আসামের ভোট প্রচারের শেষেও 'নাগরিকত্বের' প্রাধান্য

উত্তর–পূর্ব ভারতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়াটাকেই ভোটের বড় ইস্যু বানিয়ে তুলল বিজেপি। গতকাল সোমবারই দলের সর্বভারতীয় নির্বাচনী ইশতেহার ‘সংকল্পপত্র’ বিষয়টির উল্লেখ করে। আজ মঙ্গলবার বিজেপির আসাম রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানিয়ে দিলেন, তাঁরাও ক্যাবের (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) পক্ষে। এর জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ধন্যবাদও জানান তিনি। এই নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে আসামে। কংগ্রেস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, খিলঞ্জিয়াদের (ভূমিপুত্র) স্বার্থরক্ষায় তাঁরা ক্যাব চান না।

আজ শেষ হলো ভারতে প্রথম দফার সরব ভোট প্রচার। আসামে বিজেপির শরিক দল অসম গণপরিষদ (অগপ) এখনো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারই প্রকাশ করতে পারেনি। কারণ, ক্যাব নিয়ে তাদের মধ্যেকার বিরোধ। এমনটাই অভিযোগ কংগ্রেসের। অগপ অবশ্য নিজেদের ব্যস্ততাকেই এর জন্য দায়ী করছেন। দলের সভাপতি অতুল বরা মুঠোফোনে জানান, শিগগিরই প্রকাশিত হবে তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহার। গতকালই বিজেপি জানিয়ে দিয়েছে, ক্যাবকে তারা সরকার গড়লে কার্যকর করবে। আজ মঙ্গলবার গুয়াহাটি বিজেপির পার্টি অফিসে দলের রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস এর জন্য দিল্লির নেতাদের ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, উত্তর–পূর্বাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেই ক্যাবের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। বিরোধীরা মিথ্যা প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবি, উত্তর–পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের ভাষায় সংস্কৃতি ও সামাজিক অস্তিত্ব রক্ষার কথা উল্লেখ করে এই অঞ্চলকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁদের জাতীয় নেতারা।

তবে ক্যাব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের সহসভাপতি ভগীরথ করণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাব নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বিজেপি। হিন্দু বা মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কেই সমস্যায় ফেলতে চাইছে।’ তাঁর মতে, হিন্দুদের সঙ্গে প্রতারণা করে ভোটের বৈতরণি পার হতে চাইছে বিজেপি। সারা অসম ছাত্র সংস্থা বা আসু ফের সরব হয়েছে ক্যাবের বিরোধিতায়। একই ভূমিকায় অবতীর্ণ কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। সব মিলিয়ে আসামে ভোটের আগে ফের ক্যাব উঠে এল নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে। উন্নয়ন বা অন্য কোনো সমস্যা নয়, ফের নাগরিকত্ব আর বিদেশি (পড়ুন বাংলাদেশি) এবারও ভোটের বড় ইস্যু। বুঝিয়ে দিচ্ছেন শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা।

আসামে ভোট শুরু ১১ এপ্রিল। আজ বিকেল চারটায় শেষ হয় সরব প্রচার। রাজ্যের মোট ১৪টি আসনের মধ্যে ৫টি ভোট হবে প্রথম দফায়। দ্বিতীয় দফায় রয়েছে আরও ৫টি আসন। ভোট হবে ১৮ এপ্রিল। আর শেষ দফায় ৪ কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। ভোট গণনা আগামী ২৩ মে। বর্তমানে রাজ্যে বিজেপির ৭টি ও কংগ্রেসের ৩টি আসন দখলে আছে। বাকি ৪টি আসন আঞ্চলিক দলগুলোর দখলে।