ঠিকঠাক ইফতারি

ওটস হতে পারে স্বাস্থ্যকর ইফতারি। ছবি: নকশা
ওটস হতে পারে স্বাস্থ্যকর ইফতারি। ছবি: নকশা

রোজার মাসে তিনটি সময়ের মাধ্যমে খাবার খাওয়া হয়ে থাকে। সাহ্‌রি, ইফতার ও রাতের খাবার। এই তিনটি সময়ের মধ্যে রোজাদারকে তাঁর দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে হয়। তাই সুষম খাদ্যতালিকা নির্বাচন অনেক জরুরি। নানা রকম পুষ্টিকর খাবার দিয়ে ইফতার করলে শরীরের পুষ্টি চাহিদার পাশাপাশি স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে পুরো রোজায়।

শর্করা

ইফতারের মেন্যুতে সঠিক পরিমাণে শর্করা রাখা অনেক জরুরি। যেমন-চিড়া, কলা, মুড়ি, নুডলস, ঘরে তৈরি স্যান্ডউইচ, পাস্তা, আলুর চপ ইত্যাদি। এ ছাড়া অনেকে রুটি বা ভাত খেয়ে থাকেন ইফতারের মেন্যুতে। বহুমূত্র রোগীদের তাঁদের ইনসুলিন ওষুধের ওপর ভিত্তি করে শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে। গুড় বা চিনি দিয়ে তৈরি খাবারও শর্করার মধ্যে পড়ে। স্বাস্থ্য রক্ষায় সাদা চিনি না খাওয়াই ভালো। তবে মধু বা গুড় পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যাবে।

আমিষ

ইফতারের মেন্যুতে টক দই বা টক-মিষ্টি দই, ডিম, দুধের তৈরি খাবার, পনির, ডালের বড়া, ছোলা ইত্যাদি খাওয়া হয়ে থাকে। ছোলা ভুনা খাওয়ার চেয়ে সেদ্ধ করে শসা ও টমেটো দিয়ে মাখিয়ে খেলে ক্যালরি অনেক কমে যায়। আবার ডালের বড়া বা পেঁয়াজি রোজায় প্রতিদিন না খাওয়া ভালো। তবে ডালের সঙ্গে বিভিন্ন মৌসুমী সবজি মিশিয়ে পাকোড়া করে খেলে আমিষের সঙ্গে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। দইয়ের লাচ্ছি বা দই-চিড়া খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। হজমের সহায়ক হয়। ডিম যেকোনো রোজাদারের জন্য একটি ভালো ইফতার ও আদর্শ আমিষ।

চর্বি

ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খেলে প্রচুর চর্বি যোগ হয় শরীরে। ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তাই ভালো প্রাকৃতিক চর্বিসমৃদ্ধ খাবার যেমন-পনির, মুরগির মাংসের তৈরি রেসিপি, দুধের তৈরি খাবার, বাদাম, ডিম ইত্যাদি দিয়ে তৈরি খাবার থেকে যে প্রাকৃতিক চর্বি পাওয়া যায়, সেটা শরীরের জন্য ভালো। পুরো রোজায় আপনাকে প্রাকৃতিক চর্বি ছাড়াও ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে সরবরাহ করে, যা ত্বক সুস্থ রাখবে।

ভিটামিন ও মিনারেলস

মৌসুমি ফল বা ঘরে তৈরি ফলের শরবত বা (চিনি ছাড়া) ফলের সালাদ, ফলের কাস্টার্ড, সবজি পাকোড়া, সবজি স্যুপ, সবজি নুডলস, সবজি স্যান্ডউইচ ইত্যাদি থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল পাবেন।

তরল

রোজায় সুস্থ থাকার অনেক বড় শর্ত হলো হাইড্রেট থাকা। এ মৌসুমে গরম থাকায় পানির পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যকর তরল জাতীয় পদ ইফতারের মেন্যুতে থাকতে হবে। ডাবের পানি, টক দইয়ের লাচ্ছি, তোকমা শরবত, লেবুর পানি, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর তরল। ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত ২ থেকে আড়াই লিটার পানি অবশ্যই খেতে হবে। এ ছাড়া রোজায় ক্লান্তি দূর করতে রং চা বা গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে।

ইফতারের পরিমাণ

সঠিক পরিমাণে ইফতারি খাওয়া সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত পরিমাণ ইফতারি খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা, রক্তে কোলস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া ছাড়াও ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে ইফতারি খাওয়া অনেক জরুরি। আবার কম পরিমাণে ইফতারি খেলেও তা ক্লান্তিবোধ, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই রোজায় সঠিক পরিমাণ ও ক্যালরিসমৃদ্ধ ইফতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ইফতারের সতর্কতা

বাইরের ভাজাপোড়া, রং ব্যবহৃত হয়েছে এমন খাবার, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা বাসি ইফতারি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিছু কিছু খাদ্য উপাদানের তৈরি ইফতারি যেমন-টেস্টিং সল্ট, টেস্ট মেকার, প্যাকেটজাত মসলা, কৃত্রিম রং, ডায়েট চিনি ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। তাই ইফতারে অবশ্যই সঠিক মেন্যু নির্বাচন করে ঘরে তৈরি করে সবার সঙ্গে ইফতারের আনন্দ উপভোগ করুন।

  •  অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার যেমন—গোলাপজাম, বুন্দিয়া, জিলাপি, বালুশাই ও অন্যান্য মিষ্টি।
  •  অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন—ঘিয়ে ভাজা খাবার, চিকেন ফ্রাই, ফ্রাইড ফিশ, সি হালুয়া ইত্যাদি।

বিকল্প স্বাস্থ্যসম্মত খাবার

  •  বেকড সমুচা, মম, সিদ্ধ ওয়ানথন, বেকড রোল
  •  পরোটা বা লুচির পরিবর্তে রুটি
  •  চিকেন ফ্রাই বা ফ্রাইড ফিশের পরিবর্তে গ্রিল ফিশ বা চিকেন
  •  পেস্ট্রি কেকের পরিবর্তে ঘরে তৈরি ফ্রুট কেক বা প্যান কেক
  •  সিরা বা ঘিয়ের মিষ্টান্নের পরিবর্তে দুধের তৈরি মিষ্টান্ন যেমন—সেমাই, সাগু, পায়েস, পুডিং, ফ্রুটস কাস্টার্ড ইত্যাদি।

রান্নার যেসব পদ্ধতি এড়িয়ে চলবেন

  •  ডুবো তেলে ভাজা
  •  ঝলসানো বা কয়লায় পোড়ানো

স্বাস্থ্যকর রান্না

  •  অল্প তেলে হালকা আঁচে ননস্টিকি ফ্রাই প্যানে ভাজা
  •  গ্রিল করা
  •  বেকিং ইত্যাদি।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা