ফেসবুকে বন্ধুতালিকায় বসকে রাখবেন?

ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অফিসের বসকে বন্ধু তালিকায় রাখা কি ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ? অফিসের বসদের সঙ্গে ফেসবুকে সম্পৃক্ত আছেন, এমন প্রায় তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগ কর্মী জানিয়েছেন, অনলাইনে অফিসে বসদের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক তাঁদের অফিসে অফলাইনে কাজ করার ক্ষেত্রে বেশ সহযোগিতা করে থাকে। একটু সচেতনতার সঙ্গে ফেসবুকে ব্যবহার করলে আপনার বসের সঙ্গে আপনার অনলাইন সম্পর্ক আপনার ক্যারিয়ারে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন কর্মক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন এমন একদল গবেষক। তাঁরা এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কর্মীদের ফেসবুক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান পরিবেশ বুঝুন: আপনার অফিসের বস হয়তো আপনার সঙ্গে ফেসবুকে সম্পৃক্ত হতে না-ও চাইতে পারেন। এটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে আপনার বস যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনাকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠান, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে ভাবতে হবে, কে এ উদ্যোগটি প্রথম নেবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান কালচার বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আপনাকে দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানে যাঁরা আপনার আগে যোগ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি কী। তাঁদের সঙ্গে আপনার বস যদি এরই মধ্যে যুক্ত থাকেন, তবে আপনি তাঁকে রিকোয়েস্ট পাঠাতেই পারেন। তবে তার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো নীতিমালা আছে কি না, সেটি জেনে নেওয়া ভালো। যদি কোনো নীতিমালা থেকে থাকে, তবে আপনাকে অবশ্যই সেটি বিবেচনায় রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। পৃথিবীর অনেক প্রতিষ্ঠানেরই এ ধরনের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে।

আপনার সুনাম রক্ষা করুন: অফিসের বসকে আপনার ফেসবুকে প্রোফাইল দেখতে দেওয়ার আগে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখুন। অসংগতিপূর্ণ কোনো ছবি থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলুন, অন্য কেউ কোনো ছবি বা পোস্টে আপনাকে ট্যাগ করে থাকলে এবং সেই কনটেন্টটি আপনার পেশাদারি ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হলে সেটি সরিয়ে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে ট্যাগিং অ্যাপ্রোভাল সেবাটি এনাবল করে নিতে পারেন।

নিজেকে ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করুন: আপনি যে পোস্টগুলো দিচ্ছেন এবং শেয়ার করছেন সেগুলো আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এবং পেশাদারি মনোভাবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না, সেটি লক্ষ রাখুন। কাজের বাইরে কোন ব্যাপারগুলোতে আপনার আগ্রহ, সেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিন। সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আপনার মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটাও প্রকাশ করুন ফেসবুকে। সামাজিকভাবে আপনি আপনার পরিচিতজনদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটিও তুলে ধরতে পারেন এখানে। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অভিজ্ঞরা। সব মিলিয়ে আপনি কতটা ইতিবাচক, তার একটি চিত্র আঁকার চেষ্টা করুন ফেসবুকে।

কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করুন: অফিসের বসকে শুধু বন্ধুদের তালিকায় রাখা নয়, বরং তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত। সংগত বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর সঙ্গে আপনি অনলাইনে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগ বাড়াতে পারেন। এর ফলে অফিস মিটিংয়ে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে আপনার জড়তা দূর হয়ে যাবে। বসের সঙ্গে আপনার একটা আন্তযোগাযোগ তৈরি হবে। তাঁর চিন্তা এবং ধ্যানধারণা সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন এবং নিজেরটাও আপনি জানাতে পারবেন। যেটি একসঙ্গে একই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অভিজ্ঞরা। অফিসের বসের শেয়ার বা পোস্ট করা পারিবারিক ছবিতেও আপনি মার্জিতভাবে মন্তব্য বা ইমো দেখাতে পারেন, এটি দোষের কিছু নয় বরং পারস্পরিক সম্পর্কে উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন গবেষকেরা।