সত্য বলাটা বিদ্রোহ হলে আমি বিদ্রোহী, কংগ্রেসে যোগ দিয়েই বললেন শত্রুঘ্ন সিনহা

কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে শত্রুঘ্ন সিনহা
কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে শত্রুঘ্ন সিনহা

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। আজ শনিবার তিনি রাজধানী দিল্লিতে ভারতীয় কংগ্রেসের সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে তিনি কংগ্রেসে নাম লেখান। এ সময় কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় শত্রুঘ্ন নাম উল্লেখ না করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমালোচনা করেন। তিনি দলটিকে ‘ওয়ান ম্যান শো ও টু ম্যান আর্মি’ বলে কটাক্ষ করেন।

শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, আমি তাদের (বিজেপি) বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে দলের চেয়ে দেশ বড়, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। কিন্তু আমি এসব বলায় ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা পেয়ে গেলাম। এর ফলে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে ‘যদি সত্য বলাটা বিদ্রোহ হয় তবে আমি একজন বিদ্রোহী।’

শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, পুরু দলটা (বিজেপি) চালায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস। একজন মন্ত্রীও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। আমরা বিজেপিতে দেখেছি, কীভাবে তিলতিল করে, গণতন্ত্র বদলে গেল একনায়কতন্ত্রকে।

৭২ বছর বয়সী বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা বিহারের পাটনা সাহিব এলাকা থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

বিজেপি সাবেক সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা যেদিন কংগ্রেসে যোগ দিলেন সেদিন দিনটি পালিত হচ্ছে বিজেপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসেবে।

নোটবাতিল নিয়েও বিজেপিকে একহাত নেন শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি নোটবাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থ কেলেঙ্কারি’ বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘একেবারে অর্থহীন সিদ্ধান্ত। কত মানুষ এর জন্য মারা গেলেন। মোদীজির মা-ই টাকা তোলার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। অথচ, আমাদের বোঝানো হচ্ছিল যে, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। যা করা হয়েছে, তা নাকি দেশের ভালোর জন্যই!’

গত ২৮ মার্চ রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শত্রুঘ্ন সিনহা। এরপর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন তিনি। নবরাত্রির দিন থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর নতুন যাত্রা শুরু হবে। বিহার কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক শক্তি সিং গোহিল টুইটারে জানিয়েছেন, কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার পর শত্রুঘ্ন সিনহার জনপ্রিয়তাকে গোটা দেশে কাজে লাগাতে চায় কংগ্রেস। তাঁকে তারকা প্রচারক হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা হচ্ছে।

কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, ‘রাহুল গান্ধী খুব উত্সাহী ও ইতিবাচক মানুষ। তিনি আমার প্রশংসা করে বলেন, আমি বিজেপিতে থেকেই বিদ্রোহ ও সমালোচনা করেছি। রাহুল আমার চেয়ে ছোট, কিন্তু আজ তিনি দেশের একজন জনপ্রিয় নেতা। আমি নেহরু-গান্ধীর পরিবারের সমর্থক। আমি মনে করি, তারাই দেশের নির্মাতা।’

শত্রুঘ্ন সিনহার বিজেপি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। তাঁকে নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে। এ সময় বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মেয়ে বলিউড তারকা সোনাক্ষী সিনহা। তাঁর মতে, শত্রুঘ্ন সিনহার এই সিদ্ধান্ত নাকি অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল।

সম্প্রতি মুম্বাইয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সোনাক্ষী সিনহা। তিনি বললেন, ‘বাবা সেই জে পি নারায়ণ, অটল বিহারি বাজপেয়ি, এল কে আদভানির সময় থেকেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। দলের একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে তাঁর যতটা শ্রদ্ধা প্রাপ্য, তিনি মোটেই তা পাননি। তাই আমার মনে হয়, বাবার হয়তো এই সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল।’

প্রায় তিন দশক ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। ২০১৪ সালে পাটনা সাহিব থেকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে নানা বিষয়ে তাঁর মতবিরোধ হয়। মাঝেমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর সমালোচনা করেছেন তিনি। ফলে এবার লোকসভা নির্বাচনে সেই কেন্দ্র থেকে রবিশংকর প্রসাদকে প্রার্থী করেছে বিজেপি।