চাকরি পরিবর্তনের আগে দশটি বিষয় ভেবে দেখুন

রাগ বা অভিমানের কারণে হুট করে চাকরি ছাড়া ঠিক নয়। ছবি: অধুনা
রাগ বা অভিমানের কারণে হুট করে চাকরি ছাড়া ঠিক নয়। ছবি: অধুনা

একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন সাবরিনা হোসেন (ছদ্মনাম)। দীর্ঘদিন কাজ করে সম্প্রতি কর্মস্থল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হুট করেই একদিন অফিসে গিয়ে জানান যে তিনি আগামীকাল থেকে আর অফিসে আসবেন না। সাবরিনার এমন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বেশ বিপাকে পড়ে যায় অফিস। এতে নিজের সুবিধা হলেও, অফিসে আপনার প্রতি একটি খারাপ ধারণা তৈরি হবে।

‘কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কখনোই হুট করে নেওয়া উচিত না। নিজের ক্যারিয়ারকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য চাকরি পরিবর্তনের সময় যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিতে হবে।’ এমনটাই মনে করেন আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্র্যান্ড অ্যান্ড করপোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান মাহজাবীন ফেরদৌস। তিনি তরুণদের যেকোনো ক্ষেত্রে চাকরি পরিবর্তনের আগে বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে সামনে এগোনোর পরামর্শ দেন।

১. কেন চাকরি পরিবর্তন করছেন তা জানুন আগে: পেশাজীবনে সামনে এগিয়ে যেতে চাকরি পরিবর্তন স্বাভাবিক ঘটনা। আপনি কতটা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে আপনার ভবিষ্যৎ। কোন কারণে চাকরি পরিবর্তন করছেন তা নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন।

২. এক অবস্থানে দীর্ঘদিন: বর্তমান কর্মক্ষেত্রে কি একই অবস্থানে দীর্ঘদিন কাজ করছেন? সময় পেরোচ্ছে কিন্তু পেশাজীবনে সামনে এগোতে পারছেন না। এমন সমীকরণে আটকে গেলে চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিন।

৩. দক্ষতা অর্জনে সময় দিন: চাকরি পরিবর্তনের আগে নতুন কর্মক্ষেত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করায় সময় দিন। নতুন অফিসে যদি আপনার কাজের ধরন আলাদা হয়, তাহলে হয়তো নতুন কোনো দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে। সেদিকে নজর রেখে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

৪. ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করুন: আপনি হয়তো চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, এ ক্ষেত্রে বর্তমান কর্মক্ষেত্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আপনার আগ্রহের কথা জানান। এ ক্ষেত্রে আপনার পরিবর্তে নতুন কাউকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য অফিসকে সময় দিন। আপনি হুট করে অফিসে আসা বন্ধ করে দিলে কর্মক্ষেত্রের কাজে সমস্যা হতে পারে।

৫. কোথায় যাচ্ছেন তা খেয়াল করুন: বেতন বেশি হলেও নতুন কর্মক্ষেত্রে আপনার সামনে এগোনোর সুযোগ কতটুকু তা অংক কষে বের করুন। চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই চাপ নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

৬. সময় হাতে রাখুন: এ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নিলেন আর পরের সপ্তাহে চাকরি পরিবর্তন করলেন- এমনটা কখনোই করবেন না। চাকরি পরিবর্তনের জন্য হাতে অন্তত দু-তিন মাস সময় রাখুন।

৭. নতুন কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রাখুন: আপনি হয়তো ধীরস্থির পরিবেশে কাজ করতে পছন্দ করেন। যেখানে যেতে চাইছেন সেই অফিসটি হয়তো খুব দ্রুত কাজে অভ্যস্ত। কিংবা সেই অফিসের পরিবেশ আপনার উল্টো। সেই নতুন পরিবেশে নিজেকে কীভাবে মানিয়ে নেবেন তা জেনে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।

৮. ভবিষ্যৎ ভেবে পা বাড়ান: আপনি চাকরি পরিবর্তনের লক্ষ্যে নতুন যেখানে যাচ্ছেন সেই অফিসটির সাফল্য, ব্যর্থতা আর বর্তমান-ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করুন। হুট করে নতুন জায়গায় কাজের চাপে হতাশ হওয়ার ভয় এড়িয়ে ভবিষ্যৎ ভেবে পা বাড়ান।

৯. সম্পর্কে জোর দিন: নতুন চাকরিতে যোগদান করলেও পুরোনো কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন। নতুন সম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি পুরোনো সম্পর্কগুলোর কথা মনে রাখুন। কখনোই কারো সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে দূরত্ব তৈরি করে সরে যাওয়া উচিত নয়।

১০. দায়িত্বশীল আচরণ করুন: চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দায়িত্বশীল আচরণ করুন। রাগ থেকে কিংবা অভিমানী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

সূত্র: ফোর্বেস ও এন্টারপ্রেনার্স ডট কম