তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে মোদি সরকার?

তিস্তা নদী। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তিস্তা নদী। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আবারও উঠে এসেছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ইস্যুটি। বলা হচ্ছে, মোদি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে। এ লক্ষ্যে তৎপরতাও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ তো বরাবরই এই চুক্তি সম্পাদনে তাগাদা দিয়ে আসছে। আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনের জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এগোতে চাইছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি এমন আলোচনাও হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবারও কি বাধা দেবেন, নাকি সবুজ সংকেত দেবেন?

নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। ওই সময় মোদি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিও সম্পাদন করতে। কিন্তু সেই চুক্তি সম্পাদনে তীব্র বাধা দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার কথা ছিল, উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে রাজি নন। এ কারণে মমতার বাধায় আর চুক্তি সম্পাদন করা যায়নি।

মোদি ক্ষমতায় আসার আগে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারও চেষ্টা করেছিল তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বারবার বৈঠক করেছিল মমতা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গে। কিন্তু তখনো বাধা দেন মমতা। ওই সময় বিজেপিও বাধা দেয়। এ কারণে কংগ্রেসের ইউপিএ সরকারের আমলে আর সম্পাদন হয়নি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি।

এবার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকার নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনের জন্য ফের তৎপর হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার কলকাতার বাংলা দৈনিক এই সময় এক খবরে বলেছে, ‘ভারতের মোদি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এবার তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে। এই লক্ষ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠে এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে, এবার কি মমতা এই চুক্তি সম্পাদনে কেন্দ্রীয় সরকারকে সবুজ সংকেত দেবেন, নাকি আবার বাধা দেবেন?’

তিস্তা ব্যারেজ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তিস্তা ব্যারেজ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

খবরে বলা হয়, বাংলাদেশও চাইছে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদন হোক। তা ছাড়া উপমহাদেশের রাজনীতির নিরিখে ভারত সরকার চাইছে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের কারণে ভারত সরকারের ‘লুক ইস্ট’ নীতিতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সম্প্রতি দিল্লিতে এসে বৈঠক করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের আকস্মিক মৃত্যুতেও ওই দিন আসাদুজ্জামান-অমিত শাহর বৈঠক বাতিল করা হয়নি। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিস্তার পানি কতটা দরকার বাংলাদেশের, সে কথাও বলেছিলেন অমিত শাহকে। অমিত শাহও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনেছেন মন দিয়ে।

এই সময়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। সূত্রমতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দূত হিসেবে জয়শঙ্কর কথা বলবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেখান থেকে ফিরে এসে জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে কী আলোচনা হলো, তা অবগত করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনের জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এগোতে চাইছে।

তবে এ প্রশ্নও জোরের সঙ্গে উঠেছে, এবারও কি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই চুক্তি সম্পাদনে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন? যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে মমতার সঙ্গে কথা বলবে। তাঁকে বোঝাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা এ নিয়ে কথা বলব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে। আমরা আশাবাদী, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট সব স্তর থেকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা পাব।’