কাঁঠাল বিচির প্রশংসায় ব্রিটিশ মন্ত্রী

কারি অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ মন্ত্রী ক্রিস গ্রেলিং (মাঝে)। ছবি: লেখক
কারি অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ মন্ত্রী ক্রিস গ্রেলিং (মাঝে)। ছবি: লেখক

‘লইট্টা মাছর ভাতর মোছা, ফইট্টা কেনে গেল্!’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার প্রচলিত এই কথার সোজা অনুবাদ হতে পারে ‘লইট্টা মাছের ভাত-তরকারি কীভাবে পটিয়া পর্যন্ত গেল!’ এখন মনে হচ্ছে বলতে হবে, ‘বাংলাদেশর কাঁঠাল বিচি, বিলেত কেনে গেল্।’ আর শুধু তো যাওয়া নয়। ক্রিস গ্রেলিংয়ের মতো যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রীর প্রশংসা কুড়ানো! অবিশ্বাস্য তো মনে হতেই পারে!

চট্টগ্রাম থেকে সোজা যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের বেটারসি পার্ক। সেদিন ২৭ নভেম্বর। ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস ২০১৭ চলমান। খানিক আগে টিভি তারকা লিজি কান্ডি তাঁর নিজস্ব স্টাইলের শাড়িতে ঝড় তুলে গেছেন এই কারি অস্কারের লালগালিচায়। সেই ছবি পরদিন ফলাও করে প্রকাশও হয়ে গেছে ডেইলি মেইল আর সানের মতো সংবাদমাধ্যমে।

ভিডিও বার্তায় হাজির হয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে স্বয়ং। মন মাতানো আয়োজন, দুর্দান্ত সব পরিবেশনার মাঝেই নৈশভোজের বিরতি। কেতাদুরস্ত কায়দায় শুরু হয়ে গেছে খাবার পরিবেশনা।

আর চমকটা অপেক্ষা করছিল সেখানেই। নানান পদের খাবারের মধ্যে একটা পদের খাবার অন্য রকম। ঠিকঠাক খেয়াল করে দেখি, আরে এ যে কাঁঠাল বিচি! ব্রিটেনের অভিজাত মহলে এই খানাপিনার আয়োজনে কি না আমাদের চিরচেনা কাঁঠাল বিচি!

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের কয়েকজন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের কয়েকজন

বিস্ময়বোধটা মাথায় ছিল। ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডে বিজয়ীদের উচ্ছ্বাস শেষ হতেই নামলাম কাঁঠাল বিচির রহস্য উন্মোচনে। জানা গেল, এই পদের নাম মিক্সড ভেজিটেবলস (পাঁচমিশালি সবজি)। তবে এ তরকারিতে কাঁঠাল বিচিই প্রধান। এরপর মিলল আরও চমকপ্রদ তথ্য। খাওয়া শেষে, ব্রিটেনের অভিজাত মহলের অনেক অতিথি এই খাবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। তাঁর মধ্যে ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা যুক্তরাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ক্রিস গ্রেলিংও।

আর কাঁঠাল বিচিকে এভাবে বিশ্বমঞ্চে তুলে আনাটা যে একেবারেই কাকতালীয় নয়, সেটা বোঝা গেল ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিইর মন্তব্যে। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের দেশে উপেক্ষিত অনেক খাবার নতুনভাবে ব্রিটেনের রেস্তোরাঁগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে। কাঁঠাল বিচির বেলায়ও এটি ঘটতে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত এই কাঁঠাল বিচি ফেলে দেওয়া হয়। আমি মনে করি, এই কাঁঠাল বিচি একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানিযোগ্য পণ্যও।’

কারি অ্যাওয়ার্ডে কাঁঠাল বিচির একটি পদ
কারি অ্যাওয়ার্ডে কাঁঠাল বিচির একটি পদ

কথাগুলো অবিশ্বাস্য ঠেকতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এনাম আলী এমবিই এমন একজন ব্যক্তিত্ব কারিশিল্পের ভালো-মন্দ নিয়ে যাঁর কথায় ভরসা রাখে বিবিসি, সিএনএন বা গার্ডিয়ান-এর মতো সংবাদমাধ্যম। তাই কাঁঠাল বিচির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না মোটেও।

আর বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা বাদ যাক। বিলেত অবধি উড়ে এসে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডসের মতো বিশ্বমানের আসরের নৈশভোজে জায়গা করে নেওয়া, সেটাও কি চাট্টিখানি কথা! স্বাদের কথা ভাবছেন? কাঁঠাল বিচির সেই সবজি আমার খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। খেতেও এককথায় যাকে বলে অপূর্ব!