চোখের চাপ বাড়লে যা করবেন

রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো চোখেরও চাপ বাড়তে পারে। তবে চোখের এ চাপ মোটেও রক্তচাপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। চোখের ভেতরে পানির মতো একধরনের তরল পদার্থ আছে, যা চোখের নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি বজায় রাখে এবং পুষ্টির জোগান দেয়। এই তরল চোখের ভেতরেই নির্দিষ্ট হারে তৈরি হয় এবং নির্দিষ্ট পথ দিয়ে বের হয়ে এসে চাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। কোনো কারণে তরলটি যদি ঠিকমতো বের হতে না পারে কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত তৈরি হয়, তখন চোখের চাপ বেড়ে যায়। এই অবস্থার নামই গ্লুকোমা। বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের অন্ধত্বের কারণ গ্লুকোমা। তবে সচেতনতা আর নিয়মিত চিকিৎসায় এই অন্ধত্ব রোধ করা যায়।

যে কারণে চোখের চাপ ক্ষতিকর

আমাদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু অপটিক নার্ভ চোখের অতিরিক্ত চাপের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চাপে অপটিক নার্ভের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে রোগী অন্ধ হয়ে যায়। তাই বলে গ্লুকোমা হলেই যে চোখ অন্ধ হয়ে যাবে কিংবা এর কোনো চিকিৎসা নেই, এমন ধারণাও সত্য নয়। তবে চিকিৎসা শুরুর আগে দৃষ্টির যে ক্ষতি হয়ে যায়, তা পূরণ করা সম্ভব নয়। চিকিৎসার মাধ্যমে যতটুকু দৃষ্টিশক্তি অবশিষ্ট থাকে, তা টিকিয়ে রাখা যায়। কাজেই গ্লুকোমা হলে দুশ্চিন্তা না করে সময়মতো চিকিৎসা নিন।

চিকিৎসা

গ্লুকোমা যে কারও হতে পারে। তবে চল্লিশোর্ধ্ব, যাঁদের ডায়াবেটিস, মাইনাস পাওয়ার, অথবা যাঁর মা-বাবা গ্লুকোমার রোগী, তাঁদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বছরে দু-তিনবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করুন। চোখ পরীক্ষা মানে কেবল চশমার পাওয়ার দেখা নয়, বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে চোখের ভেতরকার চাপও মাপা হয়। যদি এতে সমস্যা পাওয়া যায়, তাহলে আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। চোখের চাপ স্বাভাবিক রাখতে চোখের ড্রপ বা খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করতে হতে পারে। দরকার হলে তরল বহির্গমনের অবরুদ্ধ পথ খুলে দিতে অস্ত্রোপচারও করা লাগতে পারে। নিয়মিত চেকআপ আর যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে চোখের চাপ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব, অন্ধত্ব থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, গ্লুকোমা বিভাগ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল