মিয়াও বাড়ি

পথের বিড়ালগুলো আশ্রয় পেয়েছে দীপান্বিতা রিদির বাসায়। ছবি: সংগৃহীত
পথের বিড়ালগুলো আশ্রয় পেয়েছে দীপান্বিতা রিদির বাসায়। ছবি: সংগৃহীত

বসার ঘর, খাবার টেবিল, শোবার ঘর, ব্যালকনি—প্রতিটি জায়গায় বিড়াল আর বিড়াল। তাদের কেউ খাচ্ছে, কেউবা ঘুমাচ্ছে, কেউবা আবার দোলনায় দোল খাচ্ছে। দোতলা বাড়ির পুরোটাই যেন বিড়ালের দখলে। এদের প্রতিটিরই আবার আলাদা নামও রয়েছে—লেডি, ছোটু, লেমন, গুচি, ম্যাক্স, দিয়েগো, টুনা, টোটন, পিকুসহ আরও যে কত বাহারি নাম!

এই বিড়ালবাড়িটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড এলাকার মামুদপুর গ্রামে। তবে এই বিড়ালগুলোর কোনোটার পা কাটা, কোনোটার চোখ নেই, কারও মালিক তাকে রেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, মানুষের নির্মমতার শিকার হয়েও এসেছে কোনোটা। এমন সব অসহায় বিড়ালের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে এই বাড়ি। আশ্রয়কেন্দ্রের নাম এএলবি অ্যানিমেল শেল্টার। যেখানে আশ্রয় পেয়েছে মোট ৫১টি বিড়াল।

শুধু বিড়ালই নয়, রয়েছে বেশ কিছু কুকুরও। থাকছে পরম মমতায়। অসহায় প্রাণীর প্রতি মমতা বিলিয়ে যাচ্ছেন দীপান্বিতা রিদি। প্রাণীপ্রেমী এই তরুণী বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোথাও কেউ আহত বিড়াল-কুকুর দেখলে আমাদের খবর দেয়। তখন আমরা তাদের এই শেল্টারে নিয়ে আসি।’

অসুস্থ বিড়ালকে সুস্থ করে বা শিশু বিড়ালকে একটু বড় করে আগ্রহী পশুপ্রেমীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে তা করা হয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আশ্রয়কেন্দ্রের নামে ওয়েবসাইটে (www.albshelter.com) গিয়ে আগ্রহীরা বিনা পয়সায় পছন্দের বিড়াল নিতে পারবেন। তবে কেউ যদি তাঁর ব্যক্তিগত বিড়াল কিছুদিনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে চান, তাহলে তাঁকে দিতে হয় অল্প কিছু ফি। এ টাকাও রিদি খরচ করেন কুকুর–বিড়ালদের খাবার কেনায়। কী খাওয়ান তিনি এই কুকুর-বিড়ালদের? রিদি বলেন, ‘বিড়ালদের দুই বেলা ভাত-মাছ আর এক বেলা ক্যাট বিস্কুট খাওয়ানো হয়। আর কুকুরদের দেওয়া হয় মুরগি।’ দৈনিক ৪ কেজি চালের ভাত, ৪ কেজি মাছ, ২ কেজি বিস্কুট এবং ২ কেজি মুরগি লাগে তাদের আপ্যায়নে।

শুধু খাওয়ালেই তো চলে না, যত্নও করতে হয়। এসব করেই দিন চলে যায় দীপান্বিতা রিদির। তবে বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য আছেন কয়েকজন তত্ত্বাবধায়ক।

প্রাণীপ্রেমী রিদি পড়াশোনা করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনে। শুরুর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। শুরুটা সে সময়ই। তবে ছোট পরিসরে শুরু করেছিলাম। তবে ২০১৩ সালে আশ্রয়কেন্দ্র নিবন্ধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।’ এখন তাঁর সব উদ্যোগের পাশে পান স্বামী রায়িন চৌধুরীকে।

দীপান্বিতা নিজেই পরিচর্যা করেন অবলা প্রাণীদের
দীপান্বিতা নিজেই পরিচর্যা করেন অবলা প্রাণীদের

এএলবি অ্যানিমেল শেল্টার নামে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেজ আছে। এ ছাড়া অন্য পশুপ্রেমীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরিচালনা করেন অ্যানিমেল লাভারস অব বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। রয়েছে প্রায় ১০০ জনের কর্মঠ এবং তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের দল। আক্রান্ত বিড়াল-কুকুরদের সুস্থ করে মানুষের কাছে পোষ্য দেওয়া ও নেওয়া, আহত প্রাণীদের উদ্ধার, তাদের পুষতে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয় এর মাধ্যমে। সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক হলেও ফেসবুকের বাইরেও বিভিন্ন কার্যক্রম চালায় তারা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই প্রাণীদের রক্ষায় সচেতনতামূলক বিভিন্ন আয়োজন করেন এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা। দীপান্বিতা রিদি বলেন, ‘মানুষ যেন বিদেশি কুকুর-বিড়াল না পুষে দেশি কুকুর-বিড়াল পুষতে উদ্বুদ্ধ হয়, সেই চেষ্টাও করি আমরা।’