অরগানিক খাবারের খোঁজে

অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন অরগানিক সবজি। ছবি: নকশা
অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন অরগানিক সবজি। ছবি: নকশা

শাকসবজি খান, ভালো থাকুন। চাষের স্থান থেকে বাজার, এরপর রান্নাঘর, সবশেষে খাওয়াদাওয়া। সবজি চাষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। শুধু সবজি নয়, ফল, ডিম, মাছ, মাংস—সবকিছু কেনার সময়ই মনে কাজ করে একধরনের আতঙ্ক—ফরমালিন কিংবা কীটনাশক মেশানো নেই তো? অনেকেই এখন মনের দ্বিধা কাটানোর জন্য সবজি রান্না করার আগে লবণ-পানিতে অথবা ভিনেগার মেশানো পানিতে বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখেন।

এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম সমাধান হতে পারে অরগানিক সবজি। অরগানিক শাকসবজি বা শস্য উৎপাদনে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। তাই এটি আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জৈব সার ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত চাল, ডাল, বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাংস এখন পাওয়াও যাচ্ছে বাজারে।

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিপা মোনালিসা বলেন, ‘আমরা সাধারণত যেসব খাবার খাই, তাতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই কৃত্রিম পদার্থগুলো খাবার ধোয়ার পর, এমনকি রান্না করার পরও সম্পূর্ণ দূর হয় না। যা আমাদের দেহের নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

অরগানিক খাবারের তালিকায় শুধু শস্য সবজি নয়, মাছ ও মাংসও পাওয়া যায়। অরগানিক খাবারের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় অনেকে কিনতে চান না বলেও জানালেন কৃষিবিদ নিপা মোনালিসা। সে ক্ষেত্রে কম খাব কিন্তু ভালো খাব—এই নীতি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার আমাদের খাবারের ভেতরে ঢুকে যায় বলে জানান পুষ্টিবিদ ফারজানা ওয়াহাব। তিনি বলেন, এই রাসায়নিক জিনিসগুলো আমাদের শরীরে ধীরগতিতে বিষের মতো কাজ করে। কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন ইত্যাদির যথেচ্ছ ব্যবহারে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা ইত্যাদির প্রকোপ মারাত্মক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের ওপর এর প্রভাব আরও মারাত্মক হয়ে দেখা দিচ্ছে। অরগানিক (কৃত্রিম সার ও রাসায়নিক মুক্ত) খাবার ও শাকসবজি আমাদের নিজেদের জন্য তো দরকার অবশ্যই, বিশেষ করে শিশুদের জন্য প্রয়োজন আরও বেশি। এ ছাড়া অরগানিক খাবার উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোন ব্যবহার করা হয় না। অরগানিক খাবার শরীরের চর্বি কমায় এবং পেশির গঠনে সহায়তা করে। মারাত্মক রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। শিশুদের সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে অরগানিক খাবারের চাহিদা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। এমনটা জানা গেল অরগানিক খাবারদাবার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে। চিত্রা অরগানিক ফার্মসের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা শাজাহান শামীম বললেন, অরগানিক খাবারের দাম কিছুটা বেশি হলেও এখন কৃষকদের আগ্রহের কারণে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যেই চলে এসেছে। শস্য প্রবর্তনার সহযোগী গবেষক অধীর চন্দ্র দাস বলেন, মানুষ সাধারণ খাবারগুলোর খারাপ প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারছে। তাই অরগানিক খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই এখন খাবার হিসেবে অরগানিক পণ্যই বেশি পছন্দ করছেন।

রাজধানীর অনেক দোকানেই এখন পাওয়া যায় অরগানিক শাক–সবজি। ঢাকার প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র, শস্য প্রবর্তনা, চিত্রা অরগানিক ফার্মস, হারভেস্ট, যাত্রা, জয়িতা, মীনা বাজার, ঢাকা ডো, ইউনিমার্ট ইত্যাদি দোকানে অরগানিক পণ্য বিক্রি হয়। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক অরগানিক ফুড বিডি, অরগানিকস সুইটস, আর্লি ফুডস, খাস ফুডসহ নানা ই–কমার্স ওয়েবসাইটে পাবেন অরগানিক পণ্য।