কারুশিল্পের জন্য সম্মাননা

কারুশিল্পী বিশ্বেশ্বর পালের হাতে আজীবন সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হচ্ছে
কারুশিল্পী বিশ্বেশ্বর পালের হাতে আজীবন সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হচ্ছে

সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন মাটির মানুষ। পুরো জীবন কাটছে মাটির সঙ্গে, সৃষ্টির আনন্দে। কাঠের চাকায় নরম কাদামাটি রেখে নিপুণ দক্ষতায় তৈরি করেন তৈজস। সেগুলো মানিয়ে যায় আধুনিক অন্দরসজ্জায়। প্রাকৃতিক কালো রং ব্যবহার করে মাটির পাত্রে দিয়েছেন নতুন চেহারা। যা দেশ ছাড়িয়ে প্রশংসা পেয়েছে বিদেশেও। আজীবন সম্মাননা তো তাঁর হাতেই মানায়। তিনি বিশ্বেশ্বর পাল। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা গ্রামের এই মৃৎশিল্পী পেলেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের (এনসিসিবি) আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ২০১৭।

সম্মাননা অনুষ্ঠান শেষে বিশ্বেশ্বর পাল বলেন ‘কখনো ভাবি নাই এই সম্মান পাব। মানুষের ভালোবাসা পেয়ে ভালো লাগছে।’

২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবনের রেজাউর রহমান সম্মেলনকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বেশ্বর পালের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। পুরস্কার নিতে উঠে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সনদ ও এক লাখ টাকা দেওয়া হয় বিশ্বেশ্বর পালকে। লুভা নাহিদ চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘কারুশিল্পের ভবিষ্যৎ কোন দিকে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সারা বিশ্ব। তবে নিত্যব্যবহারের তালিকায় কারুপণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমেই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, যা অনেকটা সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ঘটাতে হবে। শিল্পীদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করার এই প্রচেষ্টা অন্যদের এই পেশায় উৎসাহ জোগাবে।’

দেশের কারুশিল্পের প্রসারে ১৯৮৫ সাল থেকে নানা ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ। শুরু থেকেই নানা ধরনের কারুশিল্পীদের পুরস্কার ও সম্মাননা জানায় তারা। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে দেশের কারুশিল্পীদের নাম সংগ্রহ করা হয়। এরপর নানা ধরনের বাছাই-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করা হয় সম্মাননার জন্য। ২০১৬ সাল থেকে এই আয়োজনে সহায়তা করছে এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন।

এবারের আয়োজনে আরও ১১ জন কারুশিল্পীকে সনদপত্র দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। এর মধ্যে আরও আছে কাঠখোদাই শিল্পী আবদুল আওয়াল মোল্লা, আনন্দ কুমার শর্মা, সিলভেস্টার প্রশান্ত বারই, নকশিকাঁথা শিল্পী মোসাম্মাৎ কমলা বেগম, ঐতিহ্যগত খেলনা শিল্পী নাসরিন সুলতানা, পাটজাত পণ্যের শিল্পী সুফিয়া আক্তার, মায়া ভাওয়াল, জামদানি তাঁতশিল্পী আনোয়ার ইসলাম, কুরুশকাঁটা শিল্পী দিপালী মজুমদার, ট্রাপেস্ট্রি শিল্পী হাবিবুর রহমান ও পটচিত্র শিল্পী শম্ভু আচার্য।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জেন্ডার ক্লাস্টার সিমিন মাহমুদ। আরও উপস্থিত ছিলেন কারুশিল্প পরিষদের সমন্বয়ক রুবী গজনবী।