ধন্যবাদ, উপস্থাপক

এবারের উপস্থাপক—চঞ্চল চৌধুরী, ফেরদৌস ও নুসরাত ফারিয়া
এবারের উপস্থাপক—চঞ্চল চৌধুরী, ফেরদৌস ও নুসরাত ফারিয়া

প্রতিবারই মেরিল–প্রথম আলোর অনুষ্ঠান নিয়ে ভাবনা শুরু হলেই যে বিষয়টা জটিল আকার ধারণ করে সেটা হলো, এই মহাযজ্ঞের কান্ডারি কে হবেন? এই অনুষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত কে টেনে নিয়ে যেতে পারবেন, সেই অঙ্ক মেলাতে গিয়ে সবাই হিমশিম খেতে থাকি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা একাধিক বৈঠক করি। পরিকল্পনায় যুক্ত হন সহকর্মীরা। অনেকের নামই প্রস্তাব করেন তাঁরা। সাহস পাই না। কিন্তু কাউকে তো নিতে হবে। ভাবনার কূল পাই তো কিনার পাই না।

অনুষ্ঠানের একাংশের উপস্থাপক জয়া
অনুষ্ঠানের একাংশের উপস্থাপক জয়া

সবার দেওয়া নামের তালিকা থেকে শুরু উপস্থাপক অন্বেষণ। কিন্তু ব্যাটে–বলে মেলে না। এদিকে অনুষ্ঠান প্রায় দোরগোড়ায়। আমরা অনুষ্ঠানের কাঠামো পাল্টাই। কয়েকটি ভাগে ভাগ করি। আজীবন সম্মাননা আর আগামীর নির্মাতা, সমালোচক পুরস্কার (টিভি), সমালোচক পুরস্কার (চলচ্চিত্র) ও পাঠক জরিপ পুরস্কার। প্রতি পর্বেই উপস্থাপকের পরিবর্তন হবে। কিন্তু কে কে থাকবেন?

আসে জয়া আহসানের নাম। আমরা তাঁর সঙ্গে প্রথম কথা বলি। জয়া বলে দেন, ‘এটা আমার কাজ না। আমাকে দিয়ে এটা হবে না।’ তাঁর ইচ্ছার জল হয়ে যায় কঠিন বরফ। আমরাও নাছোড়বান্দা। বলি, আজীবন সম্মাননার অংশটুকু করে দিন, আপনার সঙ্গে থাকবেন আনিসুল হক। বরফ গলতে শুরু করে। প্রথম অংশটি করে দেওয়ার সম্মতি দেন জয়া। কিন্তু তারপরও বলেন, ‘আমাকে দিয়ে হবে?’

কিন্তু শঙ্কা তো থেকেই যায়। এর পর কে টেনে নেবেন? এর আগে তিনবার এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। ফোন দিই তাঁকে। চঞ্চল জানান, তিনি ঈদের নাটকের শুটিং নিয়ে মহাব্যস্ত। তবে ২৫ ও ২৬ এপ্রিল আমাদের জন্য ফাঁকা রেখেছেন। তাই সই। এরপর ফেরদৌস। তিনি তখন কলকাতা। দত্তা ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত। সব সময় এই মানুষটা ভীষণ আন্তরিক। তিনি সম্মতি দেন। ঢাকা ফিরেই বসতে চাইলেন। কিন্তু আরও একজন লাগে এবং অবশ্যই কোনো নারী তারকা। আবারও জটিলতা। একটা নাম মাথায় আসে। কিন্তু তিনি ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’–এর মধ্যে ঝুলিয়ে রাখেন। আমরাও ঝুলতে থাকি। সেখান থেকে আমাদের নামিয়ে আনেন নুসরাত ফারিয়া। কলকাতায় তিনি তখন বিবাহ অভিযান ছবির শুটিংয়ে। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত টানা শুটিং। ২৪ তারিখ রাত ৮টার বিমানে ঢাকা ফিরবেন বলে নিশ্চিত করেন ফারিয়া। তাঁর সঙ্গে রাত সাড়ে ১০টায় আমরা স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসব। কিন্তু ফ্লাইট বিলম্ব হওয়ার কারণে তিনি ঢাকা নামেন রাত ২টায়। ২৫ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয় এই ত্রয়ীকে নিয়ে স্ক্রিপ্ট মহড়া। রাত ১১টায় মঞ্চ মহড়ার সময় দিয়ে তিনজনই সন্ধ্যায় চলে যান বাড়ি। এর আগে আনিসুল হক বসেন জয়ার সঙ্গে। তাঁদের স্ক্রিপ্টের একটা জায়গায় সম্পাদক মতিউর রহমানেরও অংশগ্রহণ রয়েছে। তাই তিনজনকেই রাতে মঞ্চ মহড়ায় আসতে বলা হলো। জয়া তাঁর নতুন ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে ব্যস্ততা সরিয়ে চলে এলেন মহড়ায়। উপস্থিত আনিসুল হক। মতিউর রহমানও এলেন। তিনি স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী মঞ্চে ঢুকে বলবেন, ‘আমি তো রানুর সঙ্গে নয়, জয়া আহসানের সঙ্গে সেলফি তুলতে চেয়েছি’। তিনজনের মহড়া চলল।

রাত ১১টায় ফেরদৌস ও নুসরাত ফারিয়া এলেও চঞ্চলের দেখা নেই। ফোন করে জানা গেল, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নতুন দুর্ভাবনা শুরু হলো। যদিও চঞ্চল বলেছেন, তিনি অনুষ্ঠানের দিন বিকেল ৪টার মধ্যে চলে আসবেন। ফেরদৌস ও নুসরাত ফারিয়া মধ্যরাত পর্যন্ত মহড়া করে চলে গেলেন। আমাদের মাথায় তখন চিন্তা, চঞ্চল যদি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন কী হবে তখন?

২৬ এপ্রিল বিকেল ৪টার আগেই চঞ্চল এলেন, ফেরদৌসও চলে এলেন, স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে গেলেন দুজন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন নুসরাত ফারিয়া।

এরপর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মঞ্চ আলোকিত হয়। আনিসুল হক আসেন। তাঁর সঙ্গে জয়া আহসান। এরপর চঞ্চল চৌধুরী, নুসরাত ফারিয়া ও ফেরদৌস। তাঁদের চমৎকার রসায়ন মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৮ আয়োজনটিকে করে তুলেছিল আরও আলোকিত। ধন্যবাদ জয়া আহসান, ধন্যবাদ চঞ্চল চৌধুরী, ধন্যবাদ নুসরাত ফারিয়া, ধন্যবাদ ফেরদৌস।