ্ধেই বা সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চুরির তদন্ত চলছে।
অন্যতম মামলাকারী আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ প্রধান বিচারপতিকে বলেন, কংগ্রেস আমলের কয়লা ও টু-জি কেলেঙ্কারি মামলাতেও তিনি বহু সরকারি নথি পেশ করেছিলেন। হুইসিল ব্লোয়াররা সেই সব গোপন নথি সরকারের ঘর থেকে তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আদালতে সেই সব নথি পেশ করাও হয়েছিল। তখন কোনো আপত্তি ওঠেনি। সুপ্রিম কোর্টও সেই সব নথির ভিত্তিতে রায় দিয়েছিলেন।
সরকার গোটা মামলাকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিতে দেখতে চাইছে। বেনুগোপাল সে কথা বলেও দেন। তাঁর কথায়, রাফাল এই সময় দেশের স্বার্থেই জরুরি। না হলে দেশ নিরাপদ থাকতে পারবে না। অথচ বিরোধীরা মামলা করে সেই প্রক্রিয়া বানচাল করে দিতে চাইছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ মার্চ।

আরও পড়ুন: