শাড়ি, চুড়ি, গয়না আরও কত বায়না...

কয়েক লহরের মালাও এবার চলছে
কয়েক লহরের মালাও এবার চলছে

ঈদের নতুন জামা-জুতার পর চাই নতুন গয়নাও। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না কেনার অপেক্ষায় আছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য রইল হাল ফ্যাশনের গয়নার খোঁজখবর। এবারের গয়নার ফ্যাশনটা আদি আর আধুনিকের মিলন যেন। গয়নায় সোনালি আর রুপালির সঙ্গে রঙিন আভা ছড়িয়েছে লাল-নীল-সবুজ পাথরেরা। রুবি, পান্না, প্রবাল, মুক্তার অভিজাত উপস্থিতি এবার নজরকাড়া। পিতল আর তামার ব্যবহারে করা নকশায় রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। রঙিন সুতা আর কাপড়ে মোড়া গয়নাও এবার বেশ চলছে। তবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে নানা রঙের বিডস বা পুঁতির গয়না। বিবিয়ানার ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘গয়নায় এবার ফুটে উঠেছে দেশি আমেজ। কাঠ, বেত, পুঁতি, পালক, কড়ি, সুতা, মাটির তৈরি গয়নাও পছন্দ করছেন অনেকে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কেউ কেউ আবার পছন্দ করছেন নানা ধরনের কাপড় ও ধাতুর তৈরি গয়না।’ অ্যারাবিয়ানসের ব্যবস্থাপক সনৎ হাজরা বলেন, ‘সোনার বিকল্প হিসেবে ঈদে চলছে সোনার প্রলেপ দেওয়া বা গোল্ড প্লেটেড গয়না। রুপা ও পিতলের গয়নাগুলোতে শোভা পাচ্ছে সোনালি প্রলেপ। এর সঙ্গে করা হয়েছে রুবি, পান্না, কুন্দন ও মুক্তার ব্যবহার। দেশি নকশার গয়নার পাশাপাশি ভিনদেশের নকশার গয়নাগুলোও এবারের ফ্যাশন ট্রেন্ড।’নগরের গয়নার বাজার এখন বেশ জমে উঠেছে। বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউসে ঈদ পোশাকের পাশাপাশি বাহারি গয়নার সংগ্রহও রয়েছে। আড়ং, যাত্রা, রঙ, অঞ্জন’স, বিবিয়ানা, মাদুলী, প্রবর্তনা, মায়াসির ও দেশালে পাবেন দেশীয় উপাদানে তৈরি বৈচিত্র্যময় নকশার নান্দনিক গয়না।

আড়ংয়ের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনিম হোসেন বলেন, ‘সোনা, রুপা ও ফ্যাশনেবল গয়না—এ তিন ধরনের সংগ্রহ রয়েছে আড়ংয়ে। গয়নায় ময়ূর, ফুলেল, জ্যামিতিক বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় আকৃতির দেখাও পাবেন। এবারের গয়নায় গুরুত্ব পেয়েছে রঙিন পুঁতি ও বড় আকৃতির পাথর।’

আড়ংয়ে পাবেন সোনার দুল, আংটি, নেকলেস, লকেট সেট, নাকফুল। দেশি মোটিফের রুপার দুল, লকেট, বাজু, পায়েল, কানের দুল ও গলার লকেট সেট, আংটি ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়। সোনার প্রলেপ দেওয়া রুপার গয়না পাবেন এক হাজার ৫০০ থেকে সাত হাজার টাকায়। মুক্তা ও রুপার হালকা গয়না পাবেন ২০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। ফ্যাশনেবল সুতা, পুঁতি ও ধাতুর তৈরি রঙিন গয়না পাবেন ৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়।

অ্যারাবিয়ানসে পাবেন সোনার প্রলেপ দেওয়া গয়না। এ ছাড়া পাবেন বাহারি নকশার নেপালি গয়না। কানের দুল, ব্রেসলেট ও গলার মালা পাবেন ছয় হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায়। এগুলোর গ্রামপ্রতি দাম পড়বে ৯৫ টাকা। রুবি, পান্না, প্রবাল ও কুন্দনের সারির দাম পড়বে দুই হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। মুক্তার লহরের দাম পড়বে এক হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা। অ্যারাবিয়ানসের গয়না পাওয়া যাবে সীমান্ত স্কয়ার, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, মেট্রো শপিং মলসহ অ্যারাবিয়ানসের সব শোরুমে।

গলায় ভারী গয়না পরলে হাতে বা কানে কিছু না পরাই ভালো
গলায় ভারী গয়না পরলে হাতে বা কানে কিছু না পরাই ভালো

বিবিয়ানায় পাবেন রঙিন সুতা ও ধাতুর তৈরি গলার মালা, কানের দুল, হাতের বালা, চুড়ি ও খোঁপার কাঁটা। দাম পড়বে ১০০ থেকে এক হাজার টাকা। রঙে পাবেন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কাঠ, মাটি ও পুঁতির গয়না। রঙিন মালার দাম পড়বে ৪৯০ থেকে ৮৯০ টাকা। বিভিন্ন ধাতুর তৈরি কানপাশা, ঝুমকা, খোঁপার কাঁটা ও বালা পাবেন ১২০ থেকে ৬০০ টাকায়। ধাতব গয়নার সেট পাবেন ৮৭০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। রঙিন সুতা ও কাপড়ের মালা পাবেন ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়। সুতার বালা পাবেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। কাছাকাছি দামে দেশালে পাবেন পিতলের কানের দুল, বাজু, বালা, পায়েল, গলার নেকলেস। এখানে পাবেন পুঁতির গয়নার সেটও। অঞ্জনসে পাবেন রুপা ও ধাতুর হাতে তৈরি চুড়ি, নেকলেস, কানের দুল, পায়েল, ব্রেসলেট ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়। কাঠ ও চামড়ার তৈরি গয়না ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। জামদানিসহ বিভিন্ন মোটিফের গয়না পাবেন ১৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। নারকেলের মালা, মাটি, পিতল, পালকের তৈরি দেশি ধাঁচের আরও গয়না পাবেন শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। গয়না কিনতে চলে আসতে পারেন চাঁদনি চক ও গাউসিয়া সুপার মার্কেটেও। এখানে পাবেন রঙিন পুঁতির মালা ৮০ থেকে ২২০ টাকায়, ধাতুর তৈরি নানা রকম গয়না, পাথর বসানো কানের দুল ২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, গলা ও কানের সেট ১২০ থেকে ৭৫০ টাকায়, চুড়ি ও বালা পাবেন ৩০ থেকে ৪৫০ টাকায়। সোনার প্রলেপ দেওয়া ও রুপার তৈরি গয়নাও পাবেন এখানে।

আপনার ঈদের সাজটি হতে পারে গয়নার সঙ্গে মিলিয়ে পোশাকের, আবার পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়নারও। রইল রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খানের কিছু পরামর্শ।

l রুপা ও মুক্তার গয়নার সঙ্গে হবে স্নিগ্ধ সাজ। এটি হতে পারে ঈদের দিনের সকালের সাজ। হালকা সবুজ, গোলাপি, আকাশি রঙের পোশাকের সঙ্গে এসব গয়না ভালো মানিয়ে যায়। এর সঙ্গে চুলটা সামনে হালকা ফুলিয়ে একপাশে ছেড়ে দিতে পারেন। পরতে পারেন তাঁতের শাড়ি ও সুতির পোশাক। এর সঙ্গে ঠোঁটে ন্যাচারাল লিপস্টিকেই আপনি সম্পূর্ণ।

l সোনার গয়না বা সোনালি রঙের যেকোনো গয়নার সঙ্গে সাজ ও পোশাক হবে জমকালো। শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে এখানে মেকআপটা হবে ভারী। চোখের সাজে থাকতে পারে কপার, ব্রোঞ্জ ও কালো আইশ্যাডোর স্মোকি ভাব। আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। ঈদের দিন রাতে মানিয়ে যাবে জমকালো এ গয়নার সাজ।

l কাঠ, পালক ও রঙিন পুঁতির মালার সঙ্গে সাজটা হবে দেশি ধাঁচে। চোখে মোটা করে কাজল টেনে বাদামি শ্যাডোতে মিশিয়ে নিতে পারেন। কানের দুলটা এর সঙ্গে সাদামাটা ও ছোট হলে ভালো হয়। চুলটা পনিটেইল করে বেঁধে নিতে পারেন উঁচু করে। সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া-জিনসের সঙ্গে মানিয়ে যাবে এ সাজ।

l শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া—সবকিছুর সঙ্গেই পরতে পারেন চুড়ি ও বালা। যাঁদের পছন্দ তাঁরা ব্রেসলেটও পরতে পারেন। কানের দুলের মধ্যে ঝুমকা জোড়া মানায় কেবল শাড়ির সঙ্গেই। ঝুমকার সঙ্গে চুলের সাজে খোঁপা করতে পারেন। এর মধ্যে গুঁজে দিতে পারেন খোঁপার ধাতব কাঁটাও। লম্বা দুলের সঙ্গে চুলটা ব্লো ডাই করে ছেড়ে দিতে পারেন অথবা উঁচু করে খোঁপা করতে পারেন।

l পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকের সঙ্গে গলায় পুঁতির লহরি মালা পরতে পারেন। হাতে থাকতে পারে একটা রঙিন বালা। এক পায়ে পরতে পারেন রং মিলিয়ে পায়েলও।

l গয়না ও পোশাকের ক্ষেত্রে রঙের বৈপরীত্যে (কনট্রাস্ট) প্রাধান্য দিন। জমকালো পোশাকের সঙ্গে হালকা গয়না আর জমকালো গয়নার সঙ্গে সাদামাটা নকশার পোশাক বেছে নিন। গলার ভারী মালা বা নেকলেসের সঙ্গে দুলটা হবে ছোটখাটো। আর বড় দুলের সঙ্গে গলায় কিছু না পরাই ভালো।