প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক নিহত

হামলায় রক্তাক্ত প্যারিস
হামলায় রক্তাক্ত প্যারিস

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অন্তত ছয়টি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এসব হামলায় আরও কয়েক শ মানুষ আহত হন। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসী হামলার এসব ঘটনা ঘটে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি অনলাইনের।

হামলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ জরুরি অবস্থা জারি করেন। একই সঙ্গে দেশটির সব সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দেশের নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি দেড় হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ।

বিবিসি অনলাইন এবং বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্স বলছে, হামলায় অন্তত ১২০ জন নিহত হয়েছেন। তবে সিএনএন দাবি করে, ওই হামলায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

হামলার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে। এখানে কনসার্ট দেখতে যান কয়েক হাজার মানুষ। এরই মধ্যে অন্তত তিন হামলাকারী হলে ঢুকে কালাশনিকভ রাইফেলের মতো আগ্নেয়াস্ত্র থেকে নির্বিচারে গুলি ছুড়তে শুরু করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

পরে হামলাকারীরা ওই হলে অনেককে জিম্মি করলে পুলিশ ভারী অস্ত্রসহ সেখানে অভিযান চালায়। এতে হামলাকারীরা নিহত হয়। একজন সাংবাদিকের উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘তারা অন্ধের মতো গুলি ছুড়ছিল। যে যেদিকে পারে, দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করে। আমি বহু মানুষকে গুলি খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছি।’

অন্যদের মতো জুলিয়েন পেরেজও কনসার্ট উপভোগ করতে গিয়েছিলেন ওই হলে। তিনি বলেন, ‘এটি ছিল একটি রক্তস্নান।’ তাঁর ভাষ্য, হামলা যখন শুরু হয়, তখন তিনি ছিলেন মঞ্চের ওপরের অংশে। হলে ঢুকে পড়ে দুই সন্ত্রাসী। ‘খুব শান্ত, খুব সংকল্পবদ্ধ’ ছিল তারা। এরপর নির্বিচারে গুলি ছুড়তে শুরু করে। কালো পোশাক পরা থাকলেও তাদের মুখে মুখোশ ছিল না। তাঁর দাবি, তিনি এক হামলাকারীর মুখ দেখেছেন। ওই হামলাকারী তরুণ। বয়স সর্বোচ্চ ২৫ বছর হতে পারে। অন্য সব সাধারণ ছেলের মতো ছিল সে। তবে হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।

অন্য হামলাগুলো হয়েছে কয়েকটি বার ও রেস্তোরাঁয়। এর মধ্যে স্টেডিয়ামের কাছের ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব হামলায় কম্বোডীয় একটি রেস্তোরাঁয় ১৪ জন, একটি পানশালার বাইরে ১৯ জন, একটি অ্যাভিনিউয়ে চারজন এবং নগরের বাইরে এক স্থানে চারজন নিহত হয়েছেন।

তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এএফপি বলছে, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অন্তত আট হামলাকারী নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজন ছিল আত্মঘাতী। বাটাক্লঁ কনসার্ট হলেই নিহত হয় চার হামলাকারীর। তাদের মধ্যে তিনজন নিজেদের সঙ্গে রাখা বোমায় এবং একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। অন্য তিনজন হামলাকারীর মৃত্যু হয়েছে জাতীয় স্টেডিয়ামের কাছে। একজন প্যারিসের রাস্তায় গুলিতে নিহত হয়েছে।

.
.

জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। আজ সকালে অনলাইনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইএস দাবি করে, ‘বিস্ফোরক কোমরবন্ধনী পরে ও অস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের আট ভাই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সফল হামলা করেছে।’
এর আগে এ হামলার ঘটনায় আইএসকে দায়ী করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন দেশ ফ্রান্সের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট এ হামলা চালিয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ বিশ্বনেতারা হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তিদের বিচারে দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো।