ইন্টারনেটে ভুয়া খবর ঠেকাতে আইন হচ্ছে সিঙ্গাপুরে

সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট ভবন। ছবি: এএফপি
সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট ভবন। ছবি: এএফপি

ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ভুয়া খবর ঠেকাতে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর। গতকাল সোমবার দেশটির পার্লামেন্টে এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে সরকার বিপুল ক্ষমতা পেয়ে যাবে ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার সংগঠন।

পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রস্তাব অনুসারে, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কিছু সরকার ভুয়া মনে করলে ‘জনস্বার্থে’ তা সরিয়ে নেবে এবং পোস্টদাতাকেও সতর্ক করবে।

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি ইন্টারনেটের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানোর দুই দিন পর সিঙ্গাপুর সরকার এ পদক্ষেপ নিল।

ফেসবুকের এশিয়াবিষয়ক নীতি ইস্যুতে কর্মরত সাইমন মিলনার বলেন, তাঁরা আইনটির পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আইনটির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের নির্বাহী বিভাগকে এতই ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে যে তারা যা ভুয়া বলে মনে করবে, তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করা হবে এবং ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে সরকারের দেওয়া বার্তা পাঠাতে হবে।

এশিয়া ইন্টারনেট কোয়ালিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেফ পাইন বলেন, এ ধরনের আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং তা সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে শাখা বিস্তার করতে পারে।

গতকাল সিঙ্গাপুরের আইনমন্ত্রী কে শানমুগাম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন আইনটি স্বাধীন মতপ্রকাশে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এটা শুধু ভুয়া খবরের বেলায় প্রযোজ্য হবে। মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না। যে কেউ যৌক্তিক অযৌক্তিক যেকোনো দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারবেন।

তথ্যপ্রযুক্তির জগতে প্রভাবশালী ফেসবুক, টুইটার, গুগল—সব প্রতিষ্ঠানেরই এশিয়া সদর দপ্তর রয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে। ৫০ বছর আগে ব্রিটিশদের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয় দেশটি। তখন থেকেই একটি রাজনৈতিক দলই দেশটিকে পরিচালনা করছে। দেশটির সরকারের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থল হওয়ায় এবং সেখানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস থাকায় ও ইন্টারনেটে ব্যাপক প্রবেশাধিকার থাকায় ভুয়া খবরের ছড়িয়ে পড়ার দিক দিয়ে দেশটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুরের অবস্থান ১৫১। রাশিয়া ও মিয়ানমারেরও নিচে দেশটির অবস্থান।

ইন্টারনেটের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার মতামত পাতায় এক খোলা চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে জাকারবার্গ বলেন, ক্ষতিকর কনটেন্ট পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নেওয়া বেশ কঠিন। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন কিছু আইন দেখতে চান বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নতুন আইনগুলো সব ওয়েবসাইটের জন্যই প্রযোজ্য হতে হবে, যাতে কোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্ষতিকর কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বন্ধের কাজটি সহজ হয়।