ভালোবাসায় বসন্তের ফুল...

বসন্তের ফুলে ছেঁয়ে গেেছ চারদিক। মডেল: জান্নাত, ছবি: কবির হোসেন
বসন্তের ফুলে ছেঁয়ে গেেছ চারদিক। মডেল: জান্নাত, ছবি: কবির হোসেন

তোমার জন্য সকাল দুপুর,
তোমার জন্য সন্ধ্যা
তোমার জন্য সকল গোলাপ
এবং রজনীগন্ধা

হেলাল হাফিজের লেখা ‘অচল প্রেমের গদ্য’ থেকে ধার করা ওপরের লাইন কটি। অচল কিংবা সচল, প্রেম কিংবা বিয়ে—সবকিছুতেই ফুল অপরিহার্য। ফুল ছাড়া যেকোনো আয়োজনই অসম্পূর্ণ। শ্রদ্ধা বলি আর ভালো লাগা বলি, হেলাল হাফিজের ভাষায় সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা—ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম বাহন ফুল।

ফুলের বাগান নয়, বরং গুগলে ঘুরে বেড়ালে আপনি সহজেই জানতে পারবেন, লাল গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক, হলুদ গোলাপ বন্ধুত্বের বার্তাবাহক। সাদা গোলাপ বোঝায় পবিত্রতা। গোলাপি রঙের গোলাপ নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা। অসীম ভালোবাসার প্রতীক হয়ে সামনে কখনো কখনো আসে বেগুনি রঙের গোলাপ। অবশ্য অনেকে কালো রঙের গোলাপকে বোঝায় শোকের বার্তা হিসেবে।

কিন্তু শাহবাগের মোড়ে দাঁড়ালে আপনি নানা ধরনের ফুলের রাজ্যে হারিয়ে যাবেন। শুধু গোলাপের ব্যাখ্যায় হয়তো তখন আর বুঁদ হয়ে থাকবেন না। বরং মুগ্ধ হবেন নানা জাতের, রঙের, বর্ণের, আকারের, গন্ধের ফুল দেখে। কারণ আপনি ফুল ভালোবাসেন।

রাজধানীর ফুলের রাজ্যে

ঢাকায় ফুলের জন্য রয়েছে মূলত দুটি বাজার। একটি শাহবাগ আরেকটি আগারগাঁও। এই দুটি বাজারেই ভোররাত থেকে জমে ওঠে ফুলের বেচাকেনা। তবে সেটা পাইকারি। খুচরা বিক্রি শুরু হয় খানিক পর থেকে। তবে এই ফুলের বাজারের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো এখানে দেশি ফুলের পাশাপাশি বিদেশি ফুলও পাওয়া যায়। যাঁরা বিয়ে বা বিভিন্ন উৎসবের জন্য আলাদা করে ফুল কিনতে চান, তাঁরা পাইকারি দরেও ফুল কিনতে পারবেন।

তবে আগারগাঁওয়ের চেয়ে সারা দিন বেশি ফুল বিক্রি হয় শাহবাগে। বর্ষা কিংবা গ্রীষ্ম যে ঋতুই হোক, ফুল মানেই শাহবাগ। ভালোবাসায়, জন্মদিন, বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী আয়োজনের আগে সব দম্পতি কিংবা একজনকে দেখা যায় ফুল কিনতে। এখন হলো ফুলের মৌসুম। ফাল্গুন তো রীতিমতো প্রেমের। এই সময় ফুল ছাড়া কিছু ভাবা যায় না। এ কারণে শাহবাগের ফুলের দোকানে দেখা মিলল নানা ধরনের ফুলের। শুধু দেশি ফুলই নয়, বিদেশি ফুলও বিক্রি হচ্ছে সেখানে। বিদেশি ফুলের তালিকায় সবার আগে আছে অর্কিড। এটি বেশি আসে ভারত ও চীন থেকে। লিলি ফুলও আসে দেশের বাইরে থেকেই। শাহবাগের নীলকণ্ঠ দোকানের মালিক মাহাবুব রহমান জানালেন, দেশেও এখন এসব ফুলের চাষ হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী কম পাওয়া যায়, এ কারণেই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়।

