ক্লান্তি দূর করে যেসব খাবার

আলসেমির রয়েছে নানা কারণ। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই কমবেশি ক্লান্তিজনিত আলস্যের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের অলসতা, ক্লান্তি বা অবসাদের জন্য খাদ্যাভাসকেই দায়ী
আলসেমির রয়েছে নানা কারণ। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই কমবেশি ক্লান্তিজনিত আলস্যের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের অলসতা, ক্লান্তি বা অবসাদের জন্য খাদ্যাভাসকেই দায়ী

আলসেমির রয়েছে নানা কারণ। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই কমবেশি ক্লান্তিজনিত আলস্যের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের অলসতা, ক্লান্তি বা অবসাদের জন্য খাদ্যাভাসকেই দায়ী করেছেন একদল মার্কিন গবেষক।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের পুষ্টি গবেষক সিন্ডি মুরের মতে, ‘খাবার আসলে আমাদের শরীরে জ্বালানির ভূমিকা পালন করে। এই জ্বালানি হিসেবে যা আমরা বাছাই করি, তা-ই আমাদের শরীরের কর্মদক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে।
শরীরের ক্লান্তি নিয়ন্ত্রণের উপযোগী কিছু খাবার এবং সঠিক সময়ে সেগুলো গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন—
সকালে নাশতা আবশ্যিক: দিনের শুরুতে বেশির ভাগ মানুষই তাড়াতাড়ি কাজে চলে যান। এ সময় তাঁরা শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্যের কথাও ভাবার অবকাশ পান না। এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং আলসেমি তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যবিজ্ঞান এবং পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক মেরি ইলেন ক্যামিরি বলেন, নাশতা না করলে সকাল পেরোলেই মানুষের শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয়। সকালের নিয়মিত নাশতায় মানুষের সতর্কতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এটি দিনের বেলায় ভারী খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখে এবং স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। নাশতায় রুটি, ডিম, দই, পনির ও পিঠার মতো শর্করা ও আমিষসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে। আর যারা সকালে খুব ব্যস্ত থাকেন, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে যেতে যেতে ডিম, স্যান্ডউইচসহ ঘরে তৈরি খাবার খেতে পারেন। নাশতায় চিনি এবং চর্বিজাতীয় উপাদানও থাকতে হবে।
যৌগিক শর্করা: শরীরের শক্তি জোগায় মূলত শর্করা। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সরল শর্করার পাশাপাশি যেন যৌগিক শর্করার উপাদানও খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। ভাত, আটার রুটি ও ময়দার তৈরি সরল শর্করাজাতীয় খাবার শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। এসব খাবারে খুব অল্প পরিমাণ আঁশ থাকে। তাই যেসব জাতীয় খাবার পরিপাক হতে অধিক সময় লাগে, সে রকম অধিক আঁশযুক্ত খাবারও (যেমন: আলু, কুমড়া ও গাজর) খেতে হবে। এ ধরনের খাবার শরীরে অধিক সময় ধরে শক্তি ধরে রাখে।
চর্বিজাতীয় খাবার: শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের জন্য চর্বিজাতীয় খাবার গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ ধরনের খাবার বেশি গ্রহণের ফলে হৃদ্রোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ হতে পারে। মাংস, মাখন, দুধের সর, পোড়া রুটি, ভাজা খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের চর্বিজাতীয় খাদ্য এসব রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অপরদিকে আরও কিছু চর্বিজাতীয় খাবার যেমন, জলপাইয়ের তেল, বাদাম, সবজির তেল, সামুদ্রিক খাবার, বিভিন্ন ধরনের বীজ এই ধরনের মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
আমিষ বা প্রোটিন উপাদান: চর্বি এবং শর্করাজাতীয় খাবার শরীরে শক্তি জোগায় আর আমিষ সেগুলোকে কার্যকারিতা দেয়। কোষ গঠন, শরীর বৃদ্ধিতে সহায়তা, ভিটামিন ও হরমোন পরিবহন, মাংশপেশি গঠনসহ বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কাজে আমিষ সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শর্করা ও চর্বির অনুপস্থিতিতে আমিষই শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দিয়ে থাকে। সাধারণত মাছ, মাংস, ডিম, শিম ও বাদামজাতীয় খাবারে আমিষ বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
পানি: আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই পানি। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে খাদ্য উপাদান পরিবহন করে। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ভারসাম্যহীনতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। তাই সুস্থতার জন্য পানি একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আমাদের শরীরের যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন, দৈনন্দিন খাবার থেকে তার মাত্র শতকরা ২০ ভাগ পূরণ হয়। আর গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি পান করা উচিত।
চা বা কফি: শরীরকে চাঙা করতে ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় (যেমন: চা বা কফি) বিশেষ সহায়ক। এটি হৃৎযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ায় এবং শরীরকে উদ্দীপ্ত রাখে। তবে দিনের শেষের দিকে চা বা কফি বেশি পান করলে রাত্রে নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। সূত্র: ওয়েবমেড।