রুমীর পছন্দের কয়েকটি পদ

বদি হাসতে হাসতে বলল, ‘চাচী, এই দুর্দান্ত সাহসী ছেলে দুটোকে খুব ভালো করে খাইয়ে দ্যান তো। ওদের জন্যই আজ আমরা জানে বেঁচে পালিয়ে আসতে পেরেছি।’ জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি বইতে ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্টের দিনলিপিতে আছে এই বর্ণনা। খাবার টেবিলে সেদিন ছিলেন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা বদি, আলম, কাজী, স্বপন, চুল্লু, রুমী, জামী, মাসুম। রুমীর আবদারের রান্নাগুলোই টেবিলে পরিবেশন করা হয়েছিল।

রুমী খেতে ভালোবাসতেন। যুদ্ধের সময় যখন কিছুক্ষণের জন্য ছেলে শাফি ইমাম রুমী বাড়ি আসতেন, তখন মা চেষ্টা করতেন ছেলের পছন্দের খাবারগুলো টেবিলে দিতে। একাত্তরের দিনগুলি থেকে পাওয়া রুমীর পছন্দের কয়েকটি পদ নিজের মতো করে রেঁধেছেন সিতারা ফিরদৌস

স্মোকড ইলিশ
স্মোকড ইলিশ

স্মোকড ইলিশ

উপকরণ

ইলিশ মাছ বড় আকারের ১টি, টমেটো সস ৬ টেবিল চামচ, ভিনেগার ২ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল ৩ টেবিল চামচ, লাল কাঁচামরিচ বাটা ১ চা-চামচ, সরিষা বাটা ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, চিনি ২ চা-চামচ।

প্রণালি

মাছ বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে রাখুন। মাছ পরিষ্কার করে মাথা কেটে বাদ দিন। ফিলে করে মাছ থেকে মাঝের কাঁটা বাদ দিন। পাশের কাঁটা পরিষ্কার করে মাছের গায়ে অর্ধেক মেশানো মসলা লাগিয়ে নিন। এবার মসলা মাখানো মাছ একটি বড় হাঁড়ি বা সসপ্যানে রেখে দিন। এরপর ওই পাত্রটির ভেতরে মাছের পাশে একটি ছোট বাটিতে জ্বলন্ত কয়লা রেখে তার ওপর সামান্য সরিষার তেল ঢেলে হাঁড়ি বা সসপ্যানের ঢাকনা ১৬-২০ মিনিট বন্ধ করে রাখুন। এর ফলে মাছটাতে স্মোকি স্বাদ আসবে। মাছ বেকিং ট্রেতে রেখে ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ২৫-৩০ মিনিট ওভেনে বেক করতে হবে। ওভেন থেকে মাছটি বের করে খুব সাবধানে ছুরি দিয়ে লম্বায় কয়েক ভাগ করে, কাঁটা থাকলে বের করে আবার আগের আকার করে নিন। পরিবেশন পাত্রে রেখে বাকি মসলা লাগিয়ে ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে ১৫-২০ মিনিট বেক করুন। রোস্টেড সবজি দিয়ে পরিবেশন করুন স্মোকড ইলিশ। 

বার্গার
বার্গার

বার্গার

বানের উপকরণ

ময়দা ৩ কাপ, মাখন ১ টেবিল চামচ, ইস্ট ২ চা-চামচ, চিনি ২ টেবিল চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, গুঁড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ, ডিম ২টি, কুসুম গরম পানি পরিমাণমতো।

বানের প্রণালি

মাখন, ডিম, পানি বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিলিয়ে নিন। ১টি ডিম ও কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে মথে নিন। মাখন দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ১ ঘণ্টা গরম জায়গায় ঢেকে রাখুন। ১ ঘণ্টা পর খামির বের করে নিন। ১০টি বা পরিমাণমতো ভাগ করে বানের আকারে গড়ে নিন। ডিমের প্রলেপ দিয়ে, সাদা তিল ছিটিয়ে, ১২-১৫ মিনিট গরম জায়গায় (চুলার পাশ হতে পারে) রাখতে হবে। এরপর প্রি-হিটেড ওভেনে ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে ১২-১৫ মিনিট বেক করুন।

্যাটির উপকরণ

গরুর মাংসের কিমা ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা কিমা ১ চা-চামচ, রসুন কিমা আধা চা-চামচ, কাঁচামরিচ কুচি ১ চা-চামচ, স্প্রিং অনিয়ন ২ টেবিল চামচ, পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, ওয়েস্টার সস ১ টেবিল চামচ, এইচ পি সস ১ টেবিল চামচ, বারবিকিউ সস ১ টেবিল চামচ, টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, পাউরুটি ৪ টুকরা, ডিম ২টি, ময়দা ৩ টেবিল চামচ, কর্ন ফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ, ব্রেড ক্রাম্ব ২ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, জলপাই তেল ১ টেবিল চামচ।

্যাটির প্রণালি

জলপাই তেল গরম করে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচামরিচ ভেজে নিন। কিমা ধুয়ে ভালো করে নিংড়ে নিন। ব্রেড ক্রাম্ব, ডিম, ময়দা, কর্ন ফ্লাওয়ার, তেল বাদে বাকি সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে মেখে প্যাটির আকারে করে নিন। ডিম, ময়দা, কর্ন ফ্লাওয়ার ও প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। প্যাটিগুলো মিশ্রণে ডুবিয়ে, ব্রেড ক্রাম্বে গড়িয়ে, বেকিং ট্রেতে সাজিয়ে নিন। প্রি-হিটেড ওভেনে ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে ৪০-৪৫ মিনিট বেক করুন। এবার মাখন, চিজ, মেয়োনিজ, টমেটো সস, লেটুস পাতা, টমেটো, শসা দিয়ে পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন বার্গার।

