তারায় তারায় খচিত

>

এশিয়া কাপের আকাশে অনেক তারা। কিন্তু সবাই কি আর সমান ঔজ্জ্বল্যে জ্বলবেন! কে ছড়াবেন বেশি আলো? উত্তর খুঁজেছেন মোসতাকিম হোসেন

বিরাট কো​হলি, লাসিথ মালিঙ্গা, তিলকরত্নে দিলশান, শোয়েব মালিক, সাকিব আল হাসান, রোহিত শর্মা, সাব্বির রহমান
বিরাট কো​হলি, লাসিথ মালিঙ্গা, তিলকরত্নে দিলশান, শোয়েব মালিক, সাকিব আল হাসান, রোহিত শর্মা, সাব্বির রহমান

সময় কত সহজেই সবকিছু পাল্টে দেয়। দুই বছর আগের আসরের সঙ্গে এবারের এশিয়া কাপের কী দুস্তর ব্যবধান! সবচেয়ে বড় বদল তো ৫০ থেকে নেমে এবারের আসরটির বিশ ওভারের ক্রিকেট হয়ে যাওয়াতেই। সেবার যাঁরা মঞ্চ কাঁপিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এবার দর্শক। লাথিরু থিরিমান্নে, আহমেদ শেহজাদরা দলে সুযোগই পাননি। আর কুমার সাঙ্গাকারাদের মতো কেউ কেউ জাতীয় দলের জার্সিটাই উঠিয়ে রেখেছেন।
তারপরও ২২ গজে ভরসা সেই পরীক্ষিতরাই। ভারতের হয়ে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ানরা এখনো হয়ে আছেন নির্ভরতার প্রতীক। তাঁদের সাম্প্রতিক ফর্মও সেই কথাই বলছে। টি-টোয়েন্টিতে গত এক বছরে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান এই তিনজনেরই। এর মধ্যে রোহিতের রান সবচেয়ে বেশি, ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে গত পাঁচ বছরে একমাত্র সেঞ্চুরির কীর্তিটাও করেছেন গত অক্টোবরে।
বাংলাদেশে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সুখস্মৃতি আছে রোহিতের। সেবার টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ ২০০ রান ছিল তাঁরই। ওই বিশ্বকাপটা কোহলির স্মৃতিতেই বেশি সজীব থাকার কথা। ৩১৯ রান, টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হয়েছিলেন।
পাকিস্তানের হয়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে এখন যিনি মূল ভরসা, তিনি তো মাঝের দুই বছর একরকম অতলান্তেই হারিয়ে গিয়েছিলেন। শোয়েব মালিকের ব্যাটে এখন আবার সেই পুরোনো নির্ভরতার ছায়া। উমর আকমলের ব্যাটও গত কিছুদিনে বেশ চওড়া হয়ে উঠেছে। সদ্যসমাপ্ত পাকিস্তান সুপার লিগে লাহোর কালান্দারসের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান ছিল ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানেরই। আর সবার ওপর ছায়া হয়ে শহীদ আফ্রিদি তো আছেনই।
টেস্ট-ওয়ানডেকে বিদায় বলে দিলেও আফ্রিদি টি-টোয়েন্টিতে এখনো সপ্রাণ। কদিন আগেই পিএসএলে পেশোয়ার জালমির হয়ে এক ম্যাচেই নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। আফ্রিদির পাশাপাশি পাকিস্তানের বোলিংয়ে মূল ভরসা হয়ে থাকবেন ওয়াহাব রিয়াজ ও সোহেল তানভীর। পাকিস্তানের হয়ে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট (১১টি) এই দুজনেরই। ঢাকাতেও নিশ্চয় দুজন আলো ছড়াতে চাইবেন।
সংস্করণ বদলে গেলেও কাগজে-কলমে এশিয়ার সিংহাসনে এখনো শ্রীলঙ্কাই আছে। সেটা ধরে রাখার মিশনে লাসিথ মালিঙ্গার ফেরাটা বড় একটা অনুপ্রেরণাই দেবে চ্যাম্পিয়নদের। চোটের সঙ্গে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক অনেক দিন থেকেই লড়ছেন, গত নভেম্বরের পর আর মাঠেই নামেননি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট আছে শুধু তিনজনের। নিজের দিনে মালিঙ্গা কী করতে পারেন, সেটাও নতুন করে বলার কিছু নেই। আর তিলকরত্নে দিলশান তো এবার আছেনই। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসেও শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ভরসাদের একজন। গত এক বছরে শ্রীলঙ্কার হয়ে দুটি ফিফটি করতে পেরেছেন শুধু দিলশানই।
আর বাংলাদেশের হয়ে এবার কে রাঙাবেন? এমনিতে টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশ বরাবরই বিবর্ণ। কিন্তু এবার দেশের মাটিতে কি ভাগ্যটা বদলাবে? পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মূল কুশীলব হতে পারেন সাব্বির রহমান। টি-টোয়েন্টিতে গত এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সাব্বিরের রানই সবচেয়ে বেশি। গত বছর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চারটি ফিফটির দুটিই সাব্বিরের। আর বোলিংয়ে? টি-টোয়েন্টি দিয়েই বিশ্ব প্রথম চিনেছে মুস্তাফিজুর রহমানকে, এত দিন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেললেও এটি মুস্তাফিজের প্রথম টুর্নামেন্ট। মুস্তাফিজও নিশ্চয়ই আলো ছড়াতে চাইবেন।
তবে এই দুই তরুণ নয়; বাংলাদেশের বড় একটা ট্রফির অপেক্ষা ঘোচাতে পারেন অভিজ্ঞরাই। ইদানীং তো আরও বেশি করে প্রমাণ হয়েছে, টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতারই খেলা। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের দায়িত্ব বাড়ছে তামিম ইকবাল এই টুর্নামেন্টে থাকছেন না বলে।
কে জানে, এর বাইরে অলক্ষ্যে অন্য কেউ হয়তো পাদপ্রদীপে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন!