প্রেম শুরু, প্রেম শেষ

প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন হলেও জীবন থেমে থাকবে না। মডেল: নীল ও ফারহানা। ছবি: অধুনা
প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন হলেও জীবন থেমে থাকবে না। মডেল: নীল ও ফারহানা। ছবি: অধুনা

প্রায় দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল আশিক ও আদিবার (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই দুজনে এক পথে চলছিলেন। হুট করেই যেন ছন্দপতন, বাস্তবতার নানা সমীকরণ মেলাতে না পেরে দুজনের সম্পর্কচ্ছেদ। মনকে মানিয়ে প্রেমের সম্পর্ক শেষে দুজন দুদিকে চলার চেষ্টা করেন। তারপরেও পেছন থেকে কে জানি টানে তাঁদের। কোনো ভুল ছিল কি? আবারও কি ফিরে যেতে পারব?—এমন প্রশ্ন দুজনের মনে উঁকি দিচ্ছে বারবার। দ্বিধান্বিত মনের কারণে পড়াশোনা ও নিজের জীবনে যেন সময় দিতে পারছেন না দুজনে। হতাশা ভর করে সময় গুনে যাচ্ছেন তাঁরা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক কাজী রুমানা হক জানান, যেকোনো সম্পর্কের শেষের সময়টুকুতে আমরা ভেঙে পড়ি। দোষ-ত্রুটি আর ব্যর্থতাকে ধারণ করে জীবনকে অবসাদময় করে তুলি, যা আসলে ঠিক নয়। সম্পর্কচ্ছেদে মন খারাপ হতেই পারে, কিন্তু সেই মন খারাপ কখনোই দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখা যাবে না। নিজের ইতিবাচক জীবন বিকাশের জন্য সামনে পা বাড়াতে হবে। আপনি যদি নিজের মনকে বুঝতে পারেন, তাহলে যেকোনো দ্বিধা কাটিয়ে সামনে যেতে পারবেন। সম্পর্কচ্ছেদ নিয়ে কাজী রুমানা হক বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

আপনাকে এগোতে হবেই। যত দিনের সম্পর্ক থাকুক না কেন, কিংবা যত গভীর সম্পর্ক থাকুক না কেন, আপনাকে এগোতেই হবে। আপনি যদি অতীতের কথা ভাবতে থাকেন, তাহলে আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হবেন, কষ্ট পাবেন। রাতের পর রাত জেগে অতীতের সুন্দর সময়ের কথা ভাবলে আপনি আপনার বর্তমানকে নষ্ট করবেন। বর্তমান নষ্ট হলে কি আর দারুণ ভবিষ্য তৈরির সুযোগ থাকে, বলুন।

দোষ-ত্রুটি নিয়ে ভাববেন না। সম্পর্কচ্ছেদের পরে আমরা সবচেয়ে বেশি ভাবি কার দোষ কিংবা কে দায়ী। মনের সঙ্গে লড়াই করে আমরা ব্যর্থতার জন্য কারণ খুঁজে বের করি। নানা কারণেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে দোষ-ত্রুটি খুঁজে নেতিবাচক আচরণ করবেন না। দোষ-ত্রুটি মনে আসতে পারে, তা কাটিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই কিন্তু জীবন।

নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকতে হয়। সম্পর্কচ্ছেদ মানেই কিন্তু ব্যর্থতা নয়। নিজের মনের সঙ্গে কথা বলুন। নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন। এমন অবস্থায় আপনিই কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় সহায়। সম্পর্ক ভেঙে নিজেকে অপরাধী কিংবা দোষী ভেবে নিজেকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। জীবনে অন্য সব সাফল্য-ব্যর্থতার মতোই সম্পর্কচ্ছেদকে ভাবুন।

ক্ষমা করতে শিখুন। বিচ্ছেদের পর আমরা নিজেকে ক্ষমা করি না, নিজেই যেন নিজের শত্রু হয়ে যাই। আবার যে মানুষটিকে ভালোবাসতাম, তাকেও অপরাধী হিসেবে কল্পনা করতে থাকি, যা মোটেও ঠিক নয়। ওপাশের মানুষটিকে ক্ষমা করে, নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন করে সামনে পা বাড়াতে শিখুন।

নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে শিখুন। বিচ্ছেদের পরে নিজেকে একাকী ভাবা শুরু করি আমরা। বন্ধুবান্ধব ও পরিবার থেকেও বেশ দূরে সরে যাই। এ সময়টায় নিজেকে নতুন করে চেনার চেষ্টা করুন। অতীতের গোলকধাঁধায় নিজেকে আটকে রাখবেন না। নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করুন।

জীবন কখনো থেমে থাকে না। দিনের পর দিন অতীতের সম্পর্ক নিয়ে যতই ভাববেন, ততই আপনি জীবনের দৌড় থেকে ছিটকে পড়বেন। বিচ্ছেদের পরে মন খারাপ হবেই, তা সাময়িকভাবে নিতে শিখুন। নিজেকে নিজে এগিয়ে নিতে না পারলে কেউ আপনাকে হতাশা থেকে টেনে তুলতে পারবে না।

নিজেকে শ্রদ্ধা করুন। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরে নিজেকে ছোট আর দুর্বল মনে হয়। এটা কখনো ভাববেন না। জীবনে ব্যর্থতা আসবেই, নিজেকে কখনো অসম্মান করবেন না।

দৃঢ় চিন্তা করতে শিখুন। সম্পর্ক থাকাকালীন ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা ভাবি আমরা, আর বিচ্ছেদ হলেই বিরহ। সম্পর্কের সমীকরণ ভেঙে গেলেও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনবেন না। সব সময় ইতিবাচক ও সৃজনশীল ভাবনায় মনকে ব্যস্ত রাখুন।

প্রতিদিন নিজেকে ছাপিয়ে যান। নিজেকে বদ্ধ ঘরে আটকে রাখলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। পড়াশোনা করুন, কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দিন, নিজের দক্ষতা বিকাশে মনোযোগী হোন। নিজের অতীতকে ছাপিয়ে নিজেকে নতুন করে পৃথিবীর কাছে প্রতিষ্ঠা করুন।