ব্যস্ত দিনে ত্বকের যত্ন

কর্মজীবনে ব্যস্ততা তো থাকবেই, এর ফাঁকে নিজেরও যত্ন নিতে হবে। ছবি: নকশা
কর্মজীবনে ব্যস্ততা তো থাকবেই, এর ফাঁকে নিজেরও যত্ন নিতে হবে। ছবি: নকশা

নিত্যদিন ব্যস্ততায় থাকেন কর্মজীবী নারীরা। অফিসের হাজারটা কাজের চিন্তা, ছুটোছুটির শেষ নেই। সব দিক সামলে নিজেরও থাকা চাই পরিপাটি। এই পরিপাটি থাকার জন্য খুব বেশি সময়ও দরকার পড়ে না। পরিকল্পনা করে কাজগুলো সাজিয়ে নিলে, ব্যস্ত জীবনেই সময় মিলবে নিজের জন্য।

বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বললেন, ‘একজন কর্মজীবীর অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা হলেও যাওয়া-আসা, তৈরি হওয়া, ফিরে এসে ঘরের কাজ—মিলিয়ে প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা সময় চলে যায়। কর্মব্যস্ত দিনগুলোয় তাই নিয়ম করে নিয়ে কিছুটা সময় দিতে হবে নিজের যত্নে।’ আর সপ্তাহান্তে একবার একটু বাড়তি যত্ন নিলেই সুস্থ ও সতেজ থাকা সম্ভব বলে জানালেন তিনি। 

রোজনামচায় ঘুম ভেঙে যা করা যায়

ঘুম ভেঙে উঠে মুখ পরিষ্কার করুন খুব ভালোভাবে। ফেসওয়াশ বা অন্য যা কিছু নিয়মিত মুখ পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করেন, সেটির সাহায্যেই ৫ মিনিট মুখ ম্যাসাজ করে পরিষ্কার করে নিন এই সময়টাতে। কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরও মেকআপ করা যেতে পারে, এতে ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় না।

সারা দিনের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সকালে ভালোভাবে নাশতা করা জরুরি। কাঠবাদাম, মধু, কলা ও ডিম রাখুন সকালের নাশতায়, এতে আপনি থাকবেন সতেজ। মধু ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আনে। সকালে ব্যায়ামের অভ্যাস করতে পারেন। 

অফিসে বিরতিতে

দুপুরের খাবারের বিরতিতে ব্যবহারের জন্য ছোট ফেসওয়াশ ও ময়েশ্চারাইজার রাখুন ব্যাগে। সম্ভব হলে এগুলো অফিসের লকারেও রেখে দিতে পারেন। বিরতির সময় ২-৩ মিনিটে মুখ পরিষ্কার করুন। এবার চট করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ফেলুন। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অফিসেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। 

বাড়ি ফিরে

বাড়ি ফিরেই মুখ পরিষ্কার করে নিন ফেসওয়াশ বা অন্য পরিষ্কারকের সাহায্যে। তবে এবার মুখ পরিষ্কার করে আর ময়েশ্চারাইজার লাগানোর দরকার নেই। অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সেরে একেবারে ঘুমের আগে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। 

সপ্তাহান্তে ত্বকের যত্নে

সপ্তাহান্তে ছুটির ১ দিন বা ২ দিন অন্যান্য কাজ সেরে যে সময়টুকু অবসর পান, সেই সময়টুকুতে যত্নের বিষয়ে জানালেন শারমিন কচি—

ভালো ব্র্যান্ডের ডিপ ক্লিনজার ম্যাসাজ করুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ক্লিনজার মুছে, নতুনভাবে আবার ক্লিনজার বা ম্যাসাজ ক্রিম হাতে নিয়ে এর সঙ্গে খানিকটা স্ক্র্যাব মিশিয়ে ২-৩ মিনিট স্ক্র্যাবিং করুন। এতে সারা সপ্তাহের ধুলা-ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে। মৃতকোষগুলোও সরে যাবে।

স্ক্র্যাবিং শেষে মুখ পরিষ্কার করে গরম পানিতে রুমাল ভিজিয়ে মুখে ভাপ নিন। গরম পানির ভাপ নেওয়া শেষে ঠান্ডা পানি বা বরফ ব্যবহার করুন। এরপর পছন্দমতো যেকোনো একটি প্যাক ব্যবহার করুন।

·মসুর ডাল বাটা বা গুঁড়া, টক দই ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন। টক দই ও মধু নেবেন সমপরিমাণ। মসুর ডালের অংশটা টক দইয়ের পরিমাণের দ্বিগুণ বা তিন গুণ হতে পারে।

·হোয়াইটেনিং ফেসপ্যাক হিসেবে মাষকলাই বা মসুর ডাল, পাকা টমেটো ও মধু দিয়ে প্যাক বানাতে পারেন। টমেটোর বিচি ফেলে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিয়ে প্যাকের জন্য ব্যবহার করুন। মসুরের চেয়ে মাষকলাইয়ের ডাল হোয়াইটেনার হিসেবে বেশি ভালো কাজ করে।

দুধের সর, হলুদগুঁড়া, মধু এবং বেসন অথবা ময়দা দিয়েও হোয়াইটেনিং প্যাক তৈরি করা যেতে পারে।

প্যাক শুকিয়ে যাওয়ার পর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। 

চুলের সুস্থতায়

সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন তেল মালিশ করুন। শ্যাম্পু ব্যবহারের ২ ঘণ্টা আগে বা আগের রাতে চুলে তেল মালিশ করা যেতে পারে। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে অবশ্যই হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। পানিতে অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু মিলিয়ে ফেনা তৈরি করে ব্যবহার করা ভালো।

সপ্তাহে এক দিন তেল মালিশের পর হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ২ টেবিল চামচ হেনাগুঁড়া, ৩ টেবিল চামচ মেথিগুঁড়া, ১ টেবিল চামচ শিকাকাই গুঁড়া, ১টি ডিম, ১ টেবিল চামচ টক দই ও চায়ের লাল লিকার (আধা কাপ) ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে প্যাক তৈরি করা যায়। মেশানোর ১ ঘণ্টা পর প্যাকটি ব্যবহার করে শুকিয়ে যাওয়ার পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এরপর কন্ডিশনার লাগান।

হাত ও পায়ের যত্নে

সপ্তাহে এক দিন ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর করতে পারেন বাড়িতেই। নেইলপলিশ থাকলে রিমুভারের সাহায্যে তা উঠিয়ে ফেলুন। গরম পানিতে শ্যাম্পু, ১ চা–চামচ লবণ আর আধা কাপ লেবুর রস মিশিয়ে দুটি আলাদা পাত্রে নিয়ে হাত ও পা আলাদাভাবে পরিষ্কার করুন। নেইল ব্রাশ বা পুরোনো টুথব্রাশের সাহায্যে হলদেটে ও ময়লা অংশগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। নখ কেটে ছোট করুন।

হাত-পায়ের জন্য ডিপ ক্লিনজিং ও স্ক্র্যাবিংয়ের পর মুলতানি মাটির প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। মুলতানি মাটির সঙ্গে শুধু গোলাপজল মিশিয়ে নিন। চাইলে চন্দনের গুঁড়াও মেশানো যায়। প্যাক ধুয়ে ফেলার পর ডিপ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।