রাহুল লড়বেন কেরালা থেকেও

রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী

জল্পনা সত্যি হলো। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী উত্তর প্রদেশের আমেথি ছাড়াও ভোটে লড়বেন কেরালার ওয়েনাড থেকে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির শীর্ষ নেতা ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কেরালার ভূমিপুত্র এ কে অ্যান্টনি আজ রোববার সকালে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।

রাহুল গান্ধী কেরালা থেকে নির্বাচন করবেন কি না, তা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে এই জল্পনায় মুখর ছিল রাজনীতি। কেরালা কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চণ্ডী ও বিধানসভার বিরোধী নেতা রমেশ চেন্নিথালা এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, রাজ্য নেতৃত্ব সর্বসম্মতভাবে এই প্রস্তাব করেছে। ওই সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরযেওয়ালা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কেরালার কংগ্রেস কর্মীরা রাহুলকে ওই রাজ্য থেকে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। ওঁদের ভালোবাসায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অভিভূত। কংগ্রেস সভাপতিই ঠিক করবেন, কোন সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন।

দিন কয়েক আগে এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেছিলেন, আমেথি তাঁর কর্মভূমি; কর্মভূমিই থাকবে।

রাহুলের এই সিদ্ধান্তের পর প্রশ্ন উঠেছে, আমেথিকে তিনি কি তাহলে আর নিরাপদ ভাবছেন না? আজ এই প্রশ্নের জবাবে সুরযেওয়ালা বলেন, এই ধরনের ছেলেমানুষি প্রশ্ন অবান্তর। তিনি পাল্টা জানতে চান, নরেন্দ্র মোদি কেন গুজরাটের পাশাপাশি বারানসিতেও ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন? তিনি কি গুজরাট নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না? সুরযেওয়ালা বলেন, স্মৃতি ইরানি (আমেথিতে বিজেপির প্রার্থী) আমেথিতে এবার তাঁর হারের হ্যাটট্রিক করবেন।

উত্তর প্রদেশের আমেথি বরাবরই কংগ্রেসের গড়। ১৯৬৭ সাল থেকে মাত্র দুবার এই কেন্দ্র কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে। প্রথমবার ১৯৭৭ সালে। জিতেছিলেন জনতা পার্টির রবীন্দ্র প্রতাপ সিং। দ্বিতীয়বার ১৯৯৮ সালের ভোটে। কংগ্রেস ছেড়ে আমেথির রাজা সঞ্জয় সিং বিজেপিতে যোগ দিয়ে জেতেন। এই দুই ব্যতিক্রম ছাড়া কংগ্রেস ও আমেথি সমার্থক। ১৯৮০ সালে এখান থেকে জিতেছিলেন ইন্দিরা-তনয় সঞ্জয় গান্ধী। তাঁর মৃত্যুর পর পরপর তিনবার এই কেন্দ্র থেকে জেতেন রাজীব গান্ধী। ১৯৯১ সালে রাজীবের মৃত্যুর পর গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ সতীশ শর্মা কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। মাঝখানে ১৯৯৮ সালে নির্বাচিত হন সঞ্জয় সিং। ১৯৯৯ সালে জেতেন সোনিয়া গান্ধী। ২০০৪ সাল থেকে কেন্দ্রটি রয়েছে রাহুল গান্ধীর দখলে।

আমেথি কংগ্রেসের দুর্গ হলে কেন তবে দ্বিতীয় কেন্দ্র হিসেবে ওয়েনাডকে বাছা হলো? তবে কি সতি৵ সত্যিই কংগ্রেস আর আমেথিকে নিরাপদ ভাবছে না? প্রশ্নটি উঠছে একাধিক কারণে। একটা প্রধান কারণ রাহুলের জয়ের মার্জিন ক্রমে কমে যাওয়া। ২০০৯ সালে রাহুল ৩ লাখ ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭ হাজারে। বিজেপির স্মৃতি ইরানি ওইবারের নির্বাচনে তিন সপ্তাহ মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন আমেথিতে। স্মৃতি এবারও রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বী। পাঁচ বছর ধরে মাঝেমধ্যেই তিনি আমেথি গিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন সংগঠন। বাড়িয়েছেন জনপ্রিয়তা। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আমেথি গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে সেখানে কালাশনিকভ রাইফেল তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন করেন। কংগ্রেসের বড় ধাক্কা তার কদিন পর। ওই কেন্দ্রে বহু বছরের স্থানীয় নেতা, রাজীব ও সোনিয়ার মনোনয়নপত্রের সাবেক প্রস্তাবক হাজি সুলতান খানের ছেলে হাজি হারুন রশিদ কংগ্রেসের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস ওই কেন্দ্রে মুসলমানদের জন্য কিছুই করেনি।

এই ধাক্কার পাশাপাশি উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসকে এবার ব্রাত্যও বলা যায়। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির জোটে কংগ্রেসকে শামিল করা হয়নি। আমেথি ও রায়বেরিলি কেন্দ্র দুটিতে এসপি-বিএসপি কেউ প্রার্থী না দিলেও নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেসকে তুলোধুনা করতে ছাড়ছেন না বহুজন নেত্রী মায়াবতী। সম্প্রতি তিনি কংগ্রেসের ন্যূনতম আয় যোজনার সমালোচনা করে বলেন, ওটি অবাস্তব কল্পনা। এসব কারণেই ওয়েনাডের চিন্তা।

কিন্তু সেখানেও সবকিছু মসৃণ, তেমন ভাবার কারণ নেই। ওয়েনাড কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই সিপিআই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সিপিআই নেতা ডি রাজা বলেছেন, কেরালার কোনো কংগ্রেস নেতা হলে আলাদা কথা ছিল। কিন্তু রাহুল গান্ধী দাঁড়ালে তা বিরোধী ঐক্য সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেবে।

ওয়েনাড থেকে কংগ্রেস আগেই প্রার্থী হিসেবে কোঝিকোড় জেলা কংগ্রেস সভাপতি টি সিদ্দিকির নাম ঘোষণা করেছিল। যদিও ওমেন চণ্ডী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সিদ্দিকি নিজেই রাহুলকে স্বাগত জানিয়েছেন।