ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের জাতীয়ভাবে স্মরণ করবে নিউজিল্যান্ড

আল নূর মসজিদ। ছবি: এএফপি
আল নূর মসজিদ। ছবি: এএফপি

ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামী শুক্রবার জাতীয় স্মরণসভার আয়োজন করবে নিউজিল্যান্ড। রোববার এ কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আহডার্ন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

হামলা–পরবর্তী পরিস্থিতি দৃঢ়ভাবে মোকাবিলার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত আহডার্ন বলেছেন, ‘এই স্মরণসভা ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড ও সারা বিশ্বের মানুষদের একত্র হয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেবে।’ অতর্কিত এই হামলা যে নিউজিল্যান্ডের চিরচেনা সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি, সেটিও নিশ্চিত করেছেন আহডার্ন। তিনি বলেছেন, ‘অপ্রত্যাশিত সেই সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে আমাদের দেশের জনগণ মর্মাহত। তারা হামলার শিকার সবার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষ যে সহানুভূতিশীল, একাত্ম ও বৈচিত্র্যে বিশ্বাসী, সেটি আরও একবার দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ এই স্মরণসভা।’

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, যেখান থেকে সন্ত্রাসী হামলার শুরু, সেই আল নুর মসজিদের কাছে হ্যাগলি পার্কে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলায় পাঁচ বাংলাদেশিসহ ৫০ জন নিহত হন।

‘আমাদের এগিয়ে যেতে হবে’

ওই দিন আল নূর মসজিদে হামলার পাশাপাশি লিনউড মসজিদেও হামলা চালিয়েছিলেন সন্ত্রাসী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। তদন্ত ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে হামলার পর থেকে মসজিদ দুটি বন্ধ রাখে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ। রোববার খুলে দেওয়া হয়েছে লিনউড মসজিদ। এই মসজিদ থেকেই টারান্টকে ধাওয়া করে নায়ক বনে যান আফগান শরণার্থী আবদুল আজিজ। মসজিদ খুলে দেওয়ার পর আবারও লিনউড মসজিদে এসেছেন আজিজ। সেদিন আরও রক্তপাত বন্ধ করতে ভূমিকা রাখা আজিজ বর্ণনা করেছেন পুনরায় মসজিদে ঢোকার পর নিজের অভিজ্ঞতা। আজিজ বলেন, ‘যখনই আমি মসজিদের দরজা দিয়ে ঢুকলাম, সঙ্গে সঙ্গে আমার সব স্মৃতি মনে পড়তে লাগল। কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সবকিছু সহনীয় পর্যায়ে আসতে সময় লাগবে, কিন্তু আমাদের শক্ত থাকতে হবে।’

ঘটনার দিন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন আজিজ। কিন্তু ওই মুহূর্তে নাকি নিজের চেয়ে অন্যদের জীবন নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলেন তিনি। বলেন ‘আমি যদি বন্দুকধারীর মুখোমুখি নাও হতাম, আমাকে হয়তো মারা যেতেই হতো। মসজিদের ভেতরে আটকে পড়া ৮০ থেকে ১০০ জন মানুষের চেয়ে আমার জীবন কোনোভাবেই বেশি মূল্যবান ছিল না।’

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা

তহবিল উত্তোলনকারী দুটি বৈশ্বিক ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারদের সহায়তার জন্য রোববার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৭৪ লাখ মার্কিন ডলার জমা পড়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো চাইলে তাদের সরকারি খরচে নিউজিল্যান্ডের বাইরে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আহডার্ন।