বাবা-ছেলে দুজনেই গিটার বাজাতে ভালোবাসেন

ছেলে রৌদ্র সাকিব করিমের সঙ্গে বাবা এনামুল করিম নির্ঝর। ছবি: অধুনা
ছেলে রৌদ্র সাকিব করিমের সঙ্গে বাবা এনামুল করিম নির্ঝর। ছবি: অধুনা
এনামুল করিম নির্ঝর আর ছেলে রৌদ্র সাকিব করিম। বাবা স্থপতি, চলচ্চিত্রকার, আলোকচিত্রী, গীতিকার, সুরকার ও লেখক। আর ছেলে পড়াশোনা করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে।

১. বাবা ও ছেলের জন্য গান

এনামুল করিম: ছেলের জন্য একটা গান করেছিলাম বছর আটেক আগে।
‘বড় কিংবা দিওনা মাঝারি ঝাড়ি
চেনা বাড়িটা লাগছে অচেনা বাড়ি।’
রৌদ্র: আহা! ছবির জন্য বাবা একটা গান তৈরি করেছিলেন, ‘দূর ইশারায়’। আমার গান লেখার চর্চা নেই। বাবার জন্য এই গানটির কথা বলতে চাই।

২. বাবা ও ছেলের করা প্রিয় কাজ
এনামুল করিম: রৌদ্রের নয় বছর বয়সে শিল্পাঙ্গনে ওর তোলা আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছিল। ২০০৪ সালে। শিরোনাম ‘আমার ক্যামেরা বন্ধু’। ছবি বিক্রির টাকা দেওয়া হয়েছিল বন্যার্ত শিশুদের বই কেনার জন্য। ওর লেখাটা ভালো। ও খুব ভালো গিটার বাজায়।
রৌদ্র: বাবা আগে খুব ছবি আঁকতেন। বাবার আঁকা খুব ভালো লাগে।

৩. পরস্পরের কাজের কোন দিকটা ভালো লাগে?
এনামুল করিম: রৌদ্র ডিজিটাল আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করবে। অনেক আগে থেকেই খেয়াল করছি, ওর আঁকার হাতটা বেশ। খুব সহজেই সবকিছু আয়ত্ত করতে পারে।
রৌদ্র: স্থপতি হিসেবে বাবা যে কাজগুলো করেছেন, সেগুলো দূর থেকে দেখলেই বোঝা যায়। বাবার নিজস্ব স্টাইল আছে।

৪. প্রিয় মুহূর্ত
এনামুল করিম: শুক্রবার রৌদ্র যখন আমার কাছে আসে, ওই মুহূর্তগুলো অন্য রকম মনে হয়। ওই সময়টা দারুণ উপভোগ করি।
রৌদ্র: স্কুলে আমার তেমন কোনো বন্ধু ছিল না। একদম শেষ দিকে কয়েকজনের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়। স্কুল থেকে আমাদের একবার সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শ্রীমঙ্গলে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়ানোর সেই মুহূর্তগুলো কখনোই ভুলব না।

৫. প্রিয় বাদ্যযন্ত্র
এনামুল করিম: আমার খুব পছন্দ গিটার।
রৌদ্র: গিটার।

৬. প্রিয় চলচ্চিত্র
এনামুল করিম: যে ছবিতে সত্যটা থাকে।
রৌদ্র: আমি কিন্তু অনেক সিনেমা দেখেছি। আলাদা করে একটা ছবির কথা বলা ঠিক হবে না।

৭. চলচ্চিত্রের প্রিয় দৃশ্য
এনামুল করিম: আমি অনেক ছবি দেখেছি। তবে সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ছবির একটা দৃশ্য ভুলতে পারি না। অপু গোসল করে এসেছে, দুর্গা তার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে আর মা পাশে হাসছেন। এমন বাস্তব দৃশ্য চলচ্চিত্রে খুব একটা পাইনি।
রৌদ্র: এখন মাথায় আসছে না।

৮. উপদেশ কিংবা পরামর্শ
এনামুল করিম: রৌদ্রকে বলছি, মানবিক থেকো, মানুষ হিসেবে টিকে থেকো।
রৌদ্র: বাবা অনেক কাজ করতে চায়। কোনোটাই বাদ দিতে চায় না। বাবা প্লিজ, তুমি এত চাপ নিয়ো না।

৯. যে কথাটি এখনো বলা হয়নি
এনামুল করিম: আমার এমন কোনো কথা নেই, যা রৌদ্রকে বলা হয়নি।
রৌদ্র: আমি যা বলতে চাই, মুখে না বললেও বাবা তা সহজেই বুঝতে পারেন।

১০. নিজের তোলা প্রিয় আলোকচিত্র
এনামুল করিম: আমি তখন মাত্র ছবি তোলার চর্চা করছি। একদিন রাস্তার ধারে আলোকচিত্রী হাসান সাইফুদ্দিন ভাইয়ের একটা ছবি তুললাম। পরে ছবিটার জন্য পুরস্কারও পেয়েছিলাম।
রৌদ্র: অনেক বছর আগে, বাবার সঙ্গে ধানমন্ডি লেকের ধারে হাঁটছি। লেকের ধারে ঘাসের ওপর দেখি একটা সবুজ শাড়ি আর একটা লাল শাড়ি ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। হয়তো কেউ ধুয়ে ওখানে শুকাতে দিয়েছেন। আমি তা ক্যামেরায় বন্দী করি। পরে ছবিটি ‘আমার ক্যামেরা বন্ধু’ প্রদর্শনীতে রেখেছিলাম। বিক্রিও হয়েছিল।

১১. প্রিয় বন্ধু
এনামুল করিম: আমি নিজেই।
রৌদ্র: প্রাপ্তি।

১২. যখন খুব রাগ হয়
এনামুল করিম: যার ওপর রাগ হয়, তাকে খুব বকা দিই। কিন্তু একটু পরেই তাকে আবার কাছে টেনে নিই। আমার রাগ পারদের মতো ওঠানামা করে। বেশিক্ষণ পুষে রাখি না।
রৌদ্র: চুপ করে বসে থাকি। পরে রাগ কমাতে জোরে জোরে নিশ্বাস নিই।

১৩. এখন পড়ছি
এনামুল করিম: রমেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্যের হিতোপদেশ। সেই বই বেশি ভালো লাগে, যা আমাকে বাঁচার শক্তি দেয়।
রৌদ্র: বই নিয়ে ইদানীং তেমন বসা হচ্ছে না। একাডেমিক পড়াশোনার চাপ এখন একটু বেশি।

১৪. যে কাজটি করতে চাই না
এনামুল করিম: আপস।
রৌদ্র: জেনেশুনে কারও ক্ষতি করব না।

১৫. বাবা ও ছেলের যে দিকটি মুগ্ধ করে
এনামুল করিম: রৌদ্রের নিজের প্রতি দায়িত্ববোধ দেখে মুগ্ধ হই।
রৌদ্র: বাবার সৃজনশীল ক্ষমতা অসাধারণ। তিনি কখনো হার মানেন না।