লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়িতে কঠিন লড়াই

বিজয়চন্দ্র বর্মণ ও ভগীরথ রায়। চিত্রগ্রাহক: ভাস্কর মুখার্জি।
বিজয়চন্দ্র বর্মণ ও ভগীরথ রায়। চিত্রগ্রাহক: ভাস্কর মুখার্জি।

ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ আসনের নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ গতকাল বৃহস্পতিবার মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এদিন ২০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯১টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল পশ্চিমবঙ্গের দুটি আসন—আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার।

৭ দফায় অনুষ্ঠেয় লোকসভার দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হবে ১৮ এপ্রিল। এদিন ভোট নেওয়া হবে ১৩টি রাজ্যের ৯৭টি আসনে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আসন—দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ এবং তিস্তাপাড়ের চা–বাগান এলাকা জলপাইগুড়ি। দার্জিলিংয়ের বর্তমান সাংসদ বিজেপির সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, রায়গঞ্জের সিপিএমের মহম্মদ সেলিম ও জলপাইগুড়ির তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়চন্দ্র বর্মণ।

জলপাইগুড়ির আসনটি তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত। জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে চা–বাগান। এই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী।

এবার এই জলপাইগুড়ি আসন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। কারণ, আসনটি ছিল মূলত বাম দল সিপিএমের হাতে। চা–বাগানের শ্রমিকেরা ছিলেন বাম দলের সমর্থক। ফলে ১৯৯৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসনের সাংসদ ছিলেন সিপিএমের নেত্রী মিনতি সেন ও মহেন্দ্র কুমার রায়। ২০১১ সালে মমতা ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে আসনটি চলে যায় তৃণমূলের হাতে। সাংসদ হন তৃণমূলের এক শিক্ষাবিদ নেতা বিজয়চন্দ্র বর্মণ। তিনি কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ছিলেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিজয়চন্দ্র বর্মণ ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৩ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের মহেন্দ্র কুমার রায় পান ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৬৭ ভোট। আর বিজেপির প্রার্থী সত্যলাল সরকার পান ২ লাখ ২১ হাজার ৫৯৩ ভোট। কংগ্রেসের প্রার্থী সুখবিলাশ বর্মা পান ৮৭ হাজার ৫৮৮ ভোট। তৃণমূলের প্রার্থী বিজয়চন্দ্র জেতেন ৬৯ হাজার ৬০৬ ভোটের ব্যবধানে।

এবার এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে বিদায়ী সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণকেই। সিপিএমের প্রার্থী করেছে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভগীরথ রায়কে। ভগীরথ রায়ের প্রচুর সুনাম রয়েছে এলাকাজুড়ে। একজন বামপন্থী কর্মী হিসেবে এলাকায় রয়েছে তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। এই আসনে বিজেপির প্রার্থী হলেন এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক জয়ন্ত রায়। তাঁরও রয়েছে প্রচুর সুনাম। বিজেপির মহিলা সংগঠনের রাজ্য নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় জলপাইগুড়ি এসে বলেছেন, এই জনপ্রিয় চিকিৎসক এবার জিতবেন। তাঁকে এবার গ্রহণ করবে জলপাইগুড়ির মানুষ।

আর কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বিশিষ্ট চা–শ্রমিকনেতা মণিকুমার ডারনাল। ডারনালও বলেছেন, চা–শ্রমিকেরা বারবার বঞ্চিত হয়ে এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা এবার ভোট দেবেন কংগ্রেসকেই। তাই এই আসনে কংগ্রেসের জয়কে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, চতুর্মুখী লড়াইয়ে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীরও।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এবার আর সহজে জিততে পারছে না তৃণমূল। কারণ, এবার নির্বাচন হচ্ছে কড়া নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে। ফলে এর আগের নির্বাচনের মতো জোর করে ভোটকেন্দ্র দখল বা জালভোট দিয়ে ভোট নেওয়া অতটা সম্ভব না–ও হতে পারে। তাই বলা চলে, জলপাইগুড়ি আসনে এবার তীব্র লড়াই হবে। আর এই লড়াই হবে চতুর্মুখী।

এবার চার দলই নানা অঙ্ক কষে মাঠে নেমেছে। বিজেপি, বাম দল এবং কংগ্রেস বলেছে, নির্বাচন অবাধ হলে এবার তাদের দলই জিতবে। এই আসনের নির্বাচন আগামী ১৮ এপ্রিল। তাই তিস্তাপাড়ের লোকজন এখন অপেক্ষা করছেন ২৩ মে পর্যন্ত। কারণ, ওই দিনই প্রকাশিত হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩ আসনের ফলাফল।