কী বিষে জর্জর চীন!

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

২০ বছর আগের কোনো একসময়। চীনের ইউনান প্রদেশের লিন গুয়াংপেং (ছদ্মনাম) মাত্র কৈশোরে পা দিয়েছেন। একদিন এক পার্টিতে বন্ধুর দেওয়া এমন এক জিনিস তাঁর হাতে এল, জীবনটাই গেল বদলে। হেরোইনের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যে তিনি এতে আসক্ত হয়ে পড়েন। 

কৈশোরের এ ভুলের জন্য পুলিশ তাঁকে আটক করে। মাদক সেবনের জন্য পাঠায় সংশোধন কেন্দ্রে। সুস্থ করার জন্য বিচ্ছিন্ন করে সমাজ ও পরিবার থেকে। যাকে বলা হয়—‘কম্পলসরি আইসলেশন ডিটক্সিফিকেশন’। লিন বলেন, কেন্দ্রগুলো হয়তো শারীরিক সুস্থতা এনে দেয়, তবে তারা আত্মায় ক্ষত তৈরি করে। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক লিনকে দীর্ঘদিন কারাগারের কারখানায় কায়িক শ্রমে নিযুক্ত করেন।

মাদকের ব্যাপারে চীন অত্যন্ত কঠোর। প্রতিবছর অনেক মাদক পাচারকারীকে তারা মৃত্যুদণ্ড দেয়। শাস্তি হিসেবে মাঝেমধ্যে পাচারকারীদের জনসম্মুখে জড়ো করে ও মিছিল করায়। ওই নির্মম মিছিলে অনেক স্কুলগামী শিশুও থাকে।

পুলিশ অনেক সময় ঘটনাস্থলেই মাদকসেবীদের শাস্তি দেয়। আবার অনেককে দুই তিন বছর বিনা বিচারে আটকে রাখে যেখানে লিনকে রাখা হয়েছিল। এভাবে আটকে রাখার সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। চীনের মাদক বিরোধী সংস্থার মতে, ২০১৭ সালে আটকে রাখা হয় ৩ লাখ ২ হাজার জনকে। ২০১৬ সালের তুলনায় সংখ্যাটি ৩৬ হাজার কম হলেও, ২০১২-র থেকে তা ১ লাখ ২০ হাজার বেশি।

সুস্থ হয়ে ফিরলেও মাদকসেবীদের নাম সব সময় পুলিশের খাতায় থাকে। মাঝেমধ্যেই পুলিশের খপ্পরে পড়ে অপমানিত হতে হয়। লিনের দুই বছরের বন্দিদশা শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। সে এখন সংযমী, সুস্থির এবং আর কখনো মাদক না নিতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। তবু সে মাদকসেবী হিসেবে সরকারের তালিকাভুক্ত। এমন লোকদের প্রায়ই পুলিশের কাছে প্রস্রাবের পরীক্ষার ফল জানাতে হয়। সাধারণ পরীক্ষাটা ওই থানাতেই করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় তা করতে হয় জনসম্মুখে। বিশেষত, যখন তাঁরা কোনো হোটেলে অবস্থান করেন বা বিমানে করে কোথাও যেতে চান। লিন বলেন, বর্তমানে স্মার্ট নিরাপত্তা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনের কারণে খুঁজে বের করা ও পরীক্ষা নেওয়াটা পুলিশের জন্য সহজ হয়েছে।
চীন সফরে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, মাদক নিয়ে চীনের কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। জবাবে ট্রাম্পকে সি বলেছিলেন, তাঁর দেশে মাদক ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এতেই কি সমস্যার সমাধান? সি চিন পিং না বললেও তাঁর দেশে সমস্যা রয়েছে। সরকারের তালিকায় ১৯৯১ সালে ১ লাখ ৫০ হাজার মাদকসেবীর নাম ছিল। ২০১৭ সালে তা প্রায় ২৫ লাখে পৌঁছায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রকৃত সংখ্যাটি এরও পাঁচ গুণ।

কিছুদিন আগেও হেরোইনের মতো কড়া মাদকদ্রব্যের দৌরাত্ম্য ইউনানের মতো দরিদ্র্য প্রদেশগুলেতে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন তা সারা চীনেই ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে বেশির ভাগ মাদকদ্রব্য আসে মিয়ানমার থেকে। দেশটিতে অবৈধ গবেষণাগারেও কিছু হেরোইন তৈরি হচ্ছে।

মাদকের বিষয়ে বর্তমান প্রবণতায় চীন সরকার উদ্বেগের মধ্যে পড়েছে। তাই সমস্যা মোকাবিলায় কঠোর নীতির বদলে দেশটি কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে। এ জন্য ‘কম্পলসরি আইসলেশন ডিটক্সিফিকেশন’ সেন্টারের দায়িত্ব পুলিশের হাত থেকে বিচার বিভাগের নিকট দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ শাস্তির পরিবর্তে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শের মাধ্যমে নিরাময়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

এখন পুলিশ প্রথমবার মাদক নেওয়া অপরাধেই কাউকে ওই সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে না। তবে তারা সতর্ক রয়েছে। মাদকসেবীদের ধরিয়ে দিতে জানুয়ারিতে তারা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। যদি কেউ একজন ব্যবহারকারীর তথ্য দিতে পারে, তবে পাবে ৭৫ ডলার। ১০ জনের বেশি কোনো দলের তথ্য দিতে পারলে পাবে ৩০০ ডলার।