উজান আসাম দখলে মরিয়া কংগ্রেস-বিজেপি

আসামে বিজেপিকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের ভোট প্রচার। ছবি: প্রথম আলো
আসামে বিজেপিকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের ভোট প্রচার। ছবি: প্রথম আলো

আসাম শুধু প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নয়, এ রাজ্যের রাজনীতি ও সংস্কৃতি ভারতের জন্য সব সময়ই মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রয়াত সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মস্থান এই উজান আসামেই। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং তাঁর আগে টানা ১৫ বছর কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের রাজনৈতিক উত্থান এই উজান আসামেই।
জঙ্গি সংগঠন উলফা, ছাত্রসংগঠন আসু, আঞ্চলিক দল অসম গণপরিষদেরও আঁতুড়ঘর এই উজান আসামই। আর প্রথম দফায় ১১ এপ্রিল এই উজান আসামেরই পাঁচ আসন দিয়ে শুরু হচ্ছে আসামের লোকসভা ভোট

প্রথম দফার সরব ভোট প্রচার শেষ আজ বুধবার। সব দলই প্রচারে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে এসেছে। পাঁচটি আসনের মধ্যে গতবার কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র একটি। কলিয়াবোর আসনে জিতেছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের ছেলে গৌরব। বাকি চারটি আসনই ছিল বিজেপির দখলে। এবার বিজেপি-অগপ জোট হয়েছে। বিজেপি চারটি আসনেই লড়ছে। একটিতে অগপ। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এখানকার লখিমপুর আসন থেকে জিতে ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। পরে অবশ্য আসনটি ছেড়ে দিয়ে বিধানসভা ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন। রাজ্যের ২ কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৬০৪ জন ভোটারের মধ্যে উজান আসামে ভোটার রয়েছেন ৭৫ লাখ ১৬ হাজার ২৮৪ জন।
ব্রহ্মপুত্র চীন থেকে অরুণাচল প্রদেশ হয়ে এই উজান আসাম দিয়েই রাজ্যে ঢুকছে। ফি বছর বন্যা এখানকার নিত্যসঙ্গী। বিজেপি অবশ্য ২০১৪ সালে লোকসভা এবং ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হবে। কিন্তু হয়নি। বললেন তেজপুরের রূপক শর্মা। স্থানীয় ব্যবসায়ী। রূপকের কথা, ‘আসামের বন্যা নিয়ে রাজনীতিই হয়। কাজের কাজ কিছু হয় না। ভোট আসে, ভোট যায়। আমরা থাকি সমস্যাতেই।’ তবে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। দুটি বিশালাকার সেতু হয়েছে। উজান আসামেই ছুটে আসছে দূরপাল্লার ট্রেন। আর এই উন্নয়ন নিয়ে রয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপির পাল্টাপাল্টি দাবি।

আপাতশান্ত ব্রহ্মপুত্রের বর্ষায় ভয়ংকর রূপ নিয়ে চিন্তা কমছে না আসামবাসীর। ছবি: প্রথম আলো
আপাতশান্ত ব্রহ্মপুত্রের বর্ষায় ভয়ংকর রূপ নিয়ে চিন্তা কমছে না আসামবাসীর। ছবি: প্রথম আলো

আসাম অরুণাচল সড়কে দৌলা-সদিয়ায় উদ্বোধন হয়েছে ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা ভূপেন হাজারিকা সেতু। সদিয়া ভূপেন হাজারিকার জন্মভূমি। ধেমাজি আর ডিব্রুগড় জেলার মধ্যে রেল ও সড়ক যোগাযোগের জন্য উদ্বোধন ৪ কিলোমিটারের রেল-সড়ক সেতু। দুটিরই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই বিজেপি-জোটশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দের দাবি, ‘আসাম বা উত্তর–পূর্বাঞ্চলের জন্য মোদি সরকারই সবচেয়ে বেশি ভাবছে। তাই তাঁর আমলেই পূরণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন। তাই চাই আকৌবার (ফের আবার), মোদি সরকার’। মানতে নারাজ কংগ্রেস। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের দাবি, কংগ্রেসের আমলেই দুটি সেতুর কাজ শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘মোদি আরু সর্বায় শুধু মিছা কথা মাতে। অপপ্রচার আরু অপপ্রচার। হচা নহয়। (মোদি-সর্বানন্দ শুধু মিথ্যা কথাই বলেন। অপপ্রচার, পুরোটাই অপপ্রচার। সত্যি কথা নয়।’ আর কংগ্রেস এখানে ভোট প্রচারে ‘মিছা কথা’কেই ভোট প্রচারে হাতিয়ার করেছে বিজেপিকে ঘায়েল করতে।

তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে সিএবি (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল)। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম শরণার্থীদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে ফুঁসছে আসাম। উজান আসামে এবারের ভোটে এটাই ভাবাচ্ছে বিজেপিকে। তবে বিক্ষোভ মেটাতে চেষ্টার ত্রুটি নেই। প্রতিবাদী কণ্ঠগুলোর অনেককেই নিজেদের দলে টানতে সক্ষম বিজেপি। তবু গেরুয়া শিবির বেশ সমস্যায় উজান আসামে। আসামের শক্তিশালী ছাত্রসংগঠন আসুর প্রধান উপদেষ্টা সমুজ্জল ভট্টাচার্যের দাবি, ‘রাজ্যে মানুষ এবার ভোট দেবেন নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষার স্বার্থে।’ আসামে বেশ শক্তিশালী সংগঠন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির অখিল গগৈ বলছেন, ‘সিএবি–বিরোধীদের ভোটদানই প্রকৃত আসামপ্রেমীদের কর্তব্য।’ আর বিজেপির চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়ে তাঁদের জোট সঙ্গী অগপর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মহন্ত নিজেকে ভোট প্রচার থেকে দূরে সরিয়ে রেখে রাজ্যবাসীকে আবেদন জানিয়েছেন, ‘প্রকৃত সিএবি–বিরোধীদের ভোট দিন।’ নিজেদের শক্ত ঘাঁটি উজান আসামে তাই চিন্তায় গেরুয়া শিবির। আর পুরোনো ঘাঁটি ফের উদ্ধারে আশাবাদী কংগ্রেস। এখন দেখার ২৩ মে ভোট গণনায় শেষ হাসি কারা হাসেন।