সোনালি আভার তৈজস

কাঁসা ও পিতলের তৈজসের নকশায় থাকে বৈচিত্র্য। ছবি : নকশা
কাঁসা ও পিতলের তৈজসের নকশায় থাকে বৈচিত্র্য। ছবি : নকশা

বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে কাঁসার ব্যবহার। কাঁসার তৈজসপত্র একসময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। ঘর সাজানোর নানা উপকরণও তৈরি হতো কাঁসা দিয়ে। এখনো কাঁসার তৈজসের চাহিদা রয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজার সময় কাঁসার নতুন তৈজসপত্র কেনার হার বেড়ে যায়।

পুরান ঢাকা, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন এলাকার তৈজসপত্রের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে কাঁসা ও পিতলের বিভিন্ন সামগ্রী। বাংলাবাজারের শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী বাসনালয়ের সামনে থেকেই চোখে পড়ে নানা রকম কাঁসার বাসনপত্র ও পূজার নানা সামগ্রী। এই দোকানের পরিচালক এস সি দেব জানালেন, এখন ঢাকার বিভিন্ন দোকানে কাঁসার তৈজসপত্র পাওয়া গেলেও পুরান ঢাকাই আসল কাঁসার বাজার। খাঁটি কাঁসার সুনাম আছে বলেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখান থেকে এখনো কাঁসার সামগ্রী কেনেন।

অন্যদিকে শাঁখারী বাজারের ধামরাই বাসনালয়ের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান বলেন, ‘সারা বছরই কিছু কিছু কাঁসার জিনিস বিক্রি করে থাকি। তবে দুর্গাপূজা এলে কাঁসার সামগ্রীর বিক্রি বেশি হয়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায়ও রয়েছে কাঁসার এক বিশাল বাজার।

কাঁসা ও পিতলের হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে গ্লাস, প্লেট, পানির জগ, পেয়ালা, পট, কুপি-বাতি, হুঁকা, সুরমাদানি, পানদানি, লবণদানি, কলস, টিফিন ক্যারিয়ার, পূজার ব্যবহার্য ঘণ্টা, কাঁসর–ঘণ্টা, করতাল, পিতলের তৈরি দেব–দেবীর মূর্তি, তুলসীপত্র, দ্বীপ, পঞ্চপ্রদীপ, পুষ্প থালা, ঘটি, আমদানিসহ বিভিন্ন তৈজসপত্রের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ঘর সাজানোর উপকরণ। যার মধ্যে রয়েছে বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়া, হরিণ থেকে শুরু করে অনেক কিছু।

এ তো গেল পুরান ঢাকার কথা, এবার সরে আসি নতুন ঢাকার দিকে। এলিফ্যান্ট রোডেও কিন্তু রয়েছে কাঁসার অনেক দোকান। এ এলাকার স্মৃতিস্বরূপ দোকানের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর জানান, প্রায় ৪৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। পূজা এলেই দোকানটি ফিরে পায় তার আগের রূপ। বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, পূজা উপলক্ষে শুধু পুরান ঢাকা বা এলিফ্যান্ট রোডই নয়, কাঁসার বাসনকোসনে ভরে গেছে দেশি শোরুমের দোকানগুলো। কাঁসার থালাবাসনের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে পানদানি, মোমদানি, শোপিস, প্রদীপ বাটি, সিঁদুরদানি, ঘোড়া, নৌকা, হাতি, শাপলা, পুতুল ইত্যাদি। কাঁসার পাত্র ও শোপিসের নকশাতেও এসেছে নতুনত্ব। বিশেষ করে আড়ং, অঞ্জন’স, যাত্রায় কাঁসার সংগ্রহ বেশ সুন্দর।

কিছু সামগ্রী আছে, যা তৈরি করা হয় শুধু কাঁসা দিয়েই। আবার কিছু শুধু পিতল দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে। দোকানিরা জানালেন, নকশা, উপকরণ ও ব্যবহারের ভিন্নতার জন্যই কাঁসা ও পিতলের সামগ্রী আলাদা হয়।

কাঁসা কেনাকাটা করতে এসেছিলেন দিপা ঘোষ। জানালেন, সারা বছরই ব্যবহার করি। স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তাই একটু দামি হলেও বহু বছর থেকেই ব্যবহার করা হয় কাঁসা।

যত্ন

ব্যবহারে পর কাঁসার থালাবাসন জমিয়ে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলুন এবং পানি ঝরিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে তুলে রাখুন। কাঁসার পাত্র পরিষ্কার করতে তেঁতুল, লেবু কিংবা ভিনেগার দিয়ে ঘষে নিন। দাগ পড়ে গেলে তেঁতুল গোলানো পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এরপর নরম কাপড় দিয়ে ধীরে ধীরে ঘষতে থাকুন। দাগ উঠে যাবে।

দরদাম

সাধারণত কেজি কিংবা সের হিসেবে এসব পণ্য বিক্রি হয়। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে কাঁসা এবং ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পিতলের তৈরি পণ্যসামগ্রী। পিতলের তৈরি হাঁড়ি পাবেন প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকায়, গ্লাস ১ হাজার ২০০ টাকা, প্লেট ১ হাজার ৬০০ টাকায় এবং থালা ১ হাজার ৬০ টাকায়। কাঁসার তৈরি হাঁড়ি পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকা কেজি হিসেবে, গ্লাস ২ হাজার ২০০ টাকায়, প্লেট ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং থালা ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। কেজি দরের হিসাব ছাড়াও আলাদা একটি করেও কিনতে পারবেন আপনি।

কাঁসা ও পিতলের বাটি প্রতিটি ২৫০ থেকে ১২০০ টাকা, থালা প্রতিটি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, জগ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চামচ প্রতিটি ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা, গ্লাস প্রতিটি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, সাজানোর জিনিস ১৫০ থেকে ৫০০০ টাকা, প্রদীপদানি ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আড়ংয়ে কাঁসার মোমদানি ১০৯৯ থেকে ১১৬৩ টাকা, বাটি প্রতিটি ৮৭০ টাকা, সিঁদুর বাটি ১৮৭ টাকা, শোপিস প্রতিটি ১৮০ থেকে ১২০০ টাকা।