শিশুর প্রথম ছয় বছর

গোসলের পর শিশুর ত্বকে বেবি লোশন ব্যবহার করা যায়। ছবি: অধুনা
গোসলের পর শিশুর ত্বকে বেবি লোশন ব্যবহার করা যায়। ছবি: অধুনা

বছরের এই সময়টা স্বাস্থ্যের জন্য খুব খারাপ। দিনে রোদের তাপ, ভোররাতে শীত শীত ভাব। শোয়ার সময় ফ্যান ছেড়ে ঘুমালে শেষরাতে ঠান্ডা লেগে যায়। তাই শোয়ার সময় কাঁথা, লেপ বা গরম কাপড় পাশে নিয়ে ঘুমান এবং ফ্যান একেবারে জোরে না দিয়ে আস্তে চালিয়ে দিন। রাতের বেলায় শিশুদের ক্ষেত্রে একটু বাড়তি নজর দিন।

১ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুর যত্ন
* এই বয়সে শিশুরা অনেক খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করে। তাই খুব বেশি গরম ও ভারী কাপড় পরানোর প্রয়োজন হয় না। তবে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ও বিকেলে খেলতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত উষ্ণতা নিশ্চিত করুন।
* স্কুলে পরস্পরের মাধ্যমে শীতকালে কিছু ছোঁয়াচে চর্মরোগ হতে পারে। তাই বাচ্চার ত্বকের প্রতি খেয়াল রাখুন। নিয়মিত লোশন লাগান যেন ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়।
* গোসলের আগে সরিষার তেল ব্যবহার না করে জলপাই তেল ব্যবহার করাই ভালো। গোসলের পর বেবি লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সাবান এবং এক দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
* শাকসবজি ও ফল, যেমন: কমলা, বরই—এগুলো বেশি করে খেতে দিন।
* ত্বকের যত্নে শিশুর গায়ে বেবি অয়েল বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন।

সতর্কতা
শীতের শুরুতে এবং রোদ উঠলে মাঝেমধ্যেই শিশুর লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি রোদে দিতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ঝেড়ে ঘরে রাখতে হবে। আর ধুলাবালু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসবের ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।

যা করবেন না
* অযথা শিশুকে অতিরিক্ত সোয়েটার পরিয়ে রাখবেন না।
*  শিশুর নাক বা মুখের ওপর কাপড়, লেপ, কম্বল ইত্যাদি দেবেন না।
* জ্বর হলে শিশুকে অতিরিক্ত জামাকাপড় পরাবেন না। এতে শরীরের তাপ আরও বেড়ে যায়।

১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর যত্ন
* শিশুকে প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণ রাখুন। স্যাঁতসেঁতে ঘরেও তাকে রাখা ঠিক হবে না।
* বাচ্চাকে বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ান। ঘুমের মধ্যে ঠান্ডা দুধ দেবেন না।
* বয়স ছয় মাসের বেশি হলে বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিন। খিচুড়িতে ডিমের সাদা অংশ, লাল শাক, পালং শাক অল্প করে দিতে পারেন। লেবুর রস দেবেন, কমলার রস খাওয়াবেন। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়বে।
* যেসব বাচ্চা হামাগুড়ি দেয়, দেখবেন, তারা যেন ঠান্ডা মেঝেতে হামাগুড়ি না দেয়। তবে কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, কার্পেটের রোয়া বা ধুলা থেকে অ্যালার্জি হয়। তাই মাদুর বা ম্যাট ব্যবহার করাই ভালো।
* ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে এক দিন অন্তর গোসল করান। গোসলের পর বেবি লোশন লাগাবেন। অনেকে নবজাতককে নিয়মিত গোসল করান না। এ কারণে বাচ্চার গায়ে ফুসকুড়ি ওঠে এবং এর মধ্যে পুঁজ জমে যায়।
* এ সময় খুব গরম কাপড় পরানোর দরকার নেই। তবে মোটা সুতি কাপড় পরানো যেতে পারে। আঁটসাঁট বা উলের কাপড় পরালে শিশুর শরীর ঘেমে ঘামাচি উঠতে পারে।
* বাচ্চাকে নরম কাপড়ের জুতা পরানোর অভ্যাস করুন।
* এ বয়সী বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই সর্দি–কাশি সহজেই লেগে যায়। বাচ্চাকে খুব জনবহুল জায়গায় (মেলা, পিকনিক) না নিয়ে যাওয়াই ভালো।

ডা. মো. আল আমিন মৃধা : স্বাস্থ্য বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।