হাতে আঁকা টিপ
শাড়ি, চুড়ি আর টিপেই যেন পরিপূর্ণ বাঙালি নারীর সাজ। একাল কিংবা সেকাল নয়, সব কালে এই আবেদন একই রকম। সাজপোশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও টিপের চাহিদা বা আকর্ষণ কোনোটাই কমেনি। শুধু শাড়িই কেন, সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে কপালে মখমলের গোল টিপের আবেদনও সব সময়ই রয়ে গেছে। তবে সাজের সব অনুষঙ্গের মতো টিপের নকশায়ও এসেছে বৈচিত্র্য। একেবারে সাদামাটা নকশার গোল বা লম্বাটে টিপ তো মেয়েদের পরতে দেখাই যায়। তবে বেশ কিছুদিন হলো, টিপে ফুটে উঠছে ফুল, পাতা বা কলকি নকশা। আর এই টিপগুলো রং-তুলির ছোঁয়ায় হাতে আঁকা। এতেই টিপ হয়ে উঠছে বর্ণিল, সাজে আসছে বৈচিত্র্য।
পাথর, জরি দিয়ে কারুকার্য করা টিপ পরা শুরু হয়েছিল একটা সময়। সে জায়গায় এল সাদামাটা টিপ। এখন এই টিপ হয়ে উঠছে নকশাময়। এই স্টাইলটি মানিয়ে যায় সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই। আলপনা, জ্যামিতিক নকশা কিংবা বিভিন্ন চিহ্ন আঁকা হচ্ছে এক রঙের টিপের ওপর। এতে একটু জমকালো ভাব আনতে কেউ কেউ আবার নকশার সঙ্গে যোগ করছেন পাথর।
রূপবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গোলাকার টিপের চাহিদা সব সময়ই বেশি। তবে লম্বাটে ও চারকোনা হাতে নকশা করা টিপের চাহিদা বাড়ছে। সাজের ক্ষেত্রে সবকিছুই নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর নির্ভর করে বলে মনে করেন মিউনি’স ব্রাইডালের রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন। তিনি জানান, ‘বাঙালি সাজে গোল টিপই ভালো মানায়। তাই খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নেই।’
একেবারেই নিজস্ব স্টাইল
কপালে টিপ পরাটা একান্তই নিজস্ব স্টাইল এবং ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে—এমনই মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার তাহসিনা শাহিন। তিনি নিজেও টিপ পরতে পছন্দ করেন, বিশেষ করে শাড়ির সঙ্গে সব সময় টিপ ব্যবহার করেন। বললেন, ‘শাড়ির সঙ্গে টিপ বেশি ভালো মানালেও সালোয়ার-কামিজ, লম্বা স্কার্ট কিংবা জিনস-ফতুয়ার সঙ্গেও দিব্যি টিপ মানিয়ে যায়। তবে সেটা নির্ভর করবে ব্যক্তিগত রুচি ও স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর।’
তাহসিনা শাহীন জানালেন, টিপ বাছাই করার বেলায় শাড়ির ধরন ও অনুষ্ঠানের বিষয়টা খেলায় রাখা প্রয়োজন। জমকালো অনুষ্ঠানে বড় নকশা করা টিপ বেশি ভালো লাগবে। আবার টিপের সঙ্গে গয়নাও হতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ‘আর হাতে আঁকা টিপ নিজেই যেন একধরনের অলংকার। তাই বেশি গয়না পরার প্রয়োজন পড়ে না। গলায় লম্বা গয়না পরলে টিপ ছোট আর আঁটসাঁট গয়নায় সঙ্গে বড় টিপ ভালো লাগে’, বলেন তাহসিনা শাহিন।
বাজারে হাতে আঁকা টিপ
বেশ কয়েক বছর ধরেই বিবি প্রোডাকশনস আলপনা করা টিপ তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটির ডিজাইন দলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা গোল টিপের ওপর রিকশাচিত্র এঁকে থাকে। যেকোনো রঙের টিপ পাওয়া যাবে এখানে। তবে লাল ও কালো টিপের চাহিদা বেশি বলে জানা গেল। একটি পাতায় চারটি করে ভিন্ন ভিন্ন নকশার টিপ পাওয়া যায় বিবি প্রোডাকশনসে।
এ ছাড়া বেশ কিছু অনলাইন দোকানেও হাতে আঁকা টিপ পাওয়া যায়। হাতে আঁকা টিপ নিয়ে কাজ করেন অনলাইনভিত্তিক দোকান গীতিকা। এর ডিজাইনার রুবানা করিম জানান, সাধারণ টিপে নকশা করে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য আনা হয়। দেশে এবং বিদেশে বাঙালিদের মাঝে হাতে আঁকা টিপের কদর দিনে দিনে বেড়ে চলছে। যেকোনো নকশা টিপের ওপর ফুটিয়ে তোলা সম্ভব বলে জানান তিনি। তবে এর জন্য বেছে নিতে হবে একটু বড় ধরনের টিপ। ছোট টিপে নকশা ভালো বোঝা যাবে না।
কোন মুখে কেমন টিপ?
টিপ যেমনই হোক তা মানাতে হবে চেহারার সঙ্গে। তানজিমা শারমিন জানালেন কোন মুখের সঙ্গে হাতে আঁকা কেমন টিপ মানাবে।
- হাতে আঁকা টিপের ক্ষেত্রে দেশি ঘরানার পোশাকই বেশি মানানসই। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকের সঙ্গেও পরা যায়। সে ক্ষেত্রে চেহারায় ধরে রাখতে হবে আত্মবিশ্বাস।
- গোলাকার মুখে সাধারণত সব আকৃতির টিপই মানিয়ে যায়। তবে বেশি ভালো লাগবে লম্বা আকৃতির টিপ।
- মুখ লম্বাটে হলে পরতে হবে গোলাকার টিপ।
- কপাল যদি বড় হয় তবে মাঝারি বা বড় আকারের টিপ পরলে বেশি ভালো লাগে।
- ছোট কপালে অবশ্যই ছোট টিপ পরুন।
- টিপের আকার ছোট হলে টিপটা পরতে হবে দুই ভ্রুর মাঝ বরাবর। বড় টিপ হলে তা ভ্রু থেকে সামান্য ওপরে পরলে ভালো লাগবে।
- যাঁদের জোড়া ভ্রু তাঁরা টিপ পরবেন ভ্রু থেকে সামান্য ওপরে। বেছে নিতে পারেন উজ্জ্বল রঙের টিপ।
নিজেই আঁকুন
বাড়িতে বসে সহজেই টিপে নকশা এঁকে নিতে পারেন নিজেই। সেটা কীভাবে—জানালেন রুবানা করিম।
যাযালাগবে—
- বড় আকারের টিপ ১ পাতা
- ফ্যাব্রিক কালার পছন্দমতো
- তুলি ১ ও ২ নম্বর আকারের একটি করে
এবার রং-তুলি দিয়ে মনের মতো নকশা এঁকে নিন টিপে। আর নতুনত্বের ছোঁয়ায় ষোলো আনা বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলুন নিজের সাজে।