এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিপজ্জনক অস্ত্রবাজি

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র অস্ট্রেলিয়া ও জাপান সম্প্রতি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই সঙ্গে আরও আগ্রাসীভাবে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলেছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় চীনের দ্রুত সামরিক বিস্তার থেকে নিজেদের রক্ষায় দেশ দুটির নেওয়া পদক্ষেপকে ‘গেম-চেঞ্জার’ বলা হচ্ছে।

গত জুন মাসের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া সরকার ঘোষণা দেয়, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে আগামী এক দশকে প্রতিরক্ষা ব্যয় ৪০ শতাংশ বাড়ানো হবে। এই ঘোষণা অধিকাংশ পর্যবেক্ষককে অবাক করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, করোনা মহামারি-পরবর্তী বিশ্ব হবে আরও ‘ভঙ্গুর’, আরও বিপজ্জনক ও আরও বিশৃঙ্খল। সেই কারণেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অংশীদার অস্ট্রেলিয়া। তাই অস্ট্রেলিয়ার নতুন কৌশলগত চিন্তাভাবনা দুই দেশের সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, অস্ট্রেলিয়ায় মার্কিন সেনাঘাঁটি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনা এখনো দেশ দুটির প্রধান যৌথ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। আর যখন চীনের আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিহত করার মতো কৌশলগত লক্ষ্য আসে, তখন তা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত সীমান্তে চীনের সেনা উপস্থিতি বাড়ানো অনেক বিশ্লেষককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে যে চীন যুদ্ধের মতো কোনো সামরিক পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে। চীনের এসব পদক্ষেপের কথা মাথায় রেখেই অস্ট্রেলিয়া ধীরে ধীরে সামরিক বাহিনীকে আধুনিক করে তুলছে। তারা ফ্রান্স থেকে আধুনিক সাবমেরিন আনছে, যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রথম চালান ইতিমধ্যে পেয়েও গেছে। পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করছে।

অস্ট্রেলিয়ার কাছে যুদ্ধজাহাজবিধ্বংসী আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধবিমান বা জাহাজ থেকে ছোড়া যায়। এটির এতই ক্ষমতা যে ৩৭০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা যুদ্ধজাহাজে আঘাত হেনে তা ডুবিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া সমুদ্রতলে বিশেষ জাল বসানোর কাজও চলছে। এই জাল সাবমেরিন ও নৌযানের আগমন সম্পর্কে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে তথ্য পাঠাবে।

এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান প্রতিরক্ষার জন্য সব সময়ই মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরশীল। কিন্তু সেই নির্ভরতা কমিয়ে আনছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি দেশটি নিজেদের মতো করে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। দেশটির এই পদক্ষেপকে ‘গেম-চেঞ্জার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাপান টানা আট বছর ধরে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করে চলেছে। এখন দেশটির সামরিক বাজেট ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিশাল অর্থ দিয়ে সামরিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কাজ করছে জাপান সরকার। তারা বিমানবাহিনীকে আধুনিক করছে, যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ৩৫ ও আগাম সতর্ক দেওয়া যুদ্ধবিমান কিনছে। শুধু চীনই নয়, উত্তর কোরিয়াও জাপানের জন্য বড় হুমকি। পিয়ংইয়ং নতুন করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করায় তা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে টোকিওর জন্য। প্রতিবেশী দেশগুলোর আক্রমণ প্রতিহত করতে উপকূল অঞ্চলে বিশাল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলারও চিন্তা করছে জাপান। যদিও জুনে এজিস আশোর নামে একটি প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়। তবে জাপান সরকার প্রতিরক্ষাবলয় গড়ে তোলার আশা এখনো ছাড়েনি বলে জানা যাচ্ছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় মার্কিন যুদ্ধজাহাজের টহল বেড়েছে। মাঝেমধ্যেই মিত্রদের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতও সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। ফলে অঞ্চলটি এখন অস্ত্র প্রতিযোগিতার বিপজ্জনক ময়দান হয়ে উঠেছে।