চিকেন চপ
চিকেন চপ

চিকেন চপ

উপকরণ ১

মুরগির হাড়ছাড়া মাংস ৫০০ গ্রাম, আদা বাটা আধা চা-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, মরিচ টালা গুঁড়া আদা চা-চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, এইচ পি সস ১ টেবিল চামচ, বারবিকিউ সস ১ টেবিল চামচ, টমেটো সস ৩ টেবিল চামচ, রেড ভিনেগার ১ টেবিল চামচ, লবণ সামান্য।

প্রণালি ১

মুরগির মাংসের চামড়া বাদ দিয়ে দিন। ছুরি দিয়ে মাংসের গায়ে দাগ কেটে সব উপকরণ মিলিয়ে মাংসের গায়ে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখতে হবে।

উপকরণ ২

ময়দা ৪ টেবিল চামচ, কর্ন ফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ, ডিম ২টি, লবণ পরিমাণমতো, ব্রেড ক্রাম্ব ১ কাপ, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি ২

তেল আর ব্রেড ক্রাম্ব বাদে সব উপকরণ একসঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনে পানি দিয়ে মিশ্রণ করে নিন। মাংস মিশ্রণে ডুবিয়ে, ব্রেড ক্রাম্বে গড়িয়ে গরম ডুবো তেলে ভেজে নিন।

মোগলাই পরোটা
মোগলাই পরোটা

মোগলাই পরোটা

উপকরণ ১

ময়দা ৩ কাপ, লবণ ১ চা-চামচ, তেল ৬ টেবিল চামচ, পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি

ময়দার সঙ্গে লবণ, তেল মিলিয়ে পানি দিয়ে ভালো করে মথে নিতে হবে। এরপর ভেজা একটা কাপড় ভালো করে নিংড়ে ময়দার ডো ২-৩ ঘণ্টা পেঁচিয়ে রাখতে হবে।

উপকরণ ২

মাংস ছোট করে কাটা ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা আধা চা-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, তেজপাতা ১টি, তেল ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি

গরমমসলার গুঁড়া বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিলিয়ে পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে ঝোল শুকিয়ে গেলে গরমমসলার গুঁড়া দিয়ে নামান।

উপকরণ ৩

ডিম ৬-৮টি, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, লেবু ১টি, কাঁচামরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ, তেল পরিমাণমতো, পুদিনাপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি

ময়দা ৬-৮ ভাগ করে, পাতলা রুটি বেলতে হবে। প্রয়োজনে টেনে টেনে রুটি পাতলা করুন। রুটির ওপর তেল মেখে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, মাংস, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা, লেবুর রস, ডিম দিয়ে পরোটা চার ভাঁজ করে ডুবো তেলে ভেজে তুলুন।

মোরগের রোস্ট
মোরগের রোস্ট

মোরগের রোস্ট

উপকরণ

মোরগ মাঝারি আকারের ২টি, তেল বা ঘি ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা দেড় টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, কেওড়া ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, জাফরান রং সামান্য, কাঁচামরিচ ৪-৫টি, শাহি জিরা বাটা ১ চা-চামচ, কিশমিশ ১ টেবিল চামচ, পোস্তদানা বাটা ১ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ বাটা ৩ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ৪ টেবিল চামচ, জায়ফল জয়ত্রী গুঁড়া আধা চা-চামচ, দারুচিনি ৪ টুকরা, এলাচি ৪টি, লবঙ্গ ৪টি, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, টমেটো সস ৩ টেবিল চামচ, পেস্তা আমন্ড কুচি ১ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ।

প্রণালি

মোরগের চামড়া ছাড়িয়ে রোস্টের মতো চার টুকরা করে নিন। ধুয়ে পানি ঝরিয়ে দই মেখে ২০-২৫ মিনিট রাখতে হবে। তেল ও ঘি গরম করে পেঁয়াজ ভেজে সমস্ত বাটা মসলা, গুঁড়া মসলা, গরমমসলা কষিয়ে নিন। এবার মুরগির মাংস দিয়ে ২-৩ বার কষিয়ে অল্প পানি দিয়ে রান্না করুন। ঝোল কমে এলে দুধ, কেওড়া ও পর্যায়ক্রমে বাকি উপকরণ দিয়ে নামাতে হবে।

ছোলার ডালের হালুয়া
ছোলার ডালের হালুয়া

ছোলার ডালের হালুয়া

উপকরণ

ছোলার ডাল ১ কাপ, চিনি ২ কাপ, ঘি আধা কাপ, দুধ ২ কাপ, দারুচিনি গুঁড়া আধা চা-চামচ, এলাচি গুঁড়া আধা চা-চামচ, গোলাপজল ১ টেবিল চামচ, জাফরান সিকি চা-চামচ, পেস্তা ও আমন্ড কুচি ৩ টেবিল চামচ।

প্রণালি

ডাল ধুয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। পানি কমে এলে দুধ দিয়ে সেদ্ধ করুন। শুকিয়ে গেলে বেটে নিন। প্যানে ঘি গরম করে ডাল বাটা কিছুক্ষণ ভুনুন। এবার চিনি, দারুচিনি, এলাচি গুঁড়া দিয়ে আবার ভুনতে হবে। হালুয়া প্যানের তলা ছেড়ে আসলে, গোলাপজলে ভেজানো জাফরান দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন। বড় অ্যালুমিনিয়ামে ঘি লাগিয়ে হালুয়া ঢেলে সমান করে নিন। পেস্তাবাদাম কুচি ছড়িয়ে দিয়ে হালুয়া অল্প ঠান্ডা হলে বরফি আকারে কেটে রাখতে হবে।