বাজারে বসন্তের ফুল
বাজারে বসন্তের ফুল

তোড়ায় তোড়ায় ভালোবাসা

তবে শুধু ফুলই নয়, ফুলের তোড়া বানিয়েও বিক্রি হয় শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ের ফুলের দোকানগুলোয়। ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে মনে হতেই পারে, ‘তুমি একগোছা ভালোবাসার গন্ধ মাখা ফুল হাতে আমার সম্মুখীন/ আমি হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল, চোখে কথা নিয়ে তোমার সম্মুখীন।’

মুখোমুখি ভালোবাসার কথা বলার জন্য ফুলের তোড়া জরুরি। শাহবাগে ফুলের দোকানে গিয়ে ফরমাশ দিলেও তোড়া বানিয়ে দেন দোকানিরা। পছন্দের ফুলও দেখিয়ে দিতে পারেন। শাহবাগের নাঈম পুষ্প বিতানের স্বত্বাধিকার নাঈম হোসেন জানালেন, ‘আমাদের এখানে তোড়া বানানোই থাকে। যে কেউ এসে দেখে পছন্দ করে নিয়ে যেতে পারেন। আবার চাইলে ক্রেতার চাহিদামতো তোড়া বানিয়ে দিতে পারি।’

উৎসবে–পার্বণে কেন ফুল জরুরি?

কদিন আগে গেল পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। ফুল ছাড়া ফাগুন ও ভালোবাসা কথা ভাবাই যায় না। ভালোবাসার প্রতীক তো ফুলই। দিবসে যা–ই ঘটুক, ফুলের দাম ওঠানামা করে ওই দিনগুলোতেই। ভালোবাসা দিবসের কথাই ধরা যাক, ওই দিন একেকটা গোলাপ ৫০ টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাথার লাগানো ফুলের মুকুট বিক্রি হয়েছে ১৫০-২০০ টাকায়। তবে ইদানীং চীন থেকে প্লাস্টিকের ফুল আসছে। যেগুলোর কারণে আসল ফুলের ব্যবহার একটু কম হচ্ছে। উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গের বেলায় প্লাস্টিক ফুল ব্যবহার না করারই ভালো।

দেশি ফুলের ঘ্রাণ

দেশি ফুলের তালিকা কিন্তু বেশ লম্বা। গ্লাডিওলাস থেকে শুরু করে গোলাপ সব ধরনের দেশি ফুল মেলে শাহবাগে। তবে দেশি ফুলের উৎস হলো সাভারের বিরুলিয়া এবং যশোরের গদখালী। সেখান থেকে ফুল সরাসরি আসে ঢাকায়। অনেক সময় ঢাকা থেকে দেশের নানা প্রান্তে চলে যায় ফুল। অনেক সময় সরাসরিও চলে যায়। তবে পাইকারি বাজারের দামের ওপরই নির্ভর করে সারা দিনের ফুলের দাম।

শাহবাগের বিক্রেতারা জানালেন, একেকটি গোলাপ কেনা পড়ে ৪-৮ টাকায়। বিক্রি হয় ১০-১২ টাকায়। গোলাপ বিভিন্ন রকমের আছে। লাল গোলাপের পাশাপাশি মেলে সাদা ও হলুদ গোলাপও। গ্লাডিওলাস বিক্রি হয় ২০ টাকা করে। কেনা পড়ে ১৫ টাকায়। রজনীগন্ধা একেকটি ৮-১০ টাকায় বিক্রি হয়। জারবেরা বিক্রি হয় ১৫-২০ টাকায়। গাঁদা ফুল বিক্রি হয় ২০০ টাকা তোড়া। জিপসি পাওয়া যায় ১০ টাকা তোড়া।

তবে দামে কী–বা আসে যায়। কবি তো বলেছেনই, ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা/ খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি/ দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার/ ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!’ (ফুলের ফসল, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)