মৌসমের জন্য কঠিন মৌসুম

মৌসম বেনজীর নূর।
মৌসম বেনজীর নূর।

মামা বরকত গণি খান চৌধুরী ছিলেন আধুনিক মালদার রূপকার। ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের প্রাণপুরুষ। ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন তিনি। মা রুবি নূর কংগ্রেস থেকে তিনবারের বিধায়ক। এই কংগ্রেসি পরিবারের সদস্য মৌসম বেনজীর নূর নিজেও কংগ্রেস থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এবার পাঞ্জা (কংগ্রেসের প্রতীক) ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাসফুল বেছে নিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মালদা জেলার দক্ষিণ মালদা আসন থেকে এবার লোকসভার ভোটের প্রার্থী মৌসম। তবে ভোটের এই মৌসুম এবার কঠিন হয়ে উঠছে মৌসমের জন্য।

পশ্চিমঙ্গের মুসলিম অধ্যুষিত প্রধান দুটি জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদা। মুর্শিদাবাদে রয়েছে লোকসভার তিনটি আসন। আর মালদহ দুটি আসন।

মালদহের আসন দুটি হলো—মালদহ উত্তর ও মালদহ দক্ষিণ।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর এই দুটি জেলা থেকে কংগ্রেসকে মুছে দেওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে নামেন। তবে এখনো মুছে দিতে পারেননি কংগ্রেসকে। 


মমতার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয় ২০১৪ সালে। ওই নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের তিনটি আসনের মধ্যে দুটিতে জয়ী হয় কংগ্রেস। আর একটিতে জয়ী হয় বামফ্রন্টের শরিক সিপিএম।

বিশ্বনাথ ঘোষ।
বিশ্বনাথ ঘোষ।



মালদহের দুটি আসনও যায় কংগ্রেসের থলিতে। দক্ষিণ মালদহে জেতেন আবু হাসেম খান চৌধুরী। উত্তর মালদহে জয়ী হন কংগ্রেসের মৌসম বেনজীর নূর। দুজনেই গণি খান চৌধুরীর বংশধর। গত নির্বাচনে এই জেলায় তৃণমূল একটি আসন না পাওয়ায় তারা কার্যত হতাশ হয়ে পড়ে। এই দুই জেলায় কংগ্রেস ভাঙার খেলা শুরু করে তারা।

কংগ্রেস ভাঙার খেলায় সফল হয় তৃণমূল। মালদা উত্তর আসনের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজীর নূরকে তৃণমূল তাদের দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়। মৌসম সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়ে পেয়ে যান নির্বাচনের টিকিট।

গত নির্বাচনে মৌসম পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের নেতা খগেন মুর্মু। তিনি পেয়েছিলেন ৩ লাখ ২২ হাজার ৯০৪ ভোট। তৃতীয় হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র রায়। পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৩ ভোট। চতুর্থ হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুভাষকৃষ্ণ গোস্বামী। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ভোট।

এবার জেতার অভিপ্রায়ে খগেন মুর্মু যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।

দক্ষিণ মালদার এই পাটিগণিতকে সামনে রেখে এবার মাঠে নেমেছেন তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা। এই আসনে এবার লড়াই হবে চতুর্মুখী।

ঈশা খান চৌধুরী।
ঈশা খান চৌধুরী।

চার প্রার্থীর মধ্যে মৌসম বেনজীর নূর ও খগেন মুর্মু এবার মাঠে নেমেছেন দল বদল করে। কংগ্রেসের টিকিট নিয়ে মাঠে নেমেছেন গণি খান চৌধুরীর বংশধর ঈশা খান চৌধুরী। তিনি মালদহের তোতোয়ালির জমিদারবাড়ির সদস্য ও সাংসদ মৌসমের আত্মীয়। সিপিএম প্রার্থী করেছে সাবেক বিধায়ক ও সিপিএমের কৃষক সংগঠনের নেতা বিশ্বনাথ ঘোষকে।

কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ঘুরছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। কখনো গরুর গাড়িতে, আবার কখনো পায়ে হেঁটে। কখনো নিজে গ্রামের মাঠে গিয়ে হাল নিয়ে চাষ করছেন কৃষকের সঙ্গে। কখনো ভোটারের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার চালাচ্ছেন।

কংগ্রেস বলেছে, মৌসম বেইমানি করেছেন। তিনি বিশ্বাসঘাতক। এবার তাঁকে ছুড়ে ফেলে দেবেন মালদহের ভোটারেরা।

খগেন মুর্মু।
খগেন মুর্মু।



মৌসমের হিসাব, তিনি গতবার জিতেছেন, তাই পাচ্ছেন কংগ্রেসের ভোট। আর তৃণমূলের ভোট তো আছেই। তাঁকে কে আটকায়!

বিজেপি মনে করছে, গত নির্বাচনে খগেন মুর্মু দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তাঁর ভোটের সঙ্গে বিজেপির ভোট যোগ হলে জয় নিশ্চিত।

সিপিএম প্রার্থী বলছেন, এবার আর মানুষ তৃণমূল বা বিজেপিতে ঝুঁকছে না। দুটি দলকেই সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে মনে করছে মানুষ। গত নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থী খগেন মুর্মু দ্বিতীয় হয়েছিলেন। রয়েছে তাঁদের দলের প্রচুর ভোট। কংগ্রেস ও বিজেপির বেশ কিছু ভোট তাদের দিকে আসছে। তাই তারা তো জয়ের আশা করতে পারেন?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, তৃণমূল ও বিজেপি যেভাবে দলবদল করা প্রার্থীদের নিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছে, বাস্তবতা সেরকম নাও হতে পারে।