পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি-বিরোধী যৌথ আন্দোলনে নামছে কংগ্রেস-সিপিএম

কলকাতায় কংগ্রেসের রাজ্য দপ্তরে সিপিএম ও কংগ্রেসের নেতারা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতায় কংগ্রেসের রাজ্য দপ্তরে সিপিএম ও কংগ্রেসের নেতারা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে যৌথ আন্দোলনে নামছে কংগ্রেস ও সিপিএম। দল দুটি দুর্গাপূজার পর রাজ্যে এনআরসিসহ বিজেপি ও তাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করেছে।

সিপিএম তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু গতকাল সোমবার বিকেলে কলকাতায় কংগ্রেসের রাজ্য দপ্তর বিধান ভবনে হাজির হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁদের অভ্যর্থনা জানান কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র। এই নেতারা বিধান ভবনে মহাত্মা গান্ধীর ওপর আয়োজিত একটি চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এরপর সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা আলোচনায় বসেন।

সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাদের আলোচনায় উঠে আসে রাজ্যে এনআরসি নিয়ে আতঙ্কের কথা, সাম্প্রদায়িকতা ও মমতার দলের গণতন্ত্র হরণের কথা। সব কথা শেষ হওয়ার পর দুই নেতা ঠিক করেন, এবার পুজোর পর কংগ্রেস ও সিপিএম এনআরসির বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। জোরদার করবে এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন। প্রচার চালাবে যাতে এনআরসি নিয়ে মানুষ কোনোক্রমেই আতঙ্কগ্রস্ত এবং বিভ্রান্ত না হন। তাঁরা এই রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও তাঁরা প্রচার চালাবেন।

দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে বিমান বসু ফিরে আসেন তাঁর দপ্তর আলীমুদ্দিনের সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্যও নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করতে এই দুই দল বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছে। তবে সেসব বৈঠক হয়েছে কখনো দুই দলের নেতাদের বাসভবনে। আবার কখনো দলের গ্রন্থাগারে। তবে দুই দলের নেতারা সাম্প্রতিক অতীতে কেউ কারও দলীয় দপ্তরে গিয়ে বৈঠক করেননি। এবার সেটাই হলো।

এবারের লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেস ও সিপিএম—এই দুই দলকে কাছাকাছি এনেছে। যদিও তারা লোকসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতার উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি। বরং লোকসভা নির্বাচনে তারা পৃথকভাবে লড়েছে। ফল হয়েছে বিজেপির একচ্ছত্র বিজয়। কংগ্রেস দুটি আসন পেলেও সিপিএমের ঝুলি ছিল শূন্য। তৃণমূলও জোর ধাক্কা খেয়েছে বিজেপির কাছে। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসন একাই জেতার সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তাঁর দল পেয়েছে ২২টি আর বিজেপি পেয়েছে ১৮টি আসন।

লোকসভা নির্বাচনের পর এই দুই ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বুঝতে শুরু করে, বিজেপিকে ঠেকাতে গেলে তাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বিকল্প নেই। নইলে বিজেপির উত্থান ঠেকানো যাবে না। মমতাও এখন শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

গতকালের বৈঠকের পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলতে শুরু করেছেন, রাজনীতিতে শত্রু বলে কোনো কথা নেই। আজ যে শত্রু, কাল সে মিত্র হতে পারে। এই অঙ্ক কষেই এবার মাঠে নামছে কংগ্রেস-সিপিএম। লক্ষ্য একটাই—বিজেপিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা। এ ছাড়া তৃণমূল নেত্রী মমতার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া; রাজ্যে শাসক দলের গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া; রাজ্যকে একটি গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়েই এগোনোর কথা বলেছে সিপিএম-কংগ্রেস।