দুই দুর্গ রক্ষায় মরিয়া তৃণমূল, জিততে চায় বিজেপি

পরেশ চন্দ্র অধিকারী, নিশীথ প্রামাণিক, দশরথ তিরকে, গোবিন্দ রায়, জন বারলা ও মিলি ওরাওঁ
পরেশ চন্দ্র অধিকারী, নিশীথ প্রামাণিক, দশরথ তিরকে, গোবিন্দ রায়, জন বারলা ও মিলি ওরাওঁ

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার আসন নিয়ে শঙ্কায় তৃণমূল। এই দুই আসন বর্তমানে তৃণমূলের দখলে থাকলেও গত কয়েক বছরে বিজেপির বেশ উত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় উঠেও এসেছে, এই আসন দুটি এবার জিততে পারে বিজেপি। আর তাই আসন্ন লোকসভায় এই দুই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার চলে যায় তৃণমূলের হাতে। আগে এই আসন দুটি ছিল বাম দল ফরোয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপির হাতে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সাবেক বামপন্থী নেতাদের অনেকে যোগ দেন তৃণমূলে।

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা গেছে, এই দুটি এলাকায় বিজেপির উত্থানের ছবি। সম্প্রতি এই আসন এলাকায় প্রধানমন্ত্রী মোদি জনসভা করে দেখিয়ে দিয়েছেন বিজেপির শক্তি কত। প্রধানমন্ত্রী জনসভায় বলেন, এই জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে কারা জিততে চলেছে এখানে? বিজেপির মনে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে এবার তারাই পেতে যাচ্ছে আসন দুটি। আর তাই লড়াইটা হবে তৃণমূলের আসন রক্ষার আর বিজেপির জয়ের চেষ্টার।

কোচবিহারকে বলা হয় ‘রাজার শহর’। এই কোচবিহারে ছিল ৫১টি বাংলাদেশের ছিটমহল। সেই ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। আবার এই কোচবিহার ছিল বাম দল ফরোয়ার্ড ব্লকের ঘাঁটি। সেই ঘাঁটি ভেঙে দিয়েছেন মমতা। ফরোয়ার্ড ব্লকের অনেক নেতাকে নিয়েছেন তাঁদের দলে। গত নির্বাচনে এই আসনে জিতেছিলেন তৃণমূলের রেণুকা সিনহা। ৮৭ হাজার ১০৭ ভোটের ব্যবধানে। রেণুকা পেয়েছিলেন ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৯ ভোট। আর তাঁর নিকটতম প্রার্থী ফরোয়ার্ড ব্লকের দীপক কুমার রায় পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯২ ভোট। বিজেপির প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন পেয়েছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৫৩ ভোট।

এবার এই আসনে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের নেতা পরেশ চন্দ্র অধিকারী। পরেশ চন্দ্র ছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের দীর্ঘদিনের নেতা। ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে চারবার তিনি বিধায়ক হয়েছিলেন। বামফ্রন্টের আমলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রীও ছিলেন। ছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকও। এরপরেই তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। টিকিট পেয়ে যান এবার লোকসভা ভোটের।

এই আসনে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের। এলাকার দোর্দণ্ড প্রতাপের এই নেতা কোচবিহারের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত বছর তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। পেয়ে যান এ বছর লোকসভা নির্বচনে লড়ার বিজেপির টিকিট।

এই আসনে আরও লড়ছেন বামফ্রন্টের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক নেতা গোবিন্দ রায়। গোবিন্দ রায় এখনো ফরোয়ার্ড ব্লক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আর কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন এক শিক্ষিকা পিয়া রায় চৌধুরী।

অন্যদিকে চা-বাগান এলাকা আলিপুরদুয়ার আসনে এবার লড়ছেন তৃণমূলের দশরথ তিরকে। এই দশরথ তিরকে ছিলেন বাম দল আরএসপির নেতা। ছিলেন বাম সরকারের পূর্ত দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীও। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন এবং পেয়ে যান লোকসভায় লড়ার টিকিট। জয়ীও হন এই আসনে। তবে মাত্র ২১ হাজার ৩৯৭ ভোটের ব্যবধানে। তিরকে পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৫৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রার্থী আরএসপির মনোহর তিরকে পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৬ ভোট। আর বিজেপির প্রার্থী বীরেন্দ্র বরা পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫৭ ভোট। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে অবশ্য কংগ্রেস হয়েছিল চতুর্থ। কোচবিহারের প্রার্থী কেশব চন্দ্র রায় পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ৫৪০ ভোট আর আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস প্রার্থী জোশেপ মুন্ডা পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৭১৮ ভোট।

এবার এই আলিপুরদুয়ার আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে এলাকার চা-বাগান শ্রমিকদের নেতা জন বারলাকে। বারলা বিজেপির চা ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ২০১৭ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। এ বছরই পেয়ে গেছেন বিজেপির লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী টিকিট।

এবার বামফ্রন্টের হয়ে আরএসপির সাবেক সাংসদ মনোহর তিরকের কন্যা মিলি ওরাওঁ মনোনয়ন পেয়েছেন। পেশাগতভাবে তিনি একজন স্কুলশিক্ষিকা। আর এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে এলাকার আরেক স্কুলশিক্ষক মোহনলাল বসুমাতাকে। বসুমাতা কংগ্রেস পরিবারের সন্তান। বাবা, ঠাকুরদাদা কংগ্রেস করতেন। এই প্রথম নির্বাচনে দাঁড়ালেন তিনি।

আগামী বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দিনে পশ্চিমবঙ্গের এই আসনে ভোট হবে। রাজ্যের জনগণ প্রথম দিনের এই দুই দলের লড়াই দেখার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এই অপেক্ষার পালা শেষ হবে ২৩ মে, ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিন।