রাহুলকে রুখতেও হিন্দুত্ববাদ হাতিয়ার

নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী
নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী

ভোট যত এগোচ্ছে, উন্নয়নের রাস্তা ছেড়ে ভারতের শাসক দল বিজেপি ততই আঁকড়ে ধরছে হিন্দুত্ববাদ, সেনা বিক্রম ও নিরাপত্তার প্রশ্নকে। নির্বাচনী প্রচারে তাই বড় হয়ে উঠছে পুলওয়ামা–পরবর্তী বালাকোটের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে উপগ্রহ ধ্বংস করার কৃতিত্ব, সেনাবাহিনীর বিক্রম এবং অবশ্যই হিন্দুত্ব। আজ সোমবার মহারাষ্ট্রের ওয়ারধায় এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা আরও স্পষ্ট করে দিলেন।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী আমেথির বাইরে দ্বিতীয় আসনটি বেছে নিয়েছেন। কেরালার ওয়েনাড লোকসভা আসন থেকেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই আচমকা সিদ্ধান্তকে বিজেপি রাহুলের ‘পলায়ন মনোবৃত্তি’ বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। বলেছে, আমেথিতে জয় সম্পর্কে সন্দিহান বলেই রাহুল দক্ষিণের ওই কেন্দ্র বেছে নিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একধাপ এগিয়ে এ সিদ্ধান্তের পেছনে সংখ্যাগুরু–সংখ্যালঘুর উপস্থিতিকে বড় করে তুলে ধরতে চেয়েছেন। ওয়ারধার জনসভায় বলেছেন, সংখ্যাগুরু কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে কংগ্রেস ভয় পাচ্ছে। কারণ, এ দেশে তারাই ‘হিন্দু সন্ত্রাসের’ প্রবক্তা।

মোদি বলেন, কংগ্রেসই এ দেশের শান্তিপ্রিয় হিন্দুদের সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। হিন্দুদের তারা অপমান করেছে। হিন্দু জনতা তাই ঠিক করেছে, এই ভোটে কংগ্রেসকে উপযুক্ত শাস্তি দেবে। এটা বুঝতে পেরেছেন বলেই কংগ্রেস সভাপতি কেরালার ওয়েনাড কেন্দ্রটি বেছে নিয়েছেন।
ওয়েনাডকে কেন বেছেছেন রাহুল, বিজেপির শীর্ষ নেতারা প্রথম দিন থেকেই সেই ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, সেই ব্যাখ্যাই তাদের দাপ্তরিক ভাষ্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সেই ব্যাখ্যা তাঁর মতো করে দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘হিন্দু টেরর’ বা ‘হিন্দু সন্ত্রাসের’ কথা কংগ্রেসই প্রথম আমদানি করে। অথচ এত দিনে হিন্দু সন্ত্রাসের একটি নমুনাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। এ কারণে হিন্দু জনতা কংগ্রেসের ওপর খ্যাপা। কংগ্রেসকে তারা ক্ষমা করবে না।

মোদি ও তাঁর দলের ব্যাখ্যা, ওয়েনাড কেন্দ্রটি অনেক ভেবেচিন্তেই কংগ্রেস বেছে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ গত রোববার জানিয়ে দেন, কেরালার ওই কেন্দ্রে হিন্দু ভোটার সংখ্যালঘু। মাত্র ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বাকিরা মুসলমান। তিনি বলেন, নিজেকে হিন্দু বলে পরিচিত করার আপ্রাণ চেষ্টা রাহুল করেছিলেন। পইতা পরে হিন্দু দেবস্থান পরিদর্শন শুরু করেন। নিজের গোত্র উচ্চারণ করতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের মধ্যেই তিনি নিজেকে নিরাপদ উপলদ্ধি করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই ব্যাখ্যাকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি সোমবার ‘হিন্দু সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ টানেন। শুধু তা–ই নয়, বিকাশ, উন্নয়ন, জনহিতকর প্রকল্প, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির দাবি থেকে সরে পাকিস্তান, সন্ত্রাস, নিরাপত্তা ও সেনা পরাক্রমকেই তিনি প্রতিটি নির্বাচনী সভায় বড় করে তুলে ধরছেন। জনসভায় সরাসরি জানতে চাইছেন, যে দল দেশের সেনা সাফল্যকে সন্দেহ করে, প্রশ্ন তোলে, জনতা তাদের ভোট দেবে কি না। কংগ্রেসসহ বিরোধীদের সরাসরি আক্রমণ করে মোদি বলেছেন, এসব দল পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলে।
ওয়েনাড আসনে কেরালার বাম জোট আগেই তাদের প্রার্থী হিসেবে সিপিআইয়ের পি পি সুনীরের নাম ঘোষণা করেছে। রাহুল সেখানে প্রার্থী হওয়ায় বিজেপি সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। আজ তারা প্রার্থী করে স্থানীয় শরিক ভারত ধর্ম জন সেনার (বিডিজেএস) সভাপতি তুষার ভেলাপাল্লিকে।