সুচিত্রা সেনের বাড়িতে

সংগ্রহশালার প্রবেশপথ। ছবি: হাসান মাহমুদ
সংগ্রহশালার প্রবেশপথ। ছবি: হাসান মাহমুদ

এবার পাবনা শহরে বেড়াতে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই—সুচিত্রা সেনের বাড়ি ঘুরে দেখা। মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে অনেক লেখায় পড়েছি এই বাড়ির গল্প। পাবনা শহরে পা দিয়ে তাই প্রথম ছুটলাম গোপালপুরের উদ্দেশে। এই এলাকার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের বাড়ি।

এখন এই বাড়ি সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত। বাড়ির সামনের বিশাল আঙিনায় ফুটে আছে বর্ষার নানা ফুল। অনেক বছর ধরে অবৈধ দখলে ছিল বাড়িটি। ২০১৪ সালে দখলমুক্ত হয়। গত ৬ এপ্রিল দর্শনার্থীদের খুলে দেওয়া হয় বাড়িটি। পাবনা জেলা প্রশাসন এখন এর দেখভাল করছে।

সুচিত্রা সেনের বাড়িটি এখন সংগ্রহশালা
সুচিত্রা সেনের বাড়িটি এখন সংগ্রহশালা

১০ টাকার টিকিট কেটে পার হলাম বাড়ির মূল ফটক। বিরাট উঠান পার হয়ে সিঁড়িবারান্দা, তারপর মূল ঘরগুলো। ঘরে পা দিতেই মোহিত হতে হবে সুচিত্রা সেনের সিনেমার গানের সুরে। ঘরগুলোর দেয়ালজুড়ে ছোট–বড় ফ্রেমে সাজানো সুচিত্রা সেনের ছবি। কোনো ছবিতে ধরা পড়েছে তাঁর নায়িকা হওয়ার মুহূর্ত, আবার কোনো ছবিতে রয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আরও আছে সুচিত্রা সেনের পছন্দ-অপছন্দ এবং নানা অজানা বিষয় নিয়ে লেখা ফেস্টুন। পটভূমিতে বেজে যাচ্ছে একটার পর একটা সুচিত্রা সেন অভিনীত সিনেমার গান।

বাড়িটা ঘুরে দেখতে দেখতেই কথা হলো কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা ভবানী গুহর সঙ্গে। জানালেন, সুচিত্রা সেন তাঁর স্বপ্নের নায়িকা। ‘তাঁর বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছি এই যে কী অনুভূতি, তা বলে বোঝানোর নয়।’

সংগ্রহশালার ভেতরে
সংগ্রহশালার ভেতরে

বাড়ির বেশ কটা ঘর এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। ধীরে ধীরে এগুলোকেও সাজানো হবে সুচিত্রা সেনের স্মৃতিবিজড়িত জিনিসে। শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় সুচিত্রা সেন কাটিয়েছেন এই বাড়িতে। একটা দেয়ালের ফেস্টুনে লেখা আছে ঘর সাজানোর প্রতি সুচিত্রা সেনের বিশেষ দুর্বলতার কথা। এই বাড়ির কোথাও এখন সুচিত্রা সেনের নিজ হাতে সাজানোর কোনো ছোঁয়া নেই। তবে এর প্রতিটি কোণেই সুচিত্রা সেনের বেড়ে ওঠা, শৈশবের দাপিয়ে বেড়ানোর যে ছোঁয়া আছে, তাই বা কম কিসে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সবাই এসে ঘুরে যেতে পারবেন এখানে।

এডওয়ার্ড কলেজের প্রশাসনিক ভবন
এডওয়ার্ড কলেজের প্রশাসনিক ভবন

সুচিত্রা সেনের বাড়ি দেখার পর যাই হিমাইতপুরে। এখানে রয়েছে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আশ্রম। এই মন্দিরটির স্থাপত্যরীতি চোখে পড়ার মতো। আছে পুকুরঘাট। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাবা-মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে এই আশ্রমটি নির্মাণ করা হয়। অনুকূলচন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যুতিথিতে এই স্থানটিতে দেশ–বিদেশের পুণ্যার্থীরা এসে জড়ো হন। এই আশ্রমের পাশেই পাবনা মানসিক হাসপাতাল।

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আশ্রমের প্রধান উপাসনালয়
শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আশ্রমের প্রধান উপাসনালয়

এদিকে পাবনা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সবুজ ক্যাম্পাসও মুগ্ধ করল। ৪৯ একর জমির ওপর সবুজ গাছগাছালি ঘেরা কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৮ সালে। এখানে বিজ্ঞান অনুষদের দালানগুলো যেমন পুরোনো ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে, তেমনি কলা ও বাণিজ্য বিভাগের দালানে খুঁজে পাওয়া যাবে আধুনিকতার ছোঁয়া। পাবনায় বেড়াতে এসে হাতে যদি সময় কিছুটা বেশি থাকে, তবে চলে যেতে পারেন নগরবাড়ি ঘাটে। পাবনা শহর থেকে এর দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। নগরবাড়ি ঘাটে আগের মতো জৌলুশ না থাকলেও ঘাটে ভিড়ে থাকা বড় বড় কার্গো-লঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন যমুনা নদীর অপার সৌন্দর্য। চাইলে যমুনায় ঘণ্টা হিসাবে নৌকা ভাড়া নিয়ে নৌভ্রমণও করতে পারেন।