শুরু হলো ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন

জার্মানিতে ইইউ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোকে রুখে দিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ছবি: রয়টার্স
জার্মানিতে ইইউ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোকে রুখে দিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপের ২৮টি দেশের প্রায় ৪০ কোটি জনগণ আবারও পাঁচ বছরের জন্য তাঁদের ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবেন। নবম ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের নানা দেশজুড়ে রঙিন পোস্টার পড়েছে। আলোচনা হচ্ছে কোন দলীয় জোট এবার ইউরোপীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হবে।

ইইউ জোটের ২৮ সদস্য দেশের ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচন নিয়মের রেওয়াজ অনুযায়ী ২৩-২৬ মে, মোট চার দিন ধরে বিভিন্ন দেশে ভোট গ্রহণ চলবে। আজ বৃহস্পতিবার ইইউ পার্লামেন্টের নির্বাচন হবে যুক্তরাজ্য ও হল্যান্ডে। কিছু দেশে শুক্রবার ও শনিবারে ভোট অনুষ্ঠিত হলেও বেশির ভাগ দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ২৬ মে রোববার।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে ইউরোপের কট্টর জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে অর্থায়নের জন্য মস্কোকে অভিযুক্ত করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেন, কিছু বৈদেশিক শক্তি ইইউ জোটে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই প্রথম ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইউরোপের কট্টর জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে অর্থায়নের জন্য রাশিয়া সাহায্য করছে। এ ছাড়া ইইউ–বিরোধী নানা রকম ষড়যন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সচিব ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননকেও তিনি দায়ী করেছেন। তিনি ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেত্রী মেরিন লে পেন এবং ইতালির জাতীয়তাবাদী দল লেগা নর্ড দলের নেতা মাটেয়ো সালভানির সঙ্গে রাশিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে অভিযোগ করেন।

গত সপ্তাহে জার্মানির দুটি স্বনামধন্য পত্রিকা ডের স্পিগেল ও সুদ ডয়েচে জাইটুং গোপনে ধারণ করা ভিডিওটি তাদের অনলাইন সংস্করণে খবরসহ প্রকাশ করে। অবৈধ রাশিয়ান পুঁজি অস্ট্রিয়াতে ব্যবহার করতে দেওয়ার এই ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর অস্ট্রিয়ার কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টির প্রধান ও দেশটির সহকারী চ্যান্সেলর হাইঞ্জ ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রাখেসহ দলের অন্যরা পদত্যাগে বাধ্য হন। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছে, ইইউ জোটকে অস্থিতিশীল করার জন্য রাশিয়া ইউরোপের কট্টর জাতীয়তাবাদী দলগুলোর শক্তি বৃদ্ধির স্বার্থে অর্থায়ন করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিনটি প্রধান ইনস্টিটিউটের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অন্যতম। এ ছাড়া বাকি দুটি হলো ইউরোপীয় কমিশন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বা পার্লামেন্টের সদস্যরা মূলত জোটভুক্ত দেশগুলোর জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট জোটের বিভিন্ন বিষয়ে আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করে। জোটের বাজেটের ক্ষেত্রেও ইইউ পার্লামেন্টে সম্মতির প্রয়োজন হয়। ইউরোপীয় কমিশন জোটের প্রশাসনিক বিষয়াদি এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকারগুলোর প্রতিনিধি–সংবলিত কমিটি। ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরাই তাঁদের পছন্দমতো ভোট দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মোট ৭৫১ আসন রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সর্বোচ্চ ২১৯টি আসন পেয়েছিল ইউরোপের ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ধারার জোট এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮৭টি আসন পেয়েছিল সামাজিক গণতান্ত্রিকদের জোট। এ ছাড়া পরিবেশবাদী সবুজ দলের জোট ৫২, লিবারেল গণতান্ত্রিক জোট ৬৯, বামপন্থী দলগুলোর জোট ৫২, ইইউ–বিরোধী ডানপন্থীদের জোট ৪২, কট্টরবাদী ইউরোপীয় জাতিগুলোর জন্য মুক্তি আন্দোলন ৩৬ এবং জোটবিহীন নির্বাচিত প্রতিনিধি ২০ জন।

ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ ইউরোপের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে রুখে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ মিছিল করছে। শুধু জার্মানির বিভিন্ন শহরে ১৫০টি সংগঠনের ডাকে দেড় লাখ মানুষ জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদী দলের নেতারাও ইতালির মিলান শহরে তাঁদের নির্বাচিত করার জন্য একযোগে আহ্বান জানিয়েছেন।