শিশুসুলভ কৌতূহল যে কারণে জরুরি

লেবু কেন টক? আকাশ কেন নীল? এমন হাজারো প্রশ্ন খেলা করে শিশুর মাথায়। বড়দের মধ্যে কেউ কেউ এসব প্রশ্নের উত্তর দেন। কেউ কেউ আবার ‘উফ্, এত প্রশ্ন করো কেন’ বলে দমিয়ে রাখেন ছোটদের। আপনি যদি দ্বিতীয় দলের সদস্য হন, তাহলে বলতেই হচ্ছে, ভুল করছেন!

শিশুদের কৌতূহল মেটান, ভবিষ্যতে সে নতুন এক পৃথিবী উপহার দেবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রশ্নের উত্তর না পেলে শিশুদের কৌতূহলী মনটা মরে যায়! খেয়াল করলে দেখবেন, শৈশব পেরোতে না পেরোতেই মানুষ ছেলেবেলার মতো ততটা কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে পৃথিবীটা দেখে না। আর কে না জানে, কৌতূহল নেই তো নতুন কিছু নেই। তাই শিশুদের মতো কৌতূহল থাকা জরুরি বড়দের বেলায়ও। জেনে নিন এর সুফলগুলো।

.
.

১. কৌতূহল স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ২০১৪ সালে একটি গবেষণা হয়েছিল, যার বিষয় ছিল কৌতূহল ও স্মৃতিশক্তির সম্পর্ক। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, কৌতূহল মস্তিষ্কের কর্মতৎপরতায় পরিবর্তন আনে। কৌতূহল নতুন কোনো তথ্য মনে রাখার কাজটি অনেক সহজ করে দেয়। অর্থাৎ কোনো কিছু কষ্ট করে মুখস্থ করা বা মনে রাখার চেয়ে বিষয়টি নিয়ে কৌতূহলী হলে তথ্যটা মনে গেঁথে যায়।

.
.

২. বিজ্ঞানী ও শিশুদের মধ্যে একটা বড় মিল রয়েছে। মিলটা হলো, নতুন তথ্য খোঁজার আগ্রহ। দুনিয়া সম্পর্কে এই কৌতূহল তাঁরা মেটান নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। একবার সফল না হলে বারবার চেষ্টা করেন। তাই গবেষকেরা বলেন, গবেষণাগার কিংবা খেলার মাঠ, যেখানেই হোক না কেন, কৌতূহল ছাড়া ‘ইউরেকা’ বলার মতো মুহূর্ত তৈরি হয়নি কখনোই।

.
.

৩. কৌতূহল মানেই আনন্দ। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখে, তারা দারুণ ইতিবাচক। তারা মানসিকভাবে এগিয়ে থাকে বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এই মানুষগুলো সুখী না হলে আর কে হবে?

.
.

৪. কর্মক্ষেত্রেও কৌতূহল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষকেরা দেখেছেন, কর্মক্ষেত্রে তারাই তুষ্ট থাকে, যাদের জানার আগ্রহ বেশি। এর ফলে কর্মক্ষেত্রেও দারুণ সফল হয় এ ধরনের লোকজন।

.
.

৫. পাঁচ বছর ধরে একটা গবেষণা চালানো হয়েছিল। এতে অংশ নিয়েছিলেন দুই হাজার প্রবীণ নারী-পুরুষ। বিষয় ছিল কৌতূহল ও আয়ু। সেখানে দেখা গেছে, কৌতূহলী মানুষ বেশি দিন বাঁচে। গবেষকেরা বলছেন বলেই মেনে নিতে হবে, এমনটা তো নয়। প্রাচীন আমলের কথা মনে করুন না। সে সময় যে মানুষটা কৌতূহলী হয়ে গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ দিয়ে ওষুধ বানাতেন, তাঁর জীবনটা নিশ্চয়ই অন্যদের তুলনায় আরামদায়ক ছিল এবং এটাও নিশ্চয়ই মানবেন, তাঁরা কৌতূহলী ছিলেন বলেই আগুন আবিষ্কার করেছিলেন, পথে নামিয়েছিলেন চাকা আর ঘরে লালনপালন করতে শুরু করেছিলেন বুনো প্রাণী! তাঁরা যদি কৌতূহলী না হতেন, আমরা কি এখন ইন্টারনেটে এই লেখাটা পড়তে পারতাম? ভেবে দেখুন না!

সূত্র : মেন্টাল ফ্লস