অনিবার্য কারণে...

পরিবার নিয়ে এমন করে বেড়ানোর পরিকল্পনা হঠাৎ বাতিল হলে মেনে নেওয়া ভালো। ছবি: অধুনা
পরিবার নিয়ে এমন করে বেড়ানোর পরিকল্পনা হঠাৎ বাতিল হলে মেনে নেওয়া ভালো। ছবি: অধুনা

গত বছরের ঈদের কথা। ঈদের পরদিন ১২ বছরের আহনাফ খালার বাড়ি যাবে, সেই উত্তেজনায় খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে যায়। বাড়ির সবার আগে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ডেকে তোলে সে। সবাইকে ডাকার পর জানতে পারে, মধ্যরাতে তাদের এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। এ কথা শুনে আহনাফের মন ভেঙে পড়ে। ট্রেনে করে যমুনা সেতু, নদী আর সবুজ পরিবেশ দেখার ভীষণ শখ ছিল তার। শেষ পর্যন্ত ঈদের আনন্দ প্রায় মাটি হয়ে যায় আহনাফের। শুধু কি ছোটদের বেলাতেই এমন ঘটনা ঘটে? বড়দেরও এমনটা হয়।
ফয়সাল আহমেদ ও আকতার সালমা দম্পতি ঈদের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই চট্টগ্রামে ঘুরতে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ছিল অন্য বন্ধু দম্পতি মাহবুব হাসান-টুম্পা হাসানের। ঈদের পরদিন ঢাকা থেকে ট্রেনে যাবেন চট্টগ্রাম। সে জন্য ক্যামেরা জোগাড় করা, হোটেল বুকিং, ট্রেনের টিকিটসহ আরও কত কিছুই না ঠিক ছিল তাঁদের। ঈদের রাতেই বাবার অসুস্থতার কারণে ফয়সাল-সালমা দম্পতি হাসপাতালে ছোটাছুটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অসুস্থ বাবাকে রেখে তো আর ঘুরতে যাওয়া যায় না!
অনিবার্য কারণে এমন পরিস্থিতি শুধু ঈদে নয়, যেকোনো সময়ই হতে পারে। পরিকল্পনা আর প্রস্তুতির পর আকস্মিক কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনায় সেই পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিতে হয়। মানুষের জীবনে তো দুর্ঘটনা আর বলেকয়ে আসে না! তবে এসব পরিকল্পনার সঙ্গে কিন্তু অর্থ, সময় আর সম্পর্ক জড়িত। সবচেয়ে বড় বিষয়, সারা বছরের ব্যস্ত সময় গুছিয়ে তবেই ছুটি কাটানো বা বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। হঠাৎ সেটি বাতিল হলে মন খারাপ হয় ঠিকই।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় পরিবারের ছোটরা। আমরা বড়রা বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিত বুঝে সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু ছোটদের ঘুরতে যাওয়ার মনে মনে অনেক পরিকল্পনা থাকে। হুট করে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ পড়লে ছোট-বড় সবারই মন খারাপ হয়।’
ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী স্যাফায়ার হোসেন খালাতো ভাই রৌদ্রকে নিয়ে গত বছর ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইলে দাদাবাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বাড়ির বড়রা মিলে সেবার হইচই করে ঈদের আনন্দে গ্রামে বাড়িতে একত্র হতে চেয়েছিল। স্যাফায়ার বলে, ‘খালাতো ভাইটি হুট করে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে ওকে বাদ দিয়েই আমরা বাড়িতে চলে যাই। বাড়িতে গেলেও ঈদের আনন্দে ছোট ভাইয়ের উপস্থিতি ভীষণ অনুভব করেছিলাম।’

ঘোরাঘুরির পরিকল্পনায় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে যা খেয়াল রাখবেন
* পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন পুরো পরিকল্পনাই কি বাদ দেবেন কি না। অনেক সময় যাঁর সমস্যা, তিনি পুরো পরিস্থিতি বুঝে বাকিদের পরামর্শ দেন, কী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার সমস্যা হলে আপনি বন্ধুদের পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করুন।
* সব ধরনের পরিস্থিতিতে ধীরস্থিরভাবে সিদ্ধান্ত নিন কিংবা অন্যদের পরামর্শ নিয়ে মন খারাপের কারণ তৈরি না হয়—এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
* কারও পরিবারের সদস্যদের শারীরিক কিংবা অসুস্থতাজনিত সমস্যার কারণে পরিকল্পনা পুরোপুরি বাদ দেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে সময়-সুযোগে বিষয়টা আলোচনা করুন। অনেক সময় যাঁর সমস্যা, তাঁকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি আমরা—এ ধরনের আচরণ পরিহার করাই মঙ্গল।
* পরিকল্পনা অনুসারে হোটেল বুকিং কিংবা ট্রেন-বিমানের টিকিট কাটা হয়ে গেলে তা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপত্তিতে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে টিকিট কিংবা হোটেল বুকিং অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে টিকিট ভাগাভাগির পোস্ট শেয়ার করে টিকিট বিক্রি করে দিতে পারেন।
* ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা বাদ হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় ছোটরা। তাদের মন ভালো করার জন্য পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন।
* এ ধরনের পরিস্থিতিতে রাগারাগি কিংবা মন খারাপ না করে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বুঝে আচরণ করুন। মনে রাখা ভালো, যেন কোনো সমস্যার অর্ধেক সমাধানই কিন্তু আমাদের সুস্থির আচরণ আর বুদ্ধিমত্তা দিয়েই করা যায়।