খাদির পোশাকে জমকালো দুই সন্ধ্যা
শঙ্খ কিংবা শাঁখায় করা কারুকাজ—সেটা উঠে এসেছে তরুণীদের পোশাকে। সেই পোশাক তৈরি খাদি কাপড়ে। ঘন কুঁচির আনারকলি বা মেঝে ছোঁয়া গাউন, সেখানেও সোনার গয়নার নকশা কিংবা পটচিত্র। ছেলেদের চলতি ধারার পাঞ্জাবি বা কোর্তার নকশায় মেশানো পটারি বা পানাম নগরের ঐতিহ্য। প্রতিটি পোশাকের কাটছাঁট নিয়ে নিরীক্ষা যে কম হয়নি, তা বোঝা গেল খাদি উৎসবের ফ্যাশন শোতে।
৭ দেশের ২৬ জন ফ্যাশন ডিজাইনার। দুই দিনের দুই সন্ধ্যায় কয়েক শ নকশার খাদির পোশাক! বিশাল আয়োজন না বলে উপায় নেই। এটা ছিল ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (এফডিসিবি) আয়োজিত ‘ট্রেসেমে খাদি, দ্য ফিউচার ফেব্রিক শো ২০১৭’। ৩ ও ৪ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের রাজদর্শন হলে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় দেশের সবচেয়ে বড় খাদি পোশাকের এই আয়োজন।
ফ্যাশন শোর প্রতি সন্ধ্যায় ১৩ জন করে ডিজাইনার অংশ নেন। যেখানে খাদি কাপড়ে তৈরি শাড়ি, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি, শার্ট, কটি, প্যান্ট, পালাজ্জো, গাউন, আনারকলি কামিজ, খাটো প্যান্ট, স্কার্ট, টপ ইত্যাদি দেখানো হয়েছে।
মোটা খাদির কাপড় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পাতলা হয়ে গেছে। আর সেগুলোতে দেশি আর পশ্চিমা ঘরানার পোশাক তৈরি করেছেন ডিজাইনাররা। ডিজাইনাররা বলছেন, খাদিকে আবার জাগিয়ে তুলতে তরুণদের উপযোগী নকশায় বানাতে হবে পোশাক।
এফডিসিবির সহসভাপতি এমদাদ হক বললেন, ‘এখন সবাই কমবেশি ফ্যাশন-সচেতন। দেশে বসেই আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের খবর পাচ্ছেন মুহূর্তে। তাই বদলাতে হবে পোশাকের নকশা ও উপকরণ।
খাদি তো সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরেই হারিয়ে যেতে বসেছিল। এই উৎসবে তাই নতুন চিন্তাভাবনার মাধ্যমে খাদিকে আবার জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চলছে।’
এবার উৎসবে বাংলাদেশের মোট ১৯ জন ডিজাইনার তাঁদের খাদি কাপড়ের সংগ্রহ দেখিয়েছেন মঞ্চে। নকশার অনুপ্রেরণা হিসেবে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন শীতলপাটি, হাতপাখা, গয়নার কারুকাজ, ক্যালিগ্রাফি, লোহার গ্রিল ও রড, রিকশাচিত্র, টেরাকোটা, কাঠের কারুকাজ, পটচিত্র এবং শঙ্খ ও কড়ির নকশা।
৩ নভেম্বর প্রথম ফ্যাশন শোতে অংশ নেওয়া ডিজাইনার শৈবাল সাহার নকশা ছিল ক্যালিগ্রাফিনির্ভর। ফারাহ আনজুম বারি বেছে নেন গয়নার কারুকাজ। শাহরুখ আমিনের অনুপ্রেরণা ছিল শীতলপাটির মোটিফ। লোহার গ্রিল থেকে নকশা নেন এমদাদ হক।
শঙ্খ ও শাখার নকশা করেন নওশিন খায়ের। আফসানা ফেরদৌসি দেখান পটচিত্র, টেরাকোটার নকশা করেন ফাইজা আহম্মেদ, সারাহ্ করিমের অনুপ্রেরণাও শীতলপাটি, ফারাহ দিবা দেখান আলপনার নানা নকশা।
৪ নভেম্বর দ্বিতীয় দিনের প্রদর্শনীতে লিপি খন্দকার ও চন্দনা দেওয়ান মোটিফ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন রিকশার হুড ও রিকশাচিত্রের নকশা। রিফাত রেজার তৈরি পোশাকে আসে ক্যালিগ্রাফি। কুহু প্লামন্দোন পোশাকের মোটিফ হিসেবে বেছে নেন পুরোনো আমালের সোনার গয়নার নকশা।
শাঁখা-কড়ির নকশা করেন মারিয়া সুলতানা। বিপ্লব সাহা খাদিতে তুলে ধরেন পানাম নগরের গ্রিলের নকশা, ইজমাত নাজ রিমার নকশা ছিল কাঠের কারুকাজে। পোশাকে পটচিত্র বেছে নেন তেনজিং চাকমা, রুপো শামস হাতপাখার নকশা তুলে আনেন। মাহিন খানের নকশায় দেখা যায় শীতলপাটির মোটিফ।
ভারতের হিমাংশু শনি ও সৌমিত্র মণ্ডল, নেপালের রসনা শ্রেষ্ঠা, মালয়েশিয়ার জ্যাকলিন ফং, শ্রীলঙ্কার নিলান হারাসগামা, থাইল্যান্ডের মায়ে টিটা ও ভুটানের চিমমি চডেন তাঁদের নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নকশার পোশাক তুলে ধরেন।
দুই দিনই অনুষ্ঠান শুরু হয় নায়লা আজাদের দলের নৃত্যনাট্য খদ্দরআন্দোলনদিয়ে। ফ্যাশন শোর ফাঁকে ফাঁকে তা কয়েকটি পর্বে উপভোগ করেন দর্শক। দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের শুরুতে তাঁতশিল্পী আসলাম মিয়াকে জানানো হয় বিশেষ সম্মাননা।
পুরো আয়োজনে পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে মডেলদের সাজিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল। ফ্যাশন শোর কোরিওগ্রাফার ছিলেন ইমু হাশমি। খাদি উৎসবের টাইটেল স্পনসর ছিল ইউনিলিভারের হেয়ার কেয়ার ব্র্যান্ড ট্রেসেমে। আয়োজনে সহায়তা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বেঙ্গল গ্রুপ লিমিটেড। মাইক্রোসফট, সেনোরা, বার্জার, আইপিএবি, দ্রুক এয়ার ও দ্য ওয়ে ঢাকা।
খাদি উৎসবের ফ্যাশন শো অংশটি ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য। তবে ফ্যাশন শোতে অংশ নেওয়া দেশ-বিদেশের সব ডিজাইনারের পোশাক নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনীর। ১০ ও ১১ নভেম্বর এই প্রদর্শনী সবার জন্যই উন্মুক্ত। প্রদর্শনী থেকে পোশাক কেনাও যাবে। প্রদর্শনীটি হবে রাজধানীর খাজানা গার্ডেনিয়া রেস্তোরাঁয় (বাড়ি ৮, সড়ক ৫১, গুলশান ২